স্মার্ট কার্ড পাচ্ছেন না নতুন ১ কোটির বেশি ভোটার
তিন বছর আগে ভোটার হওয়া ব্যক্তিদের স্মার্ট কার্ড নয়, লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। সরঞ্জামির অভাবে সব ভোটারদের কাছে স্মার্ট কার্ড পৌঁছতে আরও দুই বছর সময় লাগতে পারে। এরপর নতুন ভোটারদের উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম রোববার জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছরের নভেম্বর থেকে ১ কোটি ১৮ লাখ নতুন ভোটারকে লেমিনেটিং কার্ড দেয়ার জন্য কর্ম পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইসির অনুমোদন পেলেই কার্ড বিতরণ শুরু হবে।
জানা যায়, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ১৮ লাখ। এ পর্যন্ত মাত্র ১ কোটির বেশি নাগরিক স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যেককে স্মার্ট কার্ড দেয়ার ঘোষণা দিলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। দরকারি সরঞ্জামের অভাবে থমকে আছে এই প্রকল্প। বিদেশি ঠিকাদারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এখন নিজেরাই স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে ইসির এনআইডি উইং। এজন্য ইসিকে কারিগরি সহযোগিতা দিতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, সবাইকে কার্ড দিতে আরও অন্তত দুই বছর লাগতে পারে। আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেয়ার জন্য তখন যে ১০০ জোড়া যন্ত্র নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, তার ৩৭ জোড়াই এখন অচল।
সূত্র জানায়, বর্তমানে আগে হওয়া ভোটারদের ৯ কোটি ভোটারের হাতে নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। বাকি ১ কোটি ১৮ লাখ ভোটারদের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেয়ার সময়সীমা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ও পাসপোর্ট করাসহ সরকারের বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তি এড়াতে আপাতত তাদেরকে লেমিনিটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
সূত্র জানায়. ২০১৪ সালের যারা ভোটার হয়েছেন তারা এখনও এনআইডি পায়নি। ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত নাগরিকদের জন্য ‘জাতীয় পরিচিতি বিবরণী’ চালু করে ইসি। এই সাময়িক জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভর্তিসহ প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় স্মার্ট কার্ড সরবরাহকারি ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবের্থার টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিজেরাই স্মার্ট কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। ফ্রান্সের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ৮১৬ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিবে। কিন্তু পারেনি তারা।
এজন্য চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে পেরেছে। এখনো ব্ল্যাঙ্ক (ফাঁকা) কার্ড আসেনি দুই কোটি ৩৬ লাখ চার হাজার। এ পর্যন্ত ৫১ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিল নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কমবেশি আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার তাদের পাওনা রয়েছে। এজন্য ইসি চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়। তাই বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র ছাপানো হবে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে একাধিক নমুনা কার্ডও ইসিকে সরবরাহ করেছে।
এইচএস/জেএইচ