ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ব্যর্থতা কিছুটা আছে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৭

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আগামী ২৪ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালনের দীর্ঘ সময়ে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির নানা বিষয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। দীর্ঘ আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট, আবাসিক সঙ্কট, শিক্ষার মান, শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি, ডাকসু, শিক্ষক নিয়োগসহ নানা প্রসঙ্গ গুরুত্ব পায়। সফলতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি। গুরুত্ব পায় শিক্ষকদের গ্রুপভিত্তিক নানা কর্মকাণ্ডের বিষয়ও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু ও মুনির হোসাইন। তিন পর্বের ধারাবাহিকের শেষটি আজ প্রকাশিত হলো।

জাগো নিউজ : অকার্যকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আপনিও। এখন কী বলবেন?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন আমি নিজেও চাই। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এ নির্বাচনের পক্ষে।
কিন্তু ছাত্র সংসদ অকার্যকর হওয়ার পেছনের কারণ জানতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। দু’জন শিক্ষার্থী খুন হওয়ার কারণে ওই নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। অনেক আগের কথা। ক্যাম্পাস অশান্ত বা শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করে তো এমন নির্বাচন হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা আমরা সবাই জানি। ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা ছিলেন এখানকার নিয়মিত ছাত্র। কোনো অছাত্র দিয়ে ডাকসু পরিচালিত হয়নি। সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে সতর্ক ছিল, দায়বদ্ধ ছিল। আর এখন সংগঠনগুলো পরিচালিত হয় অছাত্র আর বহিরাগত দিয়ে। এখন এমন নেতৃত্ব বা সংগঠন দিয়ে তো ডাকসু নির্বাচন হতে পারে না। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত না করে বা পরিবেশ তৈরি না করে ডাকসু নির্বাচন দেয়া সম্ভব না।

জাগো নিউজ : নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে না পারা কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা নয়?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা তো কিছুটা আছে। সেটা অস্বীকার করা যাবে না। এটার দায়-দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। কিন্তু এ ব্যর্থতার জন্য কারা, কোথায় এবং কেন দায়ী- এসব বিষয়েরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে। যদি ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়মিত ছাত্রদের হাতে আসে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ডাকসুকে সক্রিয় করার একটি প্রক্রিয়ায় পৌঁছাব। কিন্তু এটি করবেন কারা? করতে হবে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে।

জাগো নিউজ : রাজনৈতিক দলগুলো চাইলেই কি সমাধান হয়ে যাবে?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : আমি রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি মনে করি, রাজনৈতিক নেতৃবৃ্ন্দের সদিচ্ছা যদি থাকে, তারা যদি চান যে ছাত্র রাজনীতিকে স্বচ্ছ এবং নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে পরিচালিত করবেন, তাহলে সমাধান হবে।

siddik

আমাদের প্রধান কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা। এরপর অন্য হিসাব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত করে- এমন কার্যক্রম তো চলতে পারে না।

জাগো নিউজ : উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলো। কেন এই ঘটনা?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বিষয়টি দেখছে। তদন্তের পর সব জানা যাবে।

যেকোনো বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতেই পারেন। কিন্তু বহিরাগতদের নিয়ে আন্দোলন করলে সংগঠনগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেদিনও বহিরাগতরা এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। ওই বহিরাগতদের কারণেই শিক্ষকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

জাগো নিউজ : আন্দোলন তো শান্তিপ্রিয় ছিল?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : শিক্ষর্থীরা সিনেটের গেট ভাঙার চেষ্টা করেছিল। এ সময় শৃঙ্খলা আর নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিভৃত করার চেষ্টা করেছিলেন। হয়তো নিভৃত করার স্বার্থেই কাউকে ধরতে গিয়েছিলেন কোনো শিক্ষক। আমি যতটুকু জেনেছি, শিক্ষার্থীরাই শিক্ষকদের গায়ে আঘাত করেছে। এভাবেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

siddik

জাগো নিউজ : বহিরাগতদের কথা বললেন। অভিযোগ আছে, বহিরাগত এক শিক্ষকও ছিলেন?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : বহিরাগত কোনো শিক্ষকের নাম আমি শুনিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তারা এখন শিক্ষকতায় আছেন। তারা তো তাদের বন্ধু-বান্ধবদের কাছে আসতেই পারেন।

জাগো নিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও এখন তো তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আন্দোলন দমনের চেষ্টা কি তার অধিকারের মধ্যে পড়ে?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আসতে কোনো বাধা নেই। এটি উন্মুক্ত জায়গা।

জাগো নিউজ : আসতেই পারেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের চেষ্টা…

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নের উত্তর আমি দেই না।

জাগো নিউজ : কিন্তু বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : এটি বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন। বহিরাগত যারা আসছে তাদের তো আমরা বের করে দিতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত জায়গা। এখানে শিক্ষার্থীরা এসে প্রতিবাদ করছে। শিক্ষকরাও আসছেন। জগন্নাথ কেন রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আসেন; প্রতিনিয়ত তারা আসছেন।

ঘটনা যখন ঘটে, তখন তো কেউ এটা বুঝতে পারেনি যে, ঘটনাটি কী ছিল? প্রতিবাদী ছেলে-মেয়েদের উস্কে দেয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বহিরাগত ছেলেরাও ছিল। তারাও শিক্ষকদের চিনতে পারেনি। নইলে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

siddik

জাগো নিউজ : যেকোনো ইস্যুতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হচ্ছেন। সম্পর্কের জায়গাটি কি তলানিতে গিয়ে ঠেকলো?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময় মধুর। এরপরও কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যা দুঃখজনক।

সেদিনের পরিস্থিতি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়। যারা সাংবাদিকদের ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন, তারাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করতে তৎপর। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নষ্ট করতে চায় তারা।

জাগো নিউজ : সম্পর্ক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করে লাভ কী তাদের?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : তাদের নিজেদের স্বার্থ আছে। যে স্বার্থের জন্য তারা এখন বিরোধিতা করছেন।

জাগো নিউজ : এভাবে কি স্বার্থ উদ্ধার করা যায়?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : আমার মনে হয় না। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে মানুষ বেশি দূর এগোতে পারে না।

জাগো নিউজ : উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন উচ্চ আদালত স্থগিত করেছেন। এরপরও আপনি কতটুকু আশাবাদী?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : ২৪ আগস্ট মেয়াদ শেষ হবে আমার। এরপর কী হবে, তা বলতে পারছি না। আমি দায়িত্বে থাকি বা না থাকি বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে একজন দক্ষ প্রশাসক দরকার। আমি মনে করি দক্ষ প্রশাসকই আসবেন। এটি আমারও প্রত্যাশা।

জাগো নিউজ : প্রচার রয়েছে, আপনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন হওয়ায় অন্যরা নেতৃত্বে আসতে পারছেন না। অন্যের মতকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এর জবাবে কী বলবেন?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এটা আমার সহকর্মীরাই বলবেন, যারা আমার সঙ্গে কাজ করেন। উপাচার্যের একক কোনো ক্ষমতা নেই। সিদ্ধান্ত নিতে বিভিন্ন কমিটির উপর নির্ভর করতে হয়। কমিটির সিদ্ধান্তই উপাচার্যের সিদ্ধান্ত। সকলের মত গুরুত্ব পেলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারতো না।

জাগো নিউজ : জীবনে হতাশা আছে আপনার?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : না। আমি আশাবাদী মানুষ। আশা নিয়েই চলতে চাই। আশা নিয়ে বাঁচতে চাই। বিশেষ করে আমার ছাত্র-ছাত্রীদেরও আশাবাদী হতে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকি।

জাগো নিউজ : জীবনের শেষ বেলার ইচ্ছা কী?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : মানুষের মাঝে মিশে থাকা। দেশকে সেবা করা। বিশেষ করে দেশের মানুষের পাশে থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়াই জীবনের পাথেয়।

এএসএস/এমএইচ/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন