চালের দামের অস্বস্তিতেও নেই ওএমএস
কুলসুম যাত্রাবাড়ীর উত্তর রায়েরবাগ এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করেন। স্বামী কামাল সংসারের প্রতি উদাসীন, নেশাগ্রস্ত। কুলসুমের আয়েই দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার চলে। তার মাসিক আয় ছয় হাজার টাকা। কয়েক মাস আগেও এ আয়ে কোনো রকম সংসার চালিয়ে নিলেও এখন হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
জাগো নিউজকে কুলসুম বলেন, ‘চালের দামডাই সব খাইয়া দেয়। বাগানবাড়ি মসজিদের সামনে থাইকা ১৫ টাহা দরে চাউল (ওএমএস) কিনতাম। হেইয়াও কয়মাস ধইরা নাই।’
কয়েক মাস ধরে চালের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এভাবেই কষ্টে ফেলেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে। দাম বৃদ্ধির পর থেকে শুল্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি, সরকারিভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে চাল কেনাসহ সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। দরিদ্র মানুষের নাগালের মধ্যে আসছে না চালের দাম। বরং দাম কিছুটা কমে গিয়ে ফের বাড়তির দিকে।
বাজারে চালের দাম অসহনীয় পর্যায়ে গেলে নিম্ন আয়ের মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে ওএমএস’র খোলাবাজারে চাল বিক্রির মাধ্যমে চাল বিক্রি করে সরকার। কিন্তু সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ সংকট দেখা দেয়ায় গত জুলাই থেকে হাওরের তিন জেলা ছাড়া সারাদেশে সরকারের খোলা বাজারে চাল বিক্রিও (ওএমএস) বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীতে ওএমএস’র চাল বিক্রি বন্ধ হয়েছে আরও আগে। তাই এখন চালের দাম নিয়ে অস্বস্তি সব স্তরের মানুষের মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে খোলা বাজারে চাল বিক্রি চালু রাখা প্রয়োজন- খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাও এমনটি মনে করছেন। কিন্তু মজুদ সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকার ওএমএস কার্যক্রমও আগামী ১৫ আগস্ট শেষ হয়ে যাবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত শনিবারের (৬ আগস্ট) তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। কয়েক মাস আগেও যে দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
ওএমএস’র প্রতি কেজি চালের মূল্য নির্ধারিত আছে ১৫ টাকা। একজন একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারেন।
কাফরুলের পূর্ব শেওড়াপাড়ার ওএমএস দোকানদার মো. ইউনুস আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে ওএমএসের চালের প্রচুর চাহিদা। কিন্তু রোজার আগে থেকেই চাল বিক্রি বন্ধ। এখানে প্রতিদিন দুই টন চাল দুপুরের মধ্যেই বিক্রি করে ফেলতাম। চালের বাজারে ঊর্ধ্বগতি, প্রতিদিনই মানুষ ওএমএসের চালের বিষয়ে জানতে চায়।’
‘সরকার বন্ধ রাখছে, আমাদের তো কিছুই করার নেই’- যোগ করেন তিনি। খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক কাজী নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা ছাড়া সারা দেশে ওএমএসের চাল বিক্রি বন্ধ আছে। আগামী ১৫ আগস্ট থেকে ওই তিন জেলায়ও ওএমএস কার্যক্রম শেষ হবে।’
‘তবে ঢাকা মহানগর, শ্রমঘন এলাকা টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও সাভারে ওএমএসে আটা বিক্রি চলছে। কিছু স্থানে ওএমএসে চাল দিতে পারলে মানুষের সুবিধা হত’ বলেন তিনি।
মজুদ সংকটের কারণে ওএমএসের চাল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ আমাদের আছে। মজুদ বাড়লে আবার ওএমএস চালু করা হবে।’
খাদ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২ আগস্ট পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ ছিল তিন লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল দুই লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন এবং গম এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। যদিও গত বছর একই সময়ে মজুদের পরিমাণ ছিল আট লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) ২ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি খাতে ২০ হাজার টন চাল এবং বেসরকারি খাতে দুই লাখ আট হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে বলেও খাদ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে।
ওএমএস ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ বেশি বসবাস করা রাজধানীর এমন এলাকাগুলোতে ওএমএসের চালের চাহিদা বেশি। ওইসব এলাকায় ওএমএস চালু রাখা দরকার।
রাজধানীর জুরাইন বাজারের ওএমএস ডিলার মো. টুটুল বলেন, ‘ঢাকার এই দিকটায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একটু বেশি। এখানে ওএমএসের চালের চাহিদা সারা বছরই থাকে। চালের দাম বাড়ায় মানুষ কষ্টে আছে। এখন ১৫ টাকা দরে চাল দিতে পারলে মানুষের উপকার হত।’
কামরাঙ্গীচরের পশ্চিম রসুলপুরের ডিলার মো. জুয়েল বলেন, ‘বর্তমানে চালের দাম অনেক বেশি, গরিব মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এখন সরকার কম দামে চাল না দিলে আর কখন দেবে?’
আরএমএম/এমএআর/জেআইএম