ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

চালের দাম কমছে না

মামুন আব্দুল্লাহ | প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০১৭

কমছে না চালের দাম। এখনও নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরেই। যেন সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই। মাঝে চাল আমদানির তোড়জোড়ে দাম কিছুটা কমানো হয়েছিল। এখন বাজারে ৪৮ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। অথচ চাল আমদানি বাড়লে দাম ক্রমান্বয়ে কমে আসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু গত এক মাস থেকে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম গত কয়েক সপ্তাহ থেকে স্থিতিশীল। পাইকারি বাজারে কিছুটা দাম কমলেও খুচরা বাজারে প্রভাব নেই। বাজারে মোটা চালের কেজি এখনও ৪৮ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৭ টাকায়।

সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুসারে, গত এক মাসে বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। এখন মোট চাল ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে বাজার তালিকায় বলা হয়েছে। গত মাসে এর দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। তবে বাস্তবে বাজারে এখনও চালের দাম চড়া।

rice-price

টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশের বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪২.১৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের দাম বাড়তে বাড়তে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে মোটা চালের দাম না কমায় নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এ অবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে চালের দাম কমবে না বলে মনে করছেন তার।

এছাড়া বন্যা ও জলাবদ্ধতায় রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ায় চালের দামে সহসাই প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজধানীর ব্যবসায়ীরাও একই আশঙ্কা করছেন। তারা জানিয়েছেন, আমদানি করা চালের উচ্চমূল্যের প্রভাবেই দাম কমছে না। বরং ধানের দাম কিছুটা বাড়ায় চালের দাম ফের বাড়তে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন তাদের কেউ কেউ।

rice-price

চালের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দামটা বেশি বেড়েছে গত পাঁচ মাসে। প্রতি মাসেই সবধরনের চালে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা। পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম চার মাসের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে চালের দামের এমন ঊর্ধ্বগতি এর আগে ঘটেনি। চালকল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেয়ায় এমনিতেই বাজারে যখন এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, তখন হাওর অঞ্চলে ফসলহানির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা আরেক দফা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরপর আমদানির জোয়ারে পাইকারিতে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুল রাইস এজেন্সির ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক জানান, গত মাস থেকে চালের বাজার কিছুটা কম। এখন দাম না কমলেও বাজার বাড়ছে না।

তিনি জানান, ধানের দাম কিছুটা বাড়তি থাকায় গত ১৫ দিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম সামান্য বেড়েছে। এখন বেশিরভাগ চাল অটোমিলে প্রক্রিয়াজাত হওয়ায় বৃষ্টিতে সমস্যা হয় না। আগে এ সমস্যা ছিল, তখন টানা বৃষ্টি হলে চালের দামও বাড়ত।

রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০ কেজি মিনিকেট বস্তাপ্রতি ২৫০০ থেকে ২৬৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৬০০ থেকে ২৬৫০, অটোমিলে প্রক্রিয়াজাত আটাশ ২৩০০ থেকে ২৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা দেশি মোটা চাল সর্বনিম্ন ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারত থেকে আমদানি করা মোটা চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২১২৫ টাকা থেকে ২১৫০ টাকা।

rice-price

এদিকে ধানের দাম কিছুটা বাড়ায় গত ১৫-২০ দিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০-২৫ টাকা করে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কারওয়ানবাজারের জনতা রাইস এজেন্সির রাসেল। তিনি বলেন, মিলারদের কারণে চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিলাররা চালের দাম কিছুটা বাড়াচ্ছেন। ফলে আমাদেরও বাড়াতে হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, গত ২৫ জুলাই পর্যন্ত সরকারি গুদামে তিন লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। এর মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৬১ হাজার টন গম। এছাড়া বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে ৬৭ হাজার টন খাদ্যশস্য। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১ থেকে ২৫ জুলাই বেসরকারিভাবে ১ লাখ ১৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।

কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, আমদানির চাল বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় দেশি চালের দামও কমছে না। সরকার যাদের চাল আমদানির অনুমোদন দিচ্ছে, বাজারে ওই চাল কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। আমদানির চাল বিক্রিও সরকারের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

এমএ/বিএ/জেআইএম

আরও পড়ুন