দারিদ্র্য কমার পেছনের কারিগর উদ্যোগী কৃষক
ড. আতিউর রহমান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। ১৯৫১ সালে জামালপুর জেলার দিঘপাইত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ওই গ্রামের একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। গ্রামের বাজার থেকে ১৫০ টাকা সাহায্য নিয়ে ক্যাডেট কলেজে পড়তে আসা ড. আতিউর রহমান আজও সে ঋণের কথা ভোলেননি। এমন ঋণের কথা স্মরণে রেখেই সব সময় সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
ক্যাডেট কলেজ থেকে ঢাকা বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। এরপর পিএইচডি গবেষণা করেছেন ইংল্যান্ড থেকে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় তিন দশক ধরে রিসার্চ ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে। ২০০০ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করছেন তিনি।
উন্নয়ন, মানবিক উন্নয়ন, অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাওয়া কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
ড. আতিউর রহমান : ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১১০ ডলার। আজ তা দেড় হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে জনসংখ্যা কিন্তু দ্বিগুণ হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলে আয়ের পরিধি আরও বিস্তৃত হত।
জাগো নিউজ : এই সময়ে তো অন্যরা বেশ এগিয়ে গেল?
ড. আতিউর রহমান : একই সময়ে এবং একই অবস্থা নিয়ে যারা পথ চলতে শুরু করেছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার গতি ভালো। দক্ষিণ এশিয়ার অনেকের থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। যে কয়টি সূচকে অর্থনীতি বা প্রবৃদ্ধির বিচার করতে হয়, গত ১২ বছরে সেসব সূচকে অত্যন্ত স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। খুব কম ওঠা-নামা করেছে।
জাগো নিউজ : সূচকগুলো নিয়ে যদি আলোচনা করতেন?
ড. আতিউর রহমান : কৃষিতে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। সেবা খাত এবং উৎপাদনেও প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এই বাড়াতে স্থির একপ্রকার সামঞ্জস্য রয়েছে। অনেক দেশেই এই তিনটি ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সমান তালে বাড়তে দেখা যায় না। অস্থির অবস্থার মধ্যেও আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতি একপ্রকার স্থির অবস্থায় রয়েছে। রিজার্ভ বেড়েছে, রফতানিও বেড়েছে। টাকার বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা রয়েছে।
প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও টাকার বিনিময় হার- এই তিন সূচকে স্থিতিশীলতাই প্রমাণ করে আমাদের অর্থনীতি ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জাগো নিউজ : অর্থনীতির আরেকটি মাপকাঠি ‘দারিদ্র’। এখানে বাংলাদেশকে কেমন দেখছেন?
ড. আতিউর রহমান : দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন ২২ শতাংশ। অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন ১২ শতাংশের নিচে। ১০ বছর আগেও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬ শতাংশের ওপরে। মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। এমন সূচক আপনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে পাবেন না।
জাগো নিউজ : এই যে এগিয়ে যাওয়ার গল্প, গল্পের পেছনের কারিগর হিসেবে কাদের স্মরণ করবেন?
ড. আতিউর রহমান : নিঃসন্দেহে উদ্যোক্তরাই এই গল্পের কারিগর। আমাদের কৃষকরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। গার্মেন্টস উদ্যোক্তরা ভূমিকা রাখছেন। কৃষি ফলন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামে আর গরু দিয়ে হালচাষ হয় না। এত দ্রুত পরিবর্তন আপনি আর কোথাও দেখতে পাবেন না।
আমরা এক গবেষণায় পেয়েছি, কৃষিতে এক শতাংশ জিডিপি বাড়লে ০.৪ শতাংশ দারিদ্র কমে। আর অকৃষি খাতে যদি জিডিপি এক শতাংশ বাড়ে তাহলে দারিদ্র কমে পয়েন্ট ০.১১ শতাংশ। তার মানে দারিদ্র কমার পেছনের কারিগর উদ্যোগী কৃষক।
এই সরকারের আমলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী এর জন্য কৃতিত্ব নিতে পারেন। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ করেছে সমানতালে।
জাগো নিউজ : কৃষিঋণ আরও প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা। বলা হয় এ ঋণ এখনও কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছায়নি।
ড. আতিউর রহমান : এই অভিযোগ ঠিক বলে মন করার কোনো কারণ নেই। কৃষকরা সহজ শর্তে ঋণ পাচ্ছে বলেই তারা কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে।
২০০৯ সালের আগে সর্বোচ্চ ছয় হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ দেয়া হত। এখন প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ দেয়া হচ্ছে। আগে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক এক টাকাও কৃষিঋণ প্রদান করত না। এখন বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক মিলে হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ দিচ্ছে। একই ভাবে রাষ্ট্রীয় বাজেটেও কৃষিতে ভর্তুকি বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে এবং সরকার তাতে সমর্থন দিয়েছে।
এএসএস/এমএআর/আরআইপি