ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

আ. লীগ নিজেই ’৭২ এর সংবিধানের অনেক কিছু রাখেনি

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৭

ড. শাহদীন মালিক, বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। ষোড়শ সংশোধনী, তথ্যপ্রযুক্তি আইনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। যুক্তি তুলে ধরেন ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে। ‘বিরোধীপক্ষকে ঘায়েল করতেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা’ বলে মন্তব্য করেন। হতাশা প্রকাশ করেন সামনের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও। তিন পর্বের ধারাবাহিকের প্রথমটি আজ প্রকাশিত হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : ষোড়শ সংশোধনী দিয়েই শুরু করি। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আদালতের রায় নিয়ে বিতর্ক চলছে সংসদের ভেতর ও বাইরে। রায় নিয়ে আপনার কী প্রত্যাশা ছিল?

ড. শাহদীন মালিক : আদালত যে রায় দিয়েছেন, তেমনটিই প্রত্যাশা করেছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আদালত জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্য থেকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। মামলাটির ক্ষেত্রেও বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্য থেকে অ্যামিকাস নিয়োগ দেয়া হয়। ১০ জন অ্যামিকাসের মধ্যে নয়জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন। আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে প্রাধান্য দিয়ে রায় দিয়েছেন। আদালত এমন রায় দেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল।

জাগো নিউজ : সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই রায়ের ফলে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফেরা বাধা হয়ে দাঁড়াল।

ড. শাহদীন মালিক : আওয়ামী লীগ নিজেই ’৭২ এর সংবিধানের অনেক কিছু রাখেনি। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদে ছিল, ‘সরকার ক্ষতিপূরণ ছাড়া যেকোনো ব্যক্তির জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে’। সংবিধান সংশোধন করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলেন বঙ্গবন্ধু। এখন কি সরকার চাইলে ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে?

প্রথম সংশোধনীতে বলা হলো, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে গিয়ে যদি মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধের আইন হলো। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরলে তো যুদ্ধাপরাধের আইন-ই থাকে না।

১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে অনেক আবেগের কথা বলা হয়। এগুলো বলার জন্যই বলা। অর্ধ-শতাব্দি পরে চাইলেও আর ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফেরা সম্ভব নয়।

জাগো নিউজ : তাহলে সময়ের বাস্তবতাই রায়ে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে?

ড. শাহদীন মালিক : জনগণের মধ্যে এক ধরনের ধারণা বদ্ধমূল আছে যে, সংসদের দিকে তাকিয়ে যদি আদালত বিচারকার্য পরিচালনা করে, তাহলে জনআস্থা থাকে না। ন্যায় বিচার হতে পারে না। বিচার বিভাগের ওপর অন্যরা ছড়ি ঘুরাক, তা নাগরিকরা চান না।

জাগো নিউজ : বিচারপতি নিয়োগসহ নানা প্রশ্ন তো আছেই। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আগেও ছিল। কোনো অ্যাকশন তো নিতে দেখা যায়নি।

ড. শাহদীন মালিক : অন্যান্য দেশেও যে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে খুব একটা ব্যবস্থা নেয়া হয় তা নয়। বিচারপতিদের নিয়োগের সিস্টেম আছে। আবার তারা এমন কোনো কাজ করেন না, যে সহসাই অপসারণের প্রশ্ন ওঠে। শত বছরের ইতিহাস অন্তত তাই বলে। পৃথিবীতে খুব কম বিচারপতির অপসারণের ঘটনা ঘটেছে।

আমাদের এখানে দু’জন বিচারপতির অপসারণের প্রসঙ্গ এসেছিল। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তাদের অপসারণের কথা বলেছিল। এর মধ্যে একজন নিজে থেকেই পদত্যাগ করেছিলেন। অন্যজনের বিষয়টি মামলা সংক্রান্ত জটিলতা ছিল। দু’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কিন্তু ছোট বিষয় নয়।

জাগো নিউজ : ‘এক বিচারপতি আরেক বিচারপতির বিচার বা অপসারণ করবেন কী করে’- রায়ের সমালোচনা করে সরকারপক্ষ এমন প্রশ্ন তুলেছে …

ড. শাহদীন মালিক : বিচারপতি অপসারণ ফৌজদারি কোনো বিচারকার্য নয়। দায়িত্ব পালনে অনিয়ম করলেই অপসারণের প্রসঙ্গ আসবে।

প্রতিটি বিভাগেই এমন ব্যবস্থা আছে। কোনো যুগ্ম-সচিব অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত-সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন উপ-সচিব বা পূর্ণ সচিব। একজন সচিব যদি তার অধস্তন অন্য সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, তাহলে বিচারপতিরা পারবেন না কেন? মূলত এ ব্যাপারে জ্ঞান না থাকার কারণেই অনেকে এ অবান্তর প্রশ্ন তুলছেন। না জানার কারণেই অনেকে সমালোচনা করছেন।

আইনজীবীদের মধ্যেও তিনটি ট্রাইব্যুনাল আছে। কোনো আইনজীবী তার মক্কেলের সঙ্গে প্রতারণা করলে ট্রাইব্যুনালগুলো ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

জাগো নিউজ : সংসদ সদস্যরা বলছেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার ক্ষমতা রাখলে, বিচারপতিদের বেলায় নয় কেন?’ এর ভিত্তি কী?

ড. শাহদীন মালিক : না জেনেই এমন ক্ষমতার কথা বলছেন সংসদ সদস্যরা। ভ্রান্ত ধারণা থেকে এমন বলা। রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ করেন কারা? সংসদ সদস্যরাই তো রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দেন। এ কারণে তারাই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার ক্ষমতা রাখেন। স্পিকারের বেলাতেও তাই। চাইলেই কি সংসদ সদস্যরা একজন সচিবকে অপসারণ করতে পারেন? সচিবকে তো তারা নিয়োগ দেননি। সচিব নিয়োগের বিধান আছে। তেমনি অপসারণেরও বিধান আছে।

সুতরাং একটির সঙ্গে আরেকটি গুলিয়ে ফেললে তো আর হবে না।

জাগো নিউজ : এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ করবে বলে জানিয়েছে। কী হতে পারে সর্বশেষ?

ড. শাহদীন মালিক : রিভিউ সম্পর্কেও সঠিক ধারণা না থাকার কারণে এমন আলোচনা সামনে আসছে। সাধারণত রিভিউয়ের প্রসঙ্গ আসে মৃত্যুদণ্ডের বেলায়। নিম্ন আদালত কারও বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দিলে উচ্চ আদালতে বাধ্যতামূলকভাবে আপিল করতে হয়। আসামি না করলেও রাষ্ট্র করে থাকে। এরপর আপিল বিভাগে যেতে হয়। সর্বোচ্চ সাজার বেলায় এ সুযোগ পেয়ে থাকেন আসামিপক্ষ।

যুদ্ধাপরাধের বেলায় রিভিউ করার সুযোগ মিলেছে ভিন্ন কারণে। কিন্তু আগের রায় রিভিউ শুনানিতে পরিবর্তন হয়েছে- এমনটি খুব কমই ঘটেছে। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা রিভিউ শুনানিতে মুহূর্তেই মীমাংসা হয়ে যাবে বলে মনে করি।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন