৬৮-তে ভিত্তিপ্রস্তর, ঊনসত্তরে নতুন ভবন
চলতি বছরের ২৩ জুন আটষট্টিতম (প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী) পালন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আগামী বছর ঊনসত্তরতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে যাচ্ছে দলটি।
ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন ভবনটির মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হবে। এটি শেষ হলে ভেতরের সাজসজ্জার কাজ শুরু হবে। বর্তমানে ভবনের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে নির্মাণকারীরা বলছেন, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যেই ভবন হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত পুরনো কার্যালয়ের স্থানে মাটির নিচের একটি তলাসহ ১০তলা নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে ছয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরও চার তলার কাজ শেষ হবে। বর্তমানে অর্ধশত শ্রমিক এখানে কাজ করছেন।
ভবনটির নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
কমফোর্ট নামের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কা্র্যালয় নির্মাণ করছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফোরম্যানের দায়িত্বপালন করছেন ইসলাম হোসেন। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমরা ভবনের মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ করে ফেলব। এ লক্ষ্যে প্রতিদিন ৫০জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। ভবনের মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হলে শুরু হবে ভেতরের সাজসজ্জার কাজ। আশা করি, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ চাইলে এ কা্র্যালয় ব্যবহার করতে পারবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলের নিজস্ব ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বিশ্বমানের ভবনটি সামনের দু’পাশের দেয়াল কাচ দিয়ে ঘেরা থাকবে। আর মাঝখানে সিরামিকের ইটের বন্ধন গড়ে তোলা হবে। এর সামনের দেয়ালজুড়ে দলের সাইনবোর্ডসহ দলীয় শ্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, চার মূলনীতি, ভাষা আন্দোলন ’৫২, মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ প্রভৃতি শব্দ খোদাই করে লেখা থাকবে। ভবনের সামনে-পেছনে হবে ফুলের বাগান।
ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানের ছবি রাখারও পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, ১০তলা বিশিষ্ট এ ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় থাকবে আওয়ামী লীগের সহযোগী-অঙ্গসংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয়। সাত, আট ও নয় তলায় দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্ষ থাকবে।
ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকবে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম ও সাংবাদিক লাউঞ্জ। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিতব্য ভবনটিতে থাকবে দুটি স্বতন্ত্র কার পার্কিং, একাধিক লিফট, সিঁড়ি, কার লিফটসহ ভূমিকম্প ও অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। ভবনের ছাদে থাকবে হেলিপ্যাড, যেখানে সরাসরি হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, ভবনের মূল কাজ চলছে। এরপর ইন্টেরিয়র কাজ শুরু হবে। আশা করছি, আগামী বছরের ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলীয় সভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভবনটির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পুরাতন ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। এরপর কার্যালয় স্থানান্তর হয়েছে বেশ কয়েকবার।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর বর্তমান ভবনটি ভাড়া নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়।
এইউএ/এমএআর/এমএস