আহা ঘুম শান্তির ঘুম
ভোরের আলো তখনও ঠিকমতো ফোটেনি। ইট পাথরের যান্ত্রিক এ নগরীর বৃহৎ অট্টালিকায় বসবাসকারী মানুষগুলো তখনও গভীর ঘুমের রাজ্যে। রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের সামনের রাস্তায় পাইকারি মাছের আড়তের শ্রমিকরা মাছ সাজাতে ব্যস্ত। ক্রমেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে লাগল। শুরু হলো সশব্দে মাছ বিক্রির হাঁক-ডাক। এ দৃশ্য মঙ্গলবার ভোরবেলার।
মাছের আড়তের হাঁক-ডাকের মাঝেও অদূরেই রাস্তার ওপর পড়ে থাকা একটি ভ্যানগাড়ির ওপর আনুমানিক পাঁচ-ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে শিশুকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখা যায়। ভ্যানটির শক্ত কাঠের পাটাতনের ওপর জীর্ণশীর্ণ দেহের শিশুটির হাত-পা গুটিয়ে ঘুমানোর দৃশ্য অনেকেরই নজরে পড়ে।
ভ্যানের ওপর পথশিশুটিকে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অন্য এক ভ্যানচালক এই উঠ, উঠলি না বলে ঘুম ভাঙাতে আসে। এ সময় এক বৃদ্ধ শ্রমিক ওই ভ্যানচালককে ইশারা দিয়ে শিশুটির ঘুম ভাঙাতে নিষেধ করেন।
অদূরে বিশ্বাস বিল্ডার্সের বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের দিকে আঙুল দেখিয়ে বৃদ্ধ বলেন, ‘ওই যে দেখতাছ বড় বিল্ডিং, ওইখানে বড় লোকেরা থাকে। সুন্দর বাসা, সুন্দর বিছানা ও সুন্দর পরিবেশে থাকার পরও উনাদের অনেকেই শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। কিন্তু রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা এই বাচ্চারা শত হৈচৈর মধ্যেও শান্তিতে ঘুমায়।’
নুর হোসেন নামে ওই বৃদ্ধ জানান, প্রতিদিন সকালে কাঁচাবাজারের সামনের রাস্তায় পাইকারি মাছের আড়ত বসে। ফজরের নামাজের পর পর ভ্যানচালকরা মাছ নিয়ে হাজির হন। অদূরে ভ্যান রেখে মাছ নামানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন।
এ সময় পথশিশুরা ভ্যানের ওপর আরাম করে ঘুমায়। তবে সে ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ভ্যানচালকরা মাছ নামিয়ে হিসাব-কিতাব মিটিয়ে ফিরে এসে ওদের ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। এটি এখানকার প্রতিদিনের চিত্র।
এমইউ/ওআর/এমএস