সরকারি চাকুরেদের নির্বাচনের পথ আরও দূরে সরছে
জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে যেকোনো স্থানীয় নির্বাচনের পথ আরও দূরে সরে যাচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের। আমলাতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে তাদের দূরে রাখতেই এ ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) পরিবর্তন আনছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এ পরিবর্তন ছাড়াও মাঠপর্যায়ে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আরও বেশ কয়েকটি বিধি ও আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) পরিবর্তনের খসড়া প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।
মঙ্গলবার দুপুরে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, কিছু সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এখনও কমিশনে তা পেশ করা হয়নি। সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর, বাধ্যতামূলক অবসর বা পদত্যাগ করার পর পাঁচ বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারবেন না- মাঠপর্যায়ের ইসি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ ধরনের প্রস্তাবনা এসেছে।
জানা গেছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অবসরে নেয়ার পর তিন বছর না হলে নির্বাচন করতে পারেন না। এবার তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত ১২ (এফ) ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া এ ধারায় অবসর, বাধ্যতামূলক অবসরের সঙ্গে নতুন করে পদত্যাগের বিষয়টিও সংযোজন করা হয়েছে।
এছাড়া ইসির এ প্রস্তাবনা কার্যকর হলে ‘না’ ভোটের বিধান চালু হতে পারে। এজন্য অনুচ্ছেদ ৩১ (৫) (বিবি) ধারায় ‘না’ ভোটের বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে ভোটাররা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন।
বিদ্যমান আইনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। এটি পরিবর্তনের কারণ হিসেবে ইসি বলছে, এতে জটিলতা দেখা দেয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য স্বাক্ষর দিয়ে অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। স্বাক্ষর যাচাই করতে গেলে ভয়ে ও হুমকির মুখে তা দেয়ার কথা অস্বীকার করেন। আবার অনেক ভোটার এজন্য টাকা লেনদেনের মতো অনৈতিক বিষয়ে জড়িয়ে পড়েন। ইসি এসবের প্রমাণ পাওয়ায় আরপিও’র ১২ (৩-এ) (এ) অনুচ্ছেদ বাদ দিতে চাচ্ছে।
ভোট চলাকালীন বিভিন্ন ঘটনায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তা বন্ধ করতে পারলেও ভোটগ্রহণের আগের রাতে বা অন্য কোনো সময়ে ব্যালট ছিনতাই বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে বা অন্য কোনো কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার প্রয়োজন হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা তা বাতিল করতে পারেন না। এবার তাদের সে ক্ষমতা দেয়া হবে। এজন্য ২৫ (৫) ধারায় সংযোজন আনা হচ্ছে।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর দু’জন প্রার্থীর মধ্যে একজনের মনোনয়নপত্র অবৈধ হলে অপরজন বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে অনেক ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থী আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান; পরে এনিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। তাই আগামীতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ১৯ অনুচ্ছেদটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা কিংবা প্রবাসীদের ভোটদানের জন্য বিদ্যমান পোস্টাল ব্যালটের পরিবর্তে ইলেকট্র্রনিক ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ব্যালটবক্সে ভোটসংবলিত ব্যালটে পূর্ণ হওয়ার পর লক সিল লাগানোর প্রস্তাব আনতে আইনে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনী অপরাধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িয়ে পড়া রোধ করা এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য ৪৪-ই (৫) অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হচ্ছে।
মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী পরিবেশ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়ম, কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল কর্তৃক বড় ধরনের অনিয়ম বা আচরণবিধি লঙ্ঘন ইত্যাদি সম্পর্কে সরাসরি তদারকি ব্যবস্থা ‘তৃতীয় পক্ষ’ নিয়োগ করা। এতে ইসির মনিটরিং দক্ষতা বাড়বে; এ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৯১-সি (৮) সংযোজন করা। আর আরপিও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে গেজেট প্রকাশ করার বিষয়টি সংযোজন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, খসড়া সংশোধনী পেশ করা হলে তা পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জন এমনকি বাতিলও হতে পারে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) আইন, ২০১৩ বিল পাস হয়। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবরের পর শুরু হবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা।
এইচএস/আরএস/এমএআর/পিআর