ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

অর্থ ব্যয় না হলেও বাড়ছে পিপিপিতে বরাদ্দ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯ এএম, ২৮ মে ২০১৭

বাস্তবায়ন ব্যর্থতা সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৮০০ কোটি টাকার মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এমন ব্যর্থতা সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরের জন্য ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে পিপিপি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পিপিপি বাস্তবায়নে সাত বাধার কথা তুলে ধরা হয়। একটি পিপিপি প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করতেই অনেকখানি সময় চলে যায়। এরপর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও পিপিপিতে তেমন কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে পিপিপিতে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে অর্থমন্ত্রী দেশে পিপিপির মাধ্যমে সমুদ্র ও বিমানবন্দর, সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল, সড়ক ও রেলপথ এবং বড় বড় সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। প্রতি বছর ৩৯ হাজার কোটি টাকা হিসাবে পাঁচ বছরে এক লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা পিপিপি থেকেই পাওয়া যাবে বলেও আশা করেছিলেন তিনি।

তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে থেকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সাত বছরে পিপিপি খাতে বিনিয়োগ এসেছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচ বছরে অবকাঠামো খাতে তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশাল এ ঘাটতি মোকাবেলায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে পিপিপির ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। তাই টানা সাত বছর সফলতা না এলেও এবারের বাজেটে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে পিপিপি খাতে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরের পর থেকে টানা পাঁচ অর্থবছরেই এ খাতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু পুরো অর্থ খরচ হয়নি কখনও। হিসাব-নিকাশ করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ কমিয়ে দুই হাজার কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় দুই হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বারবার বরাদ্দ কমানো হলেও সফলতা আসেনি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত এ অর্থের মধ্যে মাত্র ৮০০ কোটি টাকার মতো ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। তারপরও আগামী অর্থবছরের জন্য ১০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। সর্বমোট আটটি প্রকল্পের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছর থেকে পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বিবেচনা করছে সরকার। ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) অনুমোদন পাওয়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এ খাতের ১৩ প্রকল্প জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কুমিরায় একটি এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা হয়ে মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ পরিবহন খাতের সাত প্রকল্প ও পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে পিপিপি ভিত্তিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিপিপি কার্যালয়ের সিইও সৈয়দ আফসার এইচ উদ্দিন বলেন, পিপিপির মাধ্যমে দেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অমিত সম্ভাবনা আছে। তবে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দফতরে সেবা নিতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অনেক সময় অপচয় হয়। বিনিয়োগ করতে এসে সময় বেশি লেগে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিরক্ত হন। পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একজন ব্যবসায়ীকে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা অনেক লম্বা প্রক্রিয়া। সরকারের এক সংস্থার সঙ্গে আরেক সংস্থার সমন্বয়হীনতা বেশ লক্ষণীয়। এখানে পরিবর্তন আনা জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুরু থেকেই বাংলাদেশে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে পিপিপি উন্নয়নে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক।

প্রকল্পের প্রস্তাবে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর বিবেচনায় বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়নে মারাত্মক হারে পিছিয়ে রয়েছে। ১৪৪টি দেশের মধ্যে অবকাঠামো সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের অবকাঠামো ঘাটতি প্রবল। অবকাঠামো খাতে উন্নতি না হলে অর্থনৈতিক উন্নতিও টেকসই হবে না। এ অবস্থায় অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ জিডিপির আরও তিন শতাংশ বাড়াতে হবে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, সরকারের একার পক্ষে এত বেশি অর্থ বিনিয়োগ সম্ভব নয়। এ অবস্থায় প্রত্যাশিত উন্নতি নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পিপিপি ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। সংস্থার দুই কোটি ডলার কারিগরি সহায়তা ব্যয় করে পিপিপি অফিসের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ব্যয় হবে এ অর্থ। অবশিষ্ট ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এমইউএইচ/বিএ/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন