ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

আবাসিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করছে ডিএসসিসি

প্রকাশিত: ০৫:৪২ এএম, ২৬ মে ২০১৭

রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। আবাসিকের অনুমোদন নিয়ে হোটেল, বার ও রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলেছেন অনেকেই। তবে এবার আবাসিক বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করছে সংস্থাটি।

ডিএসসিসি ও রাজউক সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক এলাকার ভেতরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এলাকাবাসীর সমস্যা হচ্ছে। বারের দোকানসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন অনেকেই। এর ফলে এলাকার নিরাপত্তাসহ পরিবেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। গুলশানের ‘হলি আর্টিসান’ ও বনানীর ‘রেইন ট্রি’র ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামছে ডিএসসিসি।

এদিকে একই সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযানসহ নানামুখী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মাঝ পথে আবার থেমেও গেছে। তবে এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।

ডিএসসিসির হিসাব মতে, সংস্থাটির অধিন ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ৮১৯টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নোটিশ করার পর ৫৮৩টি প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে, ১৩০টি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এবং ১০৬টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নতুন করে কোনো লাইসেন্স দেয়া বা নবায়ন করা হচ্ছে না।

গত বছরের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা ও বারিধারা আবাসিক এলাকার অবৈধ ও বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতোমধ্যে এ পাঁচ এলাকার সমীক্ষা শেষ হয়েছে।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক যা`ই হোক না কেন, কেউ যদি বেসমেন্ট বা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা বন্ধ করে রাখেন বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করেন সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। সিটি কর্পোরেশন সেখানে ট্রেড লাইসেন্স দেবে না। আবাসিক এলাকায় কোনো হোটেল, গেস্টহাউস, রেস্টুরেন্ট থাকতে পারবে না।

বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর কাজ শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। অভিযান পরিচালনায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সময় নিয়ে অন্য জায়গায় সরে গেছে।

এ ছাড়া ২০১৬ সালের ২০ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের এক সভায় অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় জানানো হয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৩০১৫টি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১১৩৭টি, রাজউকে ২৪০০টি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১৫০টি, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে ২৬টি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ৩৭৬টি, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে ৪০টি, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ৫৮টি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ২৬টি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে ৫টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠানো হয়। এগুলোর অবস্থান আবাসিক এলাকায়।

জানা গেছে, দ্য মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (ট্যাক্সেশন) আইন- ১৯৮৬ এর ৪২-৪৮ ধারা অনুযায়ী দুই ধাপে ১৩০টি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকার ট্রেড লাইসেন্সও বাতিল করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ভেস্টার, মেসার্স ভূইয়া সিন্ডিকেট, তাওসীফ ইন্টারন্যাশনাল, কে টেক এমিএল জেভি, টি এ ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যবল পাওয়ার, এস আফরোজ এন্টারপ্রাইজ, রনি ট্রেডিং কর্পোরেশন, কমিউনিকা, অ্যাডভান্স ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রিকেয়ার বাংলাদেশ, শিন পাওয়ার, ম্যাক টেকনিক্যাল সার্ভিসেস, ট্রেড সিটি, রতন কুমার দাস, ইউ সিভি (ইনিভার্সেল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), ইন্টারন্যাশন্যাল বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন, রেন ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স পেট্রো কম ইন্টারন্যাশনাল, রেসপন্সিভ টুইনটি গ্রেটেড, ইউনিভারেল ট্রেডিং কোম্পানি, ফ্যাশন এক্সেসরিজ, আলকোবা, আলী এন্টারপ্রাইজ, রূপ এন্টারপ্রাইজ, টিআরকে কন্সালটেন্সি সার্ভিসেস, ব্যাংক কনসাল্ট, ইউংস গ্লোবাল কনসালটেন্ট, রাইয়ান ট্রেডিং, মেসার্স মঞ্জুর ইন্টারন্যাশনাল, মোমেকা বিউটি পার্লার, আলম স্টোর, অনিকা টেইলার্স, শিহাব ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, প্রিয়া ফ্যাশন টেইলার্স, তোফাজ্জল স্টোর, মেডিসিন কর্নার, নিউ কানিজ ফ্যাশন টেইলার্স, মেসার্স একতা ফ্যাশন টেইলার্স, গ্লোব নিউজ ম্যাগাজিন, শাহিন আরা নেভিগেশন, তপন হেয়ার ড্রেসার, আল মদিনা ড্রাই ক্লিনার্স, যোগাযোগ টেলিকম, ডা. মেহেরুন নেছা ক্লিনিক, সিলভারডেল, লেডি লাইন, কলেজ অফডেভ অল্টারনেটিভ কোডা, মেসার্স সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সিটি ক্যাফে, সিটি ফার্মেসি, সিটি জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টার, হুসাইন ড্রাগ, কলেজ অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, উপশম ফার্মা, কনটেক লিমিটেড, ড্রেন্ডস সেসিং লিমিটেড, জুনিয়র ল্যাবরেটরি স্নাক্র, জুনিয়র ল্যাবরেটরি স্কুল, রেবেকা এন্টারপ্রাইজ, ভূইয়া ইসলাম অ্যান্ড জায়দি, ড্রিমস হেয়ার অ্যান্ড বিউটি কর্নার, একাডেমিয়া স্কুল, সি টেইলার্স, ব্রকলি ফুড প্রোডাক্ট, ব্রকলি রেস্টুরেন্ট, ব্লেসিং এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, চমক হারবাল বিউটি পার্লার, প্রো অ্যাক্ট অ্যাডভারটাইজিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেড, ফারসাম ডেন্টাল কেয়ার, ফায়ার ক্লাই, প্রযুক্তি, মাওলা ডেন্টাল কেয়ার, নাজইনুর ফার্মেসি, নাজিনুর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, নাজ প্রোপার্টিজ লিমিটেড, সিজান রিফ্রিজারেশন, এসএম এন্টারপ্রাইজ, মিটি হাট ও ধানমন্ডি কম্পিউটার প্লাস।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইউসুফ আলী সরদার জাগো নিউজকে বলেন, আইন অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া সরকারের পক্ষে থেকে বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই আবাসিক ভবন তৈরি করে বেসমেন্ট বা গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে দোকান বসিয়ে দেন। এসব দোকানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে। আবাসিক বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা এসব প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে এসব এলাকায় আর কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হবে না।

এমএসএস/আরএস/এআরএস/এমএস