ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

মশা নিধন বন্ধে বেড়েছে চিকুনগুনিয়া

প্রকাশিত: ০৯:০৭ এএম, ২৩ মে ২০১৭

গত এক সপ্তাহ ধরে মশা নিধনের ওষুধ লার্ভিসাইড নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি)। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মীদেরও মশা নিধন কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায়নি। ফলে নগরীর ঘরে ঘরে এডিস মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তার দাবি, তারা সকাল-বিকাল দু’বার প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটান। কিন্তু তাদের এ দাবির সঙ্গে একমত নন নগরবাসী।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১১ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহ ধরে তাদের কাছে মশার লার্ভা ও ডিম ধ্বংসের ওষুধ লার্ভিসাইড ছিল না। ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মানহীন ওষুধ সরবরাহ করায় ডিএসসিসি তা ফিরিয়ে দেয়।

ফলে নতুন করে ওষুধ আসতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। এ কারণে গত সপ্তাহজুড়ে কর্মীরা নগরীতে লার্ভিসাইড ছিটাতে পারেননি। ফলে মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে হঠাৎ করে আলোচনায় আসা চিকুনগুনিয়া। গত কয়েকদিনে এ রোগে সারাদেশে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

রাজধানীতে মশা নিধনের দায়িত্ব মূলত দুই সিটি কর্পোরেশনের। মশক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থাকলেও সংস্থাটি সিটি কর্পোরেশনের আওতায় কাজ করছে। কিন্তু সংস্থার ঢিলেমি আর সীমাহীন অনিয়মের কারণে কোনোভাবেই মশা নিধন করা যাচ্ছে না।

এদিকে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। গত শীত থেকে এখন পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে। অসম্পূর্ণ কাজের কারণে রাস্তাগুলো এবড়োথেবড়ো রয়েছে। ছোট-বড় প্রচুর গর্ত তৈরি হওয়ায় সেখানে বৃষ্টির পানি জমে মশা উৎপাদনের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ময়লার বড়বড় স্তূপ তৈরি হওয়ায় মশার উপদ্রবও বেড়েছে।

চলতি বছর রাজধানীতে বর্ষা শুরুর আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এবং বৃষ্টির পানি জমে থাকায় এবার প্রচুর পরিমাণ এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

সম্প্রতি রাজধানীতে এডিস মশাবাহী চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সর্বত্র আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশন চিকুনগুনিয়া রোগ থেকে মুক্তি পেতে আতঙ্কিত না হয়ে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে গত রোববার এক অনুষ্ঠানে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। এটি সাধারণ রোগ। ভাইরাসজনিত বলে এ রোগ হলে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনও সচেতনতামূলক বেশ লিফলেট প্রকাশ করেছে। জাতীয় দৈনিকেও দেয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপন।

তবে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়ায় পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে দু-এক দিনের মধ্যে অন্যরাও আক্রান্ত হন। পরিবারের সবাই আক্রান্ত হওয়ায় রোগীদের সেবা করার কেউ থাকে না। এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মশা নিধনের জন্য ছয় শতাধিক কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে রয়েছেন ২৮৬ জন। কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট আয়তন অনুযায়ী ৩-৫ জন কর্মী রয়েছেন। এসব কর্মীরা সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি অঞ্চলের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তদারকিতে কাজ করেন।

অভিযোগে আছে, কর্মকর্তারা কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে ওষুধ নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেন। এছাড়া নিলামের মাধ্যমে যে ওষুধ নেয়া হয় তার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সিটি কর্পোরেশন যে ওষুধ সংগ্রহ করে তাতে মশা মরে না।

এদিকে, নগরজুড়ে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ ক্র্যাশ পোগ্রামের আয়োজন করেছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সংস্থাটি গত রোববার থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ মশক ওষুধ ছিটানোর কর্মসূচি হাতে নেয়। মেয়র সাঈদ খোকন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিএসসিসিতে মশা নিধনের জন্য ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এ বছর পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। উত্তর সিটি কর্পোরেশনে গত অর্থবছরে এ বাজেট ছিল ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ বছর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু এরপরও নগরবাসী মশার হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। এছাড়া মোবাইলে কোনো কথা বলবেন না বলেও জানিয়ে দেন।

নগরবাসী এ বিষয়ে কার থেকে পরামর্শ ও প্রতিকার পাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের আমার অফিসে আসতে বলেন।

এমএসএস/এসআর/এমএআর/এআরএস/জেআইএম