ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

গরমে ঢামেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৩০০ রোগী ভর্তি

প্রকাশিত: ০৮:৪৩ এএম, ২৩ মে ২০১৭

প্রচণ্ড দাবদাহে ‘হাঁসফাঁস’ অবস্থা এখন সারাদেশে। জ্যৈষ্ঠ মাসের এ গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশি বেশি পানি, স্যালাইন ও লেবুর শরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই করছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের এ গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সোমবার ঢাকায় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রোববার খুলনা ও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা, চাঁদপুর, খুলনা ও নোয়াখালীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা এ তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র গরমের কারণে গত কয়েকদিনে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হারে বেড়ে গেছে। রাজধানীর মহাখালী আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫০০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ ডা. আয়েশা বেগম জাগো নিউজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে সাতশ রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের ২০টি জেলায় ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও বাড়ছে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। তীব্র গরমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে শিশু এবং বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ঢামেক চিকিৎসকরা।

সরেজমিনে ঢামেক জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, রোগী আর স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। টিকিট কাউন্টারের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, গত চার-পাঁচ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১১০০-১২০০ রোগী আসত। কিন্তু চলমান তীব্র দাবদাহে কয়েকদিন ধরে এ সংখ্যা গড়ে ১৫০০-তে গিয়ে ঠেকেছে।

তরিকুল ইসলাম জানান, রোববার টিকিট কেটে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪৯০ জন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই গরমজনিত রোগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু। এখন প্রায় প্রতিদিনই ২০০-২৫০ শিশুর চিকিৎসা দিতে অভিভাবকরা আসছেন, যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ১২০-১৫০।

সাভারের গেন্ডা থেকে তিন বছরের শিশু জাহিদকে নিয়ে ঢামেকে এসেছেন মা হালিমা বেগম। গরমে ও ঘামে কয়েকদিন ধরে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছিল সে। ঢামেকে এসে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে। তার পাশের বাড়ির একজন একই সমস্যায় কোলের শিশুকে নিয়ে ঢামেকে এসেছেন।

আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের ডায়রিয়াল ডিজিজ ইউনিট প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান জানান, দেশে এখন ডায়রিয়ার পিক মৌসুম (বছরে দুই বার মার্চ-এপ্রিল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরকে ডায়রিয়ার পিক সিজন ধরা হয়) চলছে। গত সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্যবারের মতো এবারও যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও ও বাড্ডা এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে। ওইসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের লোক সেখানে বসবাস করেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরমের ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বের হয়ে যায়। ফলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। যারা বাইরে কাজ করেন, প্রয়োজন মতো পানি পান করার সুযোগ পান না, তারাই মারাত্মক পানিস্বল্পতার শিকার হন।

ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ এবং মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণেই মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে খাবারে দ্রুত পচন ধরছে। সেই খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর শরবত পান করেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিতে গিয়ে ঢামেক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুদীপ রঞ্জন দেব জাগো নিউজকে বলেন, বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খোলা বা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। রাস্তা বা ফুটপাতের সরবত এবং এ ধরনের পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবার ঘরে খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের ঘাম যাতে কম হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। পাতলা জামা-কাপড় পরাতে হবে। ঘাম হলে বার বার সুতির কাপড় বা গামছা দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। খাবারের মেন্যুতে টাটকা শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে। ফ্রিজে সংরক্ষিত ফলমূল বর্জনের পরামর্শ দেন তিনি। কারণ এতে খাবারের পুষ্টিগুণ থাকে না।

এআর/এএস/এমএআর/এআরএস/জেআইএম