দাবদাহে বাড়ছে শিশুরোগীর সংখ্যা
‘দুদিন আগে ফরিদপুরের হাসপাতাল থেকে যখন আমার মেয়েটিকে বের করে দেয়া হলো, ভেবেছিলাম আর বুঝি কিছুই করার নেই। কোনোভাবে ঢাকায় এনে ভর্তি করানোর দুদিনের মধ্যে ও এখন অনেকটাই ভালো।’
ঢাকা শিশু হাসপাতালে টাইফয়েডে আক্রান্ত সাত বছরের শিশু নুসরাত জাহান লিয়ার বিছানার পাশে বসে কথাগুলো বলছিলেন মো. শাহীন শেখ। বিছানায় শোয়া লিয়া তখন বাবার মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে কার্টুন দেখছে।
শাহীন বলেন, আজ একটু চোখ খুলেছে। নইলে এ ক’দিন জ্বরে চোখই খুলছিল না।
শিশু হাসপাতালজুড়ে শাহীনের মতোই উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের চলাফেরা। কিছুদিন আগেও হাসপাতালের বেশকিছু বিছানা ফাঁকা থাকত। এখন ফাঁকা তো নেই উপরন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে।
সাম্প্রতিক দাবদাহের কারণে রোগী বাড়ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে জ্বর, টাইফয়েড, আমাশয় ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি।
আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ রোগী আসত, এখন সেখানে ৮০০ থেকে ৮৫০ রোগী আসছে বলে জানান ঢাকা শিশু হাসপাতালের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবদুল হাকিম।
গত এক-দেড় সপ্তাহ ধরে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
আবদুল হাকিম বলেন, ‘আগে চিকিৎসা নিয়ে ৫০-৬০ জন রোগী চলে গেলে পুরো দিনটি অন্তত বিছানাগুলো ফাঁকা থাকত। কিন্তু এখন এক ঘণ্টার জন্যও বিছানাগুলো ফাঁকা রাখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ফেরত যাচ্ছে। জরুরি হলে আমরা অন্য হাসপাতালে পাঠাচ্ছি।’
বেড ফাঁকা না থাকলে হাসপাতালটিতে রোগীর ভর্তি নেয়ার নিয়ম নেই। হাসপাতালটিতে এখন ৬৫০টি বেড রয়েছে। যার সবগুলোতেই শিশুরা ভর্তি।
সাভারের ধামরাই এলাকা থেকে আসা ইয়াসমিন পাঁচ মাসের শিশুকে নিয়ে একটি বিছানায় বসে ছিলেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে সে (শিশুটি) বমি করতে থাকে। এখানে চিকিৎসা নেয়ার পর কিছুটা ভালো।
গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে আসা নুরন্নাহার সাত মাসের শিশু মিনহাজকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। জানালেন, গরমের কারণে মিনহাজ জরে আক্রান্ত হয়। সেই জ্বর থেকে খিঁচুনি শুরু হয়। জ্বর কমে এলেও মাথা সারাক্ষণ গরম থাকছে।
হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে চিকুনগুনিয়া রোগীও রয়েছে। কথা হয় সোবহানবাগ থেকে আসা ১১ বছরের শিশু মিমের সঙ্গে। সে জানায়, ক’দিন ধরে প্রচণ্ড জ্বর। সেই সঙ্গে হাত-পা খুব জ্বলছিল। রাতের বেলা অনেক জ্বর আসে।
তার অভিভাবক জানান, মিমের চিকুনগুনিয়া হয়েছে। ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জাগো নিউজকে জানায়, চিকুনগুনিয়া রোগীদেরও সাধারণ রোগীদের মতো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে যাতে কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ায়- বিষয়টি বিশেষভাবে নজর দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, চলতি তাপপ্রবাহে শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া সবদিকে নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।
শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক এ টি এম আজহারুল হক বলেন, অতিরিক্ত গরমের এ সময়ে সবারই বিশেষ যত্ন নিতে হবে, বিশেষ করে শিশুদের। রোদ থেকে দূরে রাখার পাশপাশি তাদের গায়ে যাতে ঘাম না জমে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সব সময় বাতাসে রাখতে হবে। জ্বর বা কোনো অসুখ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
জেপি/এআরএস/এমএআর/জেআইএম