চাপ নয়, নিয়ম মেনে তদন্ত করে মামলা নিয়েছি : ওসি ফরমান
রাজধানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা গ্রহণ নিয়ে ‘তালবাহানা’র অভিযোগ ওঠে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে পাঁচ দিনের ‘পারিবারিক’ ছুটিতে যান তিনি। রোববার কাজে যোগ দেন। বিকেলে তিনি মুখোমুখি হন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক জসীম উদ্দীনের সঙ্গে।
জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
ফরমান আলী : কেমন আর থাকব! মামলা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা হবে কে জানত? শুধু কী তাই! আমার ছুটি নিয়েও নানা কথা শুনছি। এসব কার ভালো লাগবে বলেন?
জাগো নিউজ : পুলিশ জানিয়েছে আপনি পারিবারিক কারণে ছুটিতে ছিলেন? তবে অনেকেই বলছেন চাপের মুখে আপনার ছুটিতে যাওয়া…
ফরমান আলী : আসলে ছুটির আবেদন করি মামলা থানা থেকে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে যাওয়ার পর। কে জানত আমার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা শুনতে হবে। এমনটি হলে ছুটিতেই যেতাম না। আসলে চাপ বা অন্য কোনো কারণ ছিল না। পারিবারিক কারণেই আমার ছুটিতে যাওয়া।
জাগো নিউজ : বনানীর দুই শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। অভিযোগ উঠেছে, ভিকটিম দুই তরুণী থানায় মামলা করতে এসে আরেক দফা হয়রানির শিকার হয়েছেন। আপনার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি?
ফরমান আলী : না! ওই দুই ছাত্রী আমার বিরুদ্ধে কিংবা থানা পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে কোনো বাজে কথা বলেননি। আমি তো শুনিনি। ফেসবুকে লাইভ ভিডিও কি দেখেছেন? সেখানে মামলার বাদী পুলিশের ভূমিকার প্রশংসাই করেছেন। সমালোচকরা মনগড়া কথা বলছেন। যারা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাদের ইনটেনশন ভালো না, এটা বুঝতে হবে।
জাগো নিউজ : মামলা নিতে দেরি করেছেন, এটা তো সত্য? ডিএমপিও মামলা নিতে দেরি এবং হয়রানির বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। কারণ কি ছিল?
ফরমান আলী : এক মাস পাঁচ দিন পর ওই দুই ছাত্রী মামলা করতে আসেন। স্বাভাবিকভাবে এতদিন পর মামলা করতে আসলে তো ভাবতে হবে। আগে দেখতে হবে কেন এত দেরিতে, কাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। তদন্তের প্রয়োজন ছিল। তদন্ত করে যখন মনে হয়েছে মামলার যৌক্তিকতা রয়েছে তখন আমরা নিয়ম মেনেই মামলা নথিভুক্ত করেছি।
জাগো নিউজ : মামলা না নেয়া এবং অভিযুক্ত ধর্ষকদের গ্রেফতার না করার পেছনে প্রভাবশালী এক সাবেক সরকারদলীয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে চাপ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রধান অভিযুক্ত সাফাতের বাবা বিত্তশালী। এমপি-মন্ত্রিপাড়ায় তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা নিতে দেরি এবং সাফাতকে না ধরার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের?
ফরমান আলী : আসলে (হেসে) কে, কী বলছে, সব তো আর আমলে নেয়া যায় না। আমি আসলে মামলা হওয়ার আগে বা পরে কোনো চাপবোধ করিনি। কেউ চাপও দেয়নি। আমি ধর্ষণে অভিযুক্ত সাফাত, সাকিফ কিংবা নাঈম আশরাফদের চিনতাম না। আর কোনো মন্ত্রী-এমপি’র সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। স্বাভাবিক নিয়মে মামলা নেয়া এবং আসামি ধরার চেষ্টা করেছি।
জাগো নিউজ : আগে থেকে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের সঙ্গে আপনার সখ্যতা ছিল। যে কারণে আপনি সাফাতকে গ্রেফতার না করতে সহযোগিতা করেছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
ফরমান আলী : কী বলেন! তারা (দুই ছাত্রী) আসলে কী বলেছে তা তো আমি শুনিনি। তবে আপনাকে সত্যি বলছি, মামলার আগে আপন জুয়েলার্সের মালিকের চৌদ্দ গোষ্ঠীকেও চিনতাম না। মামলার পর তার সম্পর্কে আমার চেনাজানা। টাকা-পয়সা নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।
জাগো নিউজ : দুই তরুণীর একজনের অভিযোগ, ‘ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল আরও কয়েকবার ধর্ষিত হচ্ছি। পুলিশ বারবার ধর্ষণের ঘটনা শুনতে চাইছিল। অথচ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল না। গুরুত্বও দিচ্ছিল না’। আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি?
ফরমান আলী : আমার যেটা দায়িত্ব ছিল সেটাই আমি করেছি। তদন্ত করার দরকার ছিল, করেছি। গুরুত্ব দিয়েছি বলেই যথাযথ নিয়মে মামলা হয়েছে।
জাগো নিউজ : আজ (রোববার) ছুটি শেষে কাজে যোগ দিলেন। তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন কি?
ফরমান আলী : দুপুরে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। আমার অবস্থান পরিষ্কারের চেষ্টা করেছি।
জাগো নিউজ : তদন্ত শেষে যদি আপনি দোষীসাব্যস্ত হন, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়…
ফরমান আলী : আমি তো কোনো অপরাধই করিনি। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তদন্ত করেই মামলা নিয়েছি। মামলা করতে আসলেই যে আসামিকে ধরতে হবে, এমনটি আপনি নিজেও কি মানবেন? মানবেন না। অথচ এটা নিয়ে অনেক পানি ঘোলা করা হচ্ছে।
জাগো নিউজ : তদন্ত নিয়ে কিছু বলবেন? আপনার ব্যর্থতা বা অভিযোগের কারণেই কি মামলার তদন্ত স্থানান্তরিত হলো?
ফরমান আলী : ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। যেটা ভালো হবে কর্তৃপক্ষ হয়তো সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।
জেইউ/জেএইচ/এমএআর/জেআইএম