ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঢাবি সিনেট নির্বাচন : নীল দলে অন্তর্কোন্দল, ফুরফুরে সাদা দল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ১৩ মে ২০১৭

আগামী ২২ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ৩৫ শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন।

নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বাম সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘নীল দল’ এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’ নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে প্যানেল ঘোষণা করেছে।

সাদা দল যেখানে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্যানেলে নির্বাচন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিক তখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির দাবিদার নীল দলের দুটি প্যানেল জমা পড়েছে। দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অংশ হিসেবে নীল দলে চলছে মান-অভিমানের হাওয়া।

নীল দলের একটি পক্ষ উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের পন্থী বলে পরিচিত। অন্যপক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। উভয়পক্ষই নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করছেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের অনুসারী হিসেবে মানছেন।

উপাচার্যের নেতৃত্বে শিক্ষকদের বেশিরভাগই তরুণ, অন্যদিকে মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে শিক্ষকদের অধিকাংশই প্রবীণ।

এদিকে শুক্রবার নীল দলের উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে নিজ নিজ প্যানেলের নাম নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দিয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্যানেল লিস্ট জমা দেয়ার শেষ দিনে নীল দলের বর্তমান (মেয়াদোত্তীর্ণ) আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন একটি প্যানেলের নাম জমা দেন। এ সময় অন্যপক্ষ জমা দেয়া প্যানেলের নাম প্রকাশের দাবি করলেও নাজমা শাহীন প্যানেল ‘সিলগালা’ করে তা জমা দেন। তারা নাম প্রকাশে অপারগতা দেখান।

এরই জেরে সংগঠনের সাধারণ সভায় গৃহীত নাম জমা দেয়া হয়নি দাবি করে অন্যপক্ষ পাল্টা আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করে নাম জমা দেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ পাল্টা এ প্যানেলের নাম জমা দেন।

একই দিন সকাল ১০টার দিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল সর্বসম্মতিক্রমে নিজেদের পূর্ণ প্যানেলের নাম জমা দেয়।

মাকসুদ কামাল-পক্ষের শিক্ষকদের দাবি, গত ১০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে নীল দলের সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তৈরি প্যানেলটি জমা দেননি বর্তমান আহ্বায়ক নাজমা শাহীন। তিনি উপাচার্যের সম্মতিতে ভিন্ন একটি প্যানেল জমা দেন। সন্দেহ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে জমা দেয়া নামের তালিকা প্রকাশেরও দাবি জানানো হয়। যদিও তাতে রাজি হননি নাজমা শাহীন। তাই বাধ্য হয়ে আরেকটি প্যানেল যোষণা করে নাম জমা দিয়েছেন বলে জানান তারা।

এদিকে, নাজমা শাহীনের জমা দেয়া প্যানেলের মধ্যে সাধারণ সভায় তৈরি প্যানেলের ১৭ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন মাকসুদ কামাল-পক্ষের শিক্ষকরা। তারা বলেন, সেখানে অনুপ্রবেশকারীদের স্থান দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, উপাচার্য-পক্ষের শিক্ষকদের দাবি, যারা ভিন্ন প্যানেল জমা দিয়েছেন তারা নীল দলের কেউ না। তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের জন্য প্যানেল জমা দিয়েছেন। এটি নীল দলের বিষয় না। তাদের জমা দেয়া প্যানেলটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শেই গ্রহণ করা হয়েছে। নবীনদের সমন্বয়ে নির্বাচনের জন্য প্যানেল তৈরি করা হয়েছে।

মাকসুদ কামাল-পক্ষের শিক্ষকদের দাবি, নীল দলের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি অবৈধ। গত ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল নীল দলের কমিটি গঠন করা হয়। রীতি অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও দুই বছরেও কমিটি না হওয়ার জন্য তারা উপাচার্যের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। উপাচার্য না চাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি গঠনে দাবি তুললেও সেটি কানে নেননি বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি। আর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যারা নীল দলকে আগলে রেখেছিল তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে বলে দাবি একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নীল দলের এক সহযোগী অধ্যাপক বলেন, উভয়পক্ষের কাদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে সুযোগ পাবে সাদা দল। তাই নির্বাচনে সাদা দল থেকে বেশিরভাগ সদস্য বের হয়ে আসতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

যদিও বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (উপাচার্য-পক্ষ) অধ্যাপক ড. আবু জাফর শফিউল আলম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, নীল দল তাদের একটি মাত্র প্যানেল ঘোষণা করেছে। অন্যটি হচ্ছে স্বতন্ত্র। তাদের প্যানেল ঘোষণায় নীল দলের ভোটে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। সাদা দলেরও সুযোগ পাওয়ার সম্ভবনা নেই। কারণ নীল দল একতাবদ্ধ আছে। যারা পৃথক প্যানেল দিয়েছেন তারা নীল দলের নয়, স্বতন্ত্র। তারা যদি স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ায় তাহলে তাদের ধরে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। নির্বাচনে অংশ নেয়া তাদের অধিকার। স্বতন্ত্রভাবে জিততে পারলে তারা জিতবে।

অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক (মাকসুদ কামাল-পক্ষ) অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরাই মূল নীল দল। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমরা নীল দল আগলে রেখেছিলাম। আমরা চাই না পৃথক প্যানেল হয়ে নীল দলের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাক। আমরা সাধারণ সভার মাধ্যমে সমঝোতায় যেতেও প্রস্তুত আছি।

অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া ‘সমঝোতার’ বিষয়ে বলেন, নীল দল তো এক রয়েছে। যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে তাদের সঙ্গে কেন সমঝোতায় যাব আমরা?

নীল দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে সাধারণ শিক্ষকদের ভোট পেতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সাদা দলের প্রার্থীরা। সাধারণ শিক্ষকরা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন বলে জানান তারা। নীল দলের ভাঙন নিয়ে কোনো ধরনের মাথাব্যথা নেই বলে জানিয়েছেন সাদা দলের একাধিক শিক্ষক।

সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, নীল দলের ব্যাপারে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা একটি প্যানেলে নির্বাচন করবে, নাকি ভিন্ন ভিন্ন প্যানেলে করবে, সেটা তাদের বিষয়। এটা আমাদের চিন্তায় নেই। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। ক্ষমতা ও প্রশাসনে ভারসাম্য থাকুক।

জাতীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী বিরোধী মত না থাকায় জাতি যে খেসারত দিচ্ছে আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা সেটি অনুধাবন করে সিনেটে ভারসাম্য সৃষ্টিতে আমাদের ভোট দেবেন। আমরা ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষকরা আমাদের পক্ষে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

নাজমা শাহীনের নেতৃত্বে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক আবু মো. শফিউল আলম ভূইয়া, আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, আবুল মনসুর আহাম্মাদ, আ ক ম জামাল উদ্দীন, ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ, এস এম আব্দুর রহমান, কাজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, তৌহিদা রশীদ, দেলোয়ার হোসাইন, বায়তুল্লাহ কাদেরী,মো. মাহাবুবুর রহমান, মুবিনা খন্দকার, মো. আফতাব আলী শেখ, মো আফতাব উদ্দিন,মো. আব্দুল আজিজ, মো. আব্দুস ছামাদ, মো. জিয়াউর রহমান, মো. ফজলুর রহমান, মো. মজিবুর রহমান, মোহাম্মাদ আলী আক্কাস, শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, সুপ্রিয়া সাহা, সুব্রত কুমার আদিত্য, হাসিবুর রশীদ, সহযোগী অধ্যাপক এস এম রেজাউল করিম, কাজী হানিয়াম মারিয়া, চন্দ্র নাথ পোদ্দার, জান্নাতুল ফেরদৌস,পাপিয়া হক, লাফিফা জামাল, সহকারী অধ্যাপক নুসরাত জাহান ও সায়মা খানম।

মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা
অধ্যাপক মুহাম্মাদ সামাদ, মো. আনোয়ার হোসেন, সাদেকা হালিম, এ কে এম গোলাম রব্বানী, জিনাত হুদা, তাজিন আজিজ চৌধুরী, মো হারুনুর রশীদ খান, এমরান কবীর চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মাদ শামছুদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শাহ মো. মাসুম, জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, শারমিন রুমি আলীম, মো. আসাদুজ্জামান, আবু সারা শামসু রউফ, সুব্রত কুমার সাহা, কে এম সাইফুল ইসলাম খান, মোহাম্মদ শওকত আলী, গোবিন্দ চক্রবর্তী, আখতার হোসেন, এ কিউ এম মাহবুব, সৈয়দ হুমায়ুন আখতার, মোহাম্মাদ ফিরোজ জামান, সীতেশ চন্দ্র বাছার, সৌমিত্র শেখর দে, সহযোগী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার, মোহাম্মদ বিললাল হোসেন, মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, সাব্বীর আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক আবদুর রহিম, নাজির হোসেন খান, মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও মো. মনিরুল ইসলাম।

বিএনপি-জামায়তপন্থী সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা
অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান, আব্দুস সালাম, এ টি এম জাফরুল আযম, এ এফ এম মোস্তাফিজুর রহমান, এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, এ বি এম শহিদুল ইসলাম, এস এম আরিফ মাহমুদ, গোলাম রব্বানী, দিলীপ কুমার বড়ুয়া, নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, মামুন আহমেদ, মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছনী, মোহাম্মদ এমরান কাইয়ুম, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, মো. আবদুল করিম, মো. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, মো. নুরুল আমিন, মো নুরুল ইসলাম, মো. মাহব্বত আলী, মো. মাহফুজুল হক, মো. মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া, মো. মোর্শেদ হাসান খান, মো. লুৎফর রহমান, মো. শাহ এমরান, মো. হাসানুজ্জামান, মো. হুমায়ুন কবীর, লায়লা নূর ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ দাউদ খাঁন, মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী, মো. আব্দুস সালাম আকান্দ, মো. ইসরাফিল প্রাং, মো. মহিউদ্দিন ও মো. সিরাজুল ইসলাম।

এমএইচ/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন