ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আড়ালে মানবপাচার!

প্রকাশিত: ০৪:৩৯ এএম, ১২ মে ২০১৭

মালয়েশিয়াতে নৃত্যানুষ্ঠানের নামে মানবপাচার করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিদেশে ভালো চাকরির নামে এ চক্র বিদেশে মানুষ পাঠিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোট অংকের টাকা।

অনেকে এ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রচুর টাকা খুইয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত দেশে যেতে না পেরে দেয়া টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

সম্প্রতি জাগো নিউজের অনুসন্ধানে মালয়েশিয়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে মানবপাচারের একটি ঘটনা ধরা পড়েছে। মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের পাচারের শিকার ২৫ জনকে বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী সাজু আহমেদ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সাজু আহমেদ জাগো নিউজের কাছে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগও দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগীদের একজন মাহবুবা হোসেন রুহী। নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার মেয়েকে মালয়েশিয়া নেয়া হয়। কিন্তু সে দেশের বিমানবন্দর থেকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

মাহবুবা হোসেন রুহী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় নাচের অনুষ্ঠানের কথা বলে সাজু আহমেদ আমার মেয়েকে নিয়ে যায়। এর আগে তিনি দুই লাখ টাকাও নেন। কিন্তু মালয়েশিয়ায় তিনি আমার মেয়েকে নিতে পারেননি। দেশে ফেরার পর তিনি টাকাও ফেরত দেননি।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘নাচের অনুষ্ঠানের নাম তিনি (সাজু আহমেদ) এমন লোকদের নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন যাদের নাচের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। মূলত নাচের অনুষ্ঠানের নামে ট্যুরিস্ট ভিসায় তিনি বিদেশে লোক পাঠান। তার কারণে আমার মেয়েসহ অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি যেন অন্য কারও সঙ্গে আর না হয় সেজন্য মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাজু আহমেদ সাতজনের একটি দল নিয়ে মালয়েশিয়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যান। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশ ভ্রমণে যেতে গেলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নাম করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন তারা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পোশাক পরিধান করে সাতজন বিমানে উঠলেও মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর অতিরিক্ত আরও ২৫ জন সাংস্কৃতিক পোশাক পরিধান করে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে তারা পুরো দলটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অবৈধ মানবপাচারের বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর অবৈধভাবে যাওয়া লোকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে প্রকৃত নৃত্যশিল্পীদেরও দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রকৃত নৃত্যশিল্পীরা দেশে আসার পর এ বিষয়ে সাজু আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষটি এড়িয়ে যান। পরবর্তীতে বিষয়টি বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে জানানো হয়।

dance

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা গত ১৬ এপ্রিল একটি আলোচনা সভা ডাকে। এতে সংস্থাটির দায়িত্বশীলরা মানবপাচারের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিভিন্ন অজুহাত ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, সাজু আহমেদ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ কর্মশালার মুখ্য শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া বুলবুল একডেমি অব ফাইন আর্টসের (বাফা) শিক্ষক ও কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়ের পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিক্ষকতার সুবাদে তিনি ছাত্রীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে বিদেশে অবৈধ মানবপাচারের অভিযোগও করেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাজু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি একজন সংস্কৃতিকর্মী। নাচের জন্য সাতজন মেয়েকে নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। কিন্তু মালয়েশিয়া বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ক্রস করতে পারিনি। ফিরে এসেছি। অন্য ২৫ জনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না।’

টাকা নিয়ে বিদেশে অবৈধভাবে মানবপাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। তবুও তারা অভিযোগ করছেন কেন জানি না। ছাড়পত্র ছাড়া বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি ভুল ছিল। এ ত্রুটির কারণেই মালয়েশিয়াতে প্রবেশ করতে পারিনি।’

একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসাবে আপনি প্রতিবাদ করেননি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা তো আমার মেয়ের মতো। বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারে। এতে আমি খুব রাগ করিনি। মাইন্ডও করিনি।’

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬১ শতাংশ হারে অবৈধভাবে মানব পাচার হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বঙ্গোপসাগর দিয়ে অবৈধভাবে গেছেন ৫৩ হাজার লোক। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৩ হাজার।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা- ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ অবৈধভাবে পাচার হচ্ছেন। এ পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন হয়।

এমএ/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন