সাদমান রেগনাম গ্রুপের পরিচালক নাঈম ইভেন্ট ম্যানেজার
রাজধানীর বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনের তিনজনই প্রভাবশালী পরিবারের। অভিযুক্তদের মধ্যে সাদমান সাকিফ রেগনাম গ্রুপের ডিরেক্টর। তার বন্ধু সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। নাঈম আশরাফ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতার ছেলে। তারা সবাই নিয়মিত তাদের বাবার নাম এবং পরিচয়ের অপব্যবহার করত। এমনকি রেইন ট্রি হোটেলে রুম বুকিং করার সময়ও প্রভাবশালী বাবার নাম বলে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া শুধুমাত্র ভিজিটিং কার্ড আর ফোন নম্বর দিয়ে রুম বুকিং করেছিল। অভিযুক্তদের বাকি দুইজন সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী ও গাড়িচালক।
নাঈমের পূর্নাঙ্গ পরিচয় ও বাবার নাম এখনও জানতে পারেনি ভিক্টিম কিংবা পুলিশের কেউ। শুধু জানা গেছে, তার বাড়ি মিরপুর। দুই তরুণীর ভাষায়, ‘ধর্ষণের দিন সবচেয়ে বেশি নোংরামি করেছিল নাঈম।’
কে এই সাদমান সাকিফ
মামলার তিন নম্বর আসামি সাদমান রেগনাম গ্রুপের অন্যতম একজন পরিচালক (ডিরেক্টর)। তার বাবা মো. হোসাইন জনি রেগনাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। হোসাইন জনি একসময় জাতীয় পার্টির ছাত্রসমাজ করতেন, পরে যুবদলের রাজনীতিও করেছেন। তবে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। রেগনাম গ্রুপের ওয়েবসাইটে ডিরেক্টর হিসেবে সাদমানের বাণী দেয়া আছে।
বন্ধুদের কাছে নিজেকে সবসময় পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলে দাবি করত সাদমান। এ বিষয়ে পিকাসোর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ম্যানেজার মো. সুমন জাগো নিউজকে বলেন, পত্রিকায় সাদমানকে পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বলে দাবি করা হয়েছে। এটা সত্যি নয়। সাকিফ রেগনাম গ্রুপের মালিকের ছেলে। গুলশানের তেজগাঁও লিংক রোডে রহমান রেগনাম সেন্টারের লেভেল ১২-১৩ ও রুফটপ ভাড়া নিয়ে পিকাসো রেস্টুরেন্ট তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
ধর্ষণের দিন সাদমানের ভূমিকা
ভুক্তভোগী তরুণীদের ভাষায়, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতে গিয়ে সাদমান সাকিফের সঙ্গে তাদের পরিচয়। ঘটনার দিন সাদমানই ধর্ষকদের সঙ্গে তাদের দেখা করিয়ে দেয়। ধর্ষণের সময় সে একাধিকবার হোটেল রুমে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে এবং পরবর্তীতে রুমের বাইরে চলে যায় যায়।
ইভেন্ট ম্যানেজার নাঈম আশরাফ
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে ‘ধর্ষণের শিকার’ দুই তরুণীর জানান, সেদিন রাতে নাঈম আশরাফের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে জঘন্য।
নাঈম ওই দুই তরুণীর কাছে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের এক বড় নেতার ছেলে বলে দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে সে ই-মেকারস বাংলাদেশ নামক একটি ইভেন্ট সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মালিক। নাঈমের সঙ্গে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেছেন এমন কয়েকজন জানান, ক্ষমতাসীন দলের এক মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে নাঈমের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এই সুযোগে নাঈম নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতার ছেলে বলে দাবি করে।
দ্য রেইনট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে নাঈম ওই পরিচয়ই ব্যবহার করে। সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও এমপিদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে এসে কনসার্ট করে যাওয়া গায়িকা ও অভিনেত্রীদের কয়েকটি অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ছিল নাঈম। তার সঙ্গে বিভিন্ন সময় মিডিয়ার মেয়েদের অনৈতিক সম্পর্ক থাকার গুঞ্জনও শুনেছেন তার সহকর্মীরা।
ধর্ষণের রাতে নাঈমের ভূমিকা
ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের কাজের সূত্র ধরেই সাদমান সাকিফের সঙ্গে নাঈমের পরিচয় হয়। দুই তরুণী জানায়, ঘটনার দিন সেই নাঈমই প্রথম তাদের একজনকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। তার দেখাদেখি সাফাতও তাই করেছে। নাঈমই সবচেয়ে বেশি নোংরামি করেছে।
বার্থডে বয় সাফাত আহমেদ
আসামি সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিক। তার সাবেক স্ত্রী বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ছিলেন। নানা মনোমালিন্যের কারণে তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাফাতের প্রথম স্ত্রী এমন কাজ করাচ্ছেন। দুই বছর আগে বিয়ের পর সেই মেয়ের নানা ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য দেখে সাফাত তাকে তালাক দেয়। সেই মেয়েটি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এই ষড়যন্ত্র করছে।
সেই রাতে সাফাতের ভূমিকা
তরুণীদের বক্তব্য অনুযায়ী, নাঈমের দেখাদেখি সাফাত অস্ত্রের মুখে অপর তরুণীকে জোর করে ধর্ষণ করে। তার ড্রাইভারকে ডেকে ভিডিও করায়। ধর্ষণের কথা কাউকে বললে ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করার ও ওই দুই তরুণীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাতের জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী।
এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি হচ্ছেন সাদমান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী (নাম উল্লেখ করা হয়নি)।
এআর/বিএ