‘টাকার নেশায়’ শ্রমজীবী হচ্ছে হাজার শিশু!
রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা। আজিমপুর কবরস্থানের বিপরীত দিকের রাস্তাসংলগ্ন ফুটপাতের মাটিতে কাঁচা আম সাজিয়ে বসে আছে আনুমানিক ৯/১০ বছরের তিন শিশু। অদূরে কিছুক্ষণ আগে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের মর্নিং শিফটের ছুটি হয়েছে। অভিভাবকরা তাদের শিশুদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
তাদের সামনে দিয়ে কাউকে হেঁটে যেতে দেখলেই ‘অ্যাই লাগবো নাকি কাঁচা আম, এক্কেবারে সস্তা, একভাগ মাত্র ৩০ টাকা’ বলে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠছিল।
অনেকেই কাঁচা আম দেখে দাঁড়িয়ে কেনার জন্য দামাদামি করেন। কেউ ২০ টাকা কেউবা একভাগ ১৫ টাকা দামে বিক্রি করবে কিনা জানতে চান। শিশুরা ক্রেতাদের কর্কশ স্বরে বলে, ‘নিলে নেন, নাইলে যান। এক টাকাও কমে বেচুম না।’
এক অভিভাবক শেষপর্যন্ত ২৫ টাকা দামে আম কিনে তারা পড়াশোনা করে কিনা তা জানতে চান। ওরা একসাথে বলে ওঠে, পড়াশোনা করলে-তো টাকা পাওয়া যায় না।
যে বয়সে এ তিন শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা, অভিভাবকদের কাছ থেকে ভদ্রোচিত ব্যবহার শেখার কথা সেই বয়সে তারা কেন পড়াশোনা না করে রাস্তায় বসে আম বিক্রি করছে- এ কৌতুহল থেকে শিশুদের সঙ্গে আলাপ।
নেহাল, সবুজ ও রুহেুল নামের ওই তিন শিশুর বাবা রিকশাচালক আর মা গৃহকর্মী। অভাবের সংসার হলেও বাবা-মা স্থানীয় সরকারি স্কুলে তাদের ভর্তি করে দিয়েছিলেন।
তারা জানায়, স্কুলে যেতে কারও ভালো লাগে না। স্কুলে না গিয়ে বরং কাজ করলে টাকা রোজগার হয়। সেই টাকা দিয়ে ভালো-মন্দ খাওয়া যায়। এ কারণে লেখাপড়ার চেয়ে কাজেই বেশি আনন্দ।
অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ শিশু উপার্জিত টাকা দিয়ে বিড়ি, সিগারেট এবং ডান্ডি জাতীয় নেশায় আসক্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ওই তিন শিশুই নয়, টাকার নেশায় রাজধানীসহ সারাদেশে হাজার হাজার শিশু অল্পবয়সে শ্রমজীবী হচ্ছে। কেউ মার্কেটে ফুটফরমায়েশের কাজ, কেউ বাস-টেম্পুর হেলপার কিংবা কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করে। কেউ কেউ বিভিন্ন কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা- ২০১৩ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ শিশু রয়েছে, যাদের কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়ে। বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনযোগ্য।
কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ১২ লাখ ৮০ হাজার। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তাদের কাজের বৈশিষ্ট্য জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ।
এমইউ/এমএআর/বিএ