ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

তারা ভেবেছিল পিছু হটব, পাত্তা দিইনি

প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকনের মেয়াদের দুই বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের পর ৬ মে শপথ নেন তিনি। মেয়র নির্বাচনের আগে ও পরে নগরবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত দুই বছর মেয়রের কার্যক্রমে কিছুটা আশার আলো দেখা গেছে। তবে রয়েছে ব্যর্থতাও।

দুই বছর মেয়াদ পূর্তি উপলক্ষে জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহেদ শফিক। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারে আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

জাগো নিউজ : মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আপনি ‘ক্লিন ঢাকা, গ্রিন ঢাকা’ ঘোষণা করেছিলেন। নগরবাসী তার সুফল কতটুকু পাচ্ছে?

সাঈদ খোকন: বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের উন্নতি হয়েছে। আমরা যে শহর দেখতে চাই, যে শহরের কথা বলি, সেই জায়গায় আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি। কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। আমাদের কাজ কন্টিনিউ করে যেতে হবে। তবে যেখান থেকে আমরা শুরু করেছিলাম সেই জায়গা থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। আপনি ওয়ার্ডগুলো পরিদর্শন করলে বাস্তবতা দেখতে পাবেন। সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নিয়ে পুরান ঢাকায় আমাদের বড় একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়, সেখানে আমাদের জায়গা নেই। তারপরও বেশ কয়েকটি এসটিএস নির্মাণ করেছি। বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন রয়েছে। আমরা যদি অন্তত ৩০-৪০টি এসটিএস স্থাপন করতে পারি তাহলে আমাদের বড় রকমের একটা পরিবর্তন আসবে।

জাগো নিউজ : দীর্ঘদিন থেকে সিটি কর্পোরেশন বলে আসছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যু উৎপাদন করবে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটা প্রকল্পের কথাও শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কতদূর এগোতে পেরেছেন?
সাঈদ খোকন: বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আমরা মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বৈঠকে ১১টি প্রস্তাব জমা দিয়েছি। এর আগে আরও একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমাদের মাতুয়াইল ল্যান্ড ফিল্ডে ৮১ একর জায়গা অধিগ্রহণের অনুমোদন পেয়েছি। এর মধ্যে ৩১ একর জায়গায় (ইনসিনারেশন প্রজেক্ট) বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পটি প্রাইভেটভাবে নাকি সরকারি খরচে হবে সেটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। মাতুয়াইলে বর্জ্য থেকে বিদুৎ হবেই।

khokon

জাগো নিউজ : সামান্য বৃষ্টিতেই তীব্র জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
সাঈদ খোকন: পানির যাবতীয় দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ওয়াসাই হচ্ছে ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজের অথরিটি। সুতরাং এ দায়িত্ব তার। আমরা চেয়েছি দায়িত্ব আমাদের কাছে হস্তান্তর করুক। কিন্তু তা ক্লিন করে দিন। আমরা তা মেন্টেইন করব। এখন দেখেন ওয়াসা সেটা করছে না। ওয়াসা শুধু বড় বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। ঢাকার নদী বুড়িগঙ্গার পানি কীভাবে পরিষ্কার করা হবে সে বিষয়ে তাদের (ওয়াসা) কোনো উদ্যোগ নেই। তার ড্রেনের পানি গিয়ে বুড়িগঙ্গা দূষিত করছে। সেটা বাদ দিয়ে তিনি পদ্মার পানি এনে আমাদের খাওয়াবেন। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডেই যাই। সেখানে নাগরিকের কী সমস্যা সেটা জানার চেষ্টা করি। সমাধানের চেষ্টা করি। তখন নাগরিকরা যেসব সমস্যার কথা বলেন তাদের প্রতিটি অভিযোগই শুধু পানি নিয়ে। ওয়াসার এসব সমস্যা নিয়ে আমি ক্লান্ত। সেসব সমস্যা নিয়ে আমাকে জবাব দিতে হয়। আমি বলেছি ওয়াসা ব্যর্থ সংস্থা। ওয়াসার বিশাল বিশাল প্রজেক্ট। কিন্তু তাদের এই ছোট্ট ছোট্ট সমস্যা সমাধানে মনোযোগ নেই। আমি তো মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি দলীয় রাজনীতি করি। একটা সমস্যার কারণেই আমার ভোট নষ্ট হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিয়ে এখন আমরাই কাজ করছি। শান্তিনগর এলাকায় ৮৫ ভাগ জলাবদ্ধতা কমিয়ে এনেছি। মালিবাগ এলাকায় ৫০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ড্রেনের কাজ শেষ করে ফেলব। আগস্ট মাসের পর ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও পানি জমবে না। এ বছর শুধু নাজিমউদ্দিন রোড করতে পারিনি। রাস্তাটির টেন্ডার করেছি। কিন্তু সেভাবে ঠিকাদারের অংশগ্রহণ হয়নি। এ সমস্যা আমি সমাধান করতে পারতাম যদি ওয়াসা আমাকে সাপোর্ট করত। আমি ওয়াসাকে ডেকেও পাইনি। ওয়াসার কোনো ড্রেনের নকশা ও ডিজাইন তাদের কাছে নেই। আমার কাছেও নেই। এখন পানিগুলো কী দিয়ে যাচ্ছে, কোথায় গিয়ে পড়ছে আমরা তার কিছুই জানি না। সেজন্যই আমাদের পানির পেছনে পেছনে দৌঁড়াতে হয়।

জাগো নিউজ : সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সে উদ্যোগ থেমে গেল কেন?
সাঈদ খোকন: আসলে থেমে যায়নি। আমরা কাজ শুরু করেছি। নন্দীপাড়া খালে জেলা প্রশাসন যে মার্কেট নির্মাণ করেছে সেটা ভেঙে উদ্ধার করা হচ্ছে। যেখানে আমাদের বিশাল একটা জনবল কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো খাল উদ্ধার করা হবে।

জাগো নিউজ : খাল উদ্ধার করতে গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি আসলে কেন হলো?
সাঈদ খোকন: এটা শুনেছি। কিন্তু এখনও মামলার কপি আমার কাছে আসেনি। দুটা সংস্থার মধ্যে যদি কোনো বিবাদ হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর একটা অনুশাসন রয়েছে তার দফতরের একজন ডাইরেক্টর বিষয়গুলো সমাধান করে দেবেন। জেলা প্রশাসন খালের ওপর দোকান নির্মাণ করলে সেটা সাফার করবে জনগণ, তা হয় না। আমরা সব দোকান ভেঙে দেব।

জাগো নিউজ : সম্প্রতি নগরীতে সেবাদানকারী সবকটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব ঢাকার দুই মেয়রকে দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কয়টি সভা করেছেন?
সাঈদ খোকন: আদেশ জারির আগে ও পরে এ পর্যন্ত তিনটি সভা করেছি। এখানে সমস্যা হচ্ছে সংস্থাগুলো উপযুক্ত প্রতিনিধি পাঠায় না। দেখা গেছে, জুনিয়র একজন কর্মকর্তা পাঠিয়ে দেন। যে কারণে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। আমরা তিনটি সভা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরপর এমন দেখা গেলে সিদ্ধান্ত নেব।

জাগো নিউজ : উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কমিশন আদায়ের একটা অভিযোগ আছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
সাঈদ খোকন: আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। মৌখিক অভিযোগ আসলে তা কীভাবে প্রমাণ করি। দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার তেমন সুযোগ থাকে না। যদি কেউ আমাকে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

khokon

জাগো নিউজ : আপনি যেহেতু একটি রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেড নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, রাজনীতির সঙ্গে নগর সেবার সমন্বয় কীভাবে করেন?
সাঈদ খোকন: আসলে রাজনীতিতে আমি নিষ্ক্রিয় না। দলের মেজর যেসব পোগ্রাম হয় আমি সেগুলোতে অংশ নেই। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি পোগ্রামে আমি থাকি। মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি প্রোগ্রামে আমি উপস্থিত থেকেছি। তবে এটা ঠিক হয়তো যেসব বর্ধিত সভা বা ছোটখাটো সভা সেগুলোতে উপস্থিত থাকতে পারি না। তবে আমার ওপর যে দায়িত্ব সেটা সুচারুভাবেই করতে চাই। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এতে আমি ১০০ থেকে ১০০ মার্ক পেতে চাই। যে কারণে হয়তো দলীয় অ্যাক্টিভিটিস কম। তাছাড়া বর্তমানে দলীয় কর্মসূচি ও রাজনৈতিক উত্তেজনা নেই। যদি এমন চ্যালেঞ্জ চলে আসে বা দলের জন্য কোনো ক্রাইসেস মুমেন্ট দেখা দেয় সেখানে আমরাই তো প্রথম। আমরা সেখানে চলে আসব।

জাগো নিউজ : আপনি গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করেছেন। অনেকেই বলেছে এটা বেশিদিন টিকবে না। গুলিস্তান এখনও পরিষ্কার রয়েছে। এটা বড় একটা সাহসের কাজ। আসলে এ শক্তি-সাহস আপনি কোথায় পেয়েছেন?
সাঈদ খোকন: ফুটপাত থেকে হকার, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ, খাল উদ্ধার, পুরনো যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানসহ আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমার কাছে কেন যেন মনে হয়েছে আসলে এটা সে রকম কোনো কঠিন কাজ নয়। আমি উপভোগ করেছি। যখন আমরা শুরু করেছি তখন মূল জায়গায় কিছু হয়নি। এখানে কোটি টাকার চাঁদার একটা বিষয় আছে। যারা এটার সঙ্গে জড়িত তারাই গোলযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পেরে উঠতে পারেনি। একপর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তারা ভেবেছিল আমি এক সময় পিছু হটব। আসলে আমি বিষয়টিকে একেবারেই পাত্তা দেইনি।

জাগো নিউজ : সিটি কর্পোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলো জরাজীর্ণ। অধিকাংশ র‌্যাব-পুলিশের দখলে। জনসাধারণের জন্য কমিউনিটি সেন্টার নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
সাঈদ খোকন: এই জায়গায় আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি এটা সত্য। অনেক কমিউনিটি সেন্টার ৩০-৪০ বছরের পুরনো। আমরা ২২টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প জমা দিয়েছি। কিন্তু সে প্রকল্পটি সেভাবে অনুমোদন লাভ করেনি। পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রথমে ছয়টি করা হলো। পরে সেখান থেকে তিনটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন এই পরিস্থিতি আমরা বিবেচনা করছি। যদি ২২টি ভবনের অনুমোদন না হয় তাহলে কমিউনিটি সেন্টার তো করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের ফান্ডও নেই। আমরা চাচ্ছি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে করা যায় কিনা। এ বিষয়ে আইনি দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করছি।

এমএসএস/ওআর/জেআইএম

আরও পড়ুন