১৮ হাজার কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই
দেশের বাজারে প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল ও ইলেকট্রনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি (মেডিকেল ডিভাইস) বিক্রি হলেও এসব চিকিৎসা সামগ্রীর ওপর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর তথা সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ সব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বাজারে যুক্তিসঙ্গত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি আইটেমের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বিক্রি হচ্ছে। রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ, পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগ সারাতে এ সব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির তালিকায় হার্ট রিং, হার্টভাল্ব, পেসমেকার, হার্ট, আর্টিফেসিয়াল প্রসথেসিস, আর্টিফিয়িসাল গ্রাফট, অক্সিজেন, অক্সিমিটার, নেবুলাইজার, মনিটরিং এয়ার, গ্যাস, লিনিয়ার এক্সিলেরেটর, ফ্লুয়িড, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ, ডায়ালাইসিস, ডায়ালাইজার, ডায়াথার্মি, বায়াপসি, বায়োমাইক্রোস্কোপ, ব্যান্ডেজ, বেলুন, ব্লেড বোন, ক্যাথেটার, ক্যানুলা, ওয়্যার, ভেন্টিলেটর মেশিন, এক্সরে, সিটি স্ক্যান ও আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি রয়েছে। সরকারিভাবে মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় আমদানিকৃত এ সব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বাজারে যুক্তিসঙ্গত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশীয় জেএমআই নামক এক কোম্পানির ৩৩ প্রকার ও অন্যান্য ১৪/১৫ কোম্পানির উৎপাদিত খুবই অল্প পরিমাণ চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ছাড়া বাকি যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি হার্টের রিংয়ের মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা দেশের মেডিকেল ডিভাইসের বাজারের বিশেষ করে জীবনরক্ষাকারী মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরত্বারোপ করেছেন।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি বছর আনুমানিক ১৬ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল ডিভাইস বিক্রি হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
তিনি জানান, আগে দেশের আমদানি করা মেডিকেল ডিভাইসের মান দেখার মতো কোনো সংস্থা ছিল না। তাই মানসম্মত মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহার ও সাধারণ মানুষকে নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। জীবনরক্ষাকারী মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের ব্যাপারেও গাইডলাইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শে করোনারি ষ্ট্যান্টের যুক্তিসঙ্গত দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রম শুধু হার্টের রিংয়েই নয়, জীবনরক্ষাকারীসহ সকল মেডিকেল ডিভাইসের যুক্তিসঙ্গত মূল্য নির্ধারণে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যেই জীবনরক্ষাকারী ডিভাইসের একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে মেডিকেল ডিভাইসের বাজার আগে ছোট ছিল। ক্রমেই এ বাজার বড় হচ্ছে। দেশীয় কয়েকটি কোম্পানিও মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদন শুরু করেছে। এটা খুবই শুভ লক্ষণ।
তিনি বলেন, প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইস সার্জিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্যাল ডিভাইস বিক্রি হলেও এগুলোর গুণগত মান ও যুক্তিসঙ্গত দাম নির্ধারণ না হওয়াটা দুঃখজনক। এ দুটি বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের উদ্যোগে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখেন।এটিকে মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও গুণগত মান নিশ্চিতের প্রথম ধাপ বলে অভিহিত করেন তিনি।
এমইউ/এএইচ/ওআর/জেআইএম