হেফাজত-আ.লীগ সম্পর্ক, অভিশাপ না আশীর্বাদ?
বছর পেরোলেই নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ বইবে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নানা নকশাও আসবে সামনে। নব্বইয়ের দশকে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসার পরই ভোটের রাজনীতিতে নানা ফ্যাক্টর (জয়-পরাজয়ের কারণ) কাজ করতে দেখা যায়। নির্বাচন এলেই দল ভাঙন, দল গঠন, জোট গঠন, জোট ভাঙনের খবরে গরম থাকে রাজনীতির মাঠ।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতির দরুন আপাতত মাঠে কোনো উত্তাপ নেই। গতবারের মতো এবারও অনিশ্চিত গ্যাড়াকলে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপির জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি।
তবে নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে খোদ সরকারদলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ। সংসদ, সংসদের বাইরে, অভ্যন্তরীণ, কূটনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ নিজেই নানা ইস্যুর জন্ম দিয়ে আলোচনায় থাকতে চাইছে। থাকছেও তাই।
সম্প্রতি ‘হেফাজত’ ইস্যুতে ফের উত্তাপ ছড়াল স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠন আওয়ামী লীগ। ‘হেফাজত বিতর্ক’ আওয়ামী লীগের জন্য শাপেবর নাকি আশীর্বাদ- তাই এখন আলোচনার বিষয়।
আলোচনা হচ্ছে খোদ দলটির মধ্যেও। দলটির একাধিক নেতা মনে করেন ‘হেফাজত’ নামের যে ‘টোপ’ বিএনপি ফিরিয়ে দিয়েছে, তা গিলে আওয়ামী লীগ আসলে দীর্ঘমেয়াদে পস্তাবে বটে।
সম্প্রতি কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদানের বিষয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী এবং হেফাজত ও কয়েকটি ইসলামী দলের নেতারা। ওই বৈঠকে ইসলামী দলগুলোর নেতারা সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলেন। আপত্তি জানান, পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়েও। মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যাপারে নীরব থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য নিয়ে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে সুর মেলান।
এরপরই সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘হেফাজতের সঙ্গে কোনো বিষয়ে কম্প্রোমাইজ (সমঝোতা) হয়নি।’
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা অবশ্য এ নিয়ে আশঙ্কার কথাই বলেন। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘হেফাজতকে যে হিসেবেই ছাড় দেয়া হোক না কেন, তা দীর্ঘমেয়াদে আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হবে।’
তিনি বলেন, ‘হেফাজত ঘরানার ভোট আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করতে পারে না। সুবিধার জন্য কাছে ভিড়লেও সুযোগ পেলে ছোবল মারবে হেফাজতি ভোটাররা। জামায়াত ইস্যুতে বিএনপিকে যে কালিমা নিতে হচ্ছে, একদিন হয়তো হেফাজত ইস্যুতেও একই কালিমা নিতে হবে আওয়ামী লীগকে।’
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সে আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেন। বলেন, ‘ভোটের হিসাব নিয়ে হেফাজত বা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতা হয়নি আমাদের। তাদের আদর্শের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আদর্শের বোঝাপড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’
তিনি বলেন, ‘কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূলধারা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করতেই সরকারের এ উদ্যোগ।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতিতে এ মুহূর্তে আর কোনো দলকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। বিএনপিও এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে আসবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং ভোটের মাঠে অন্য হিসাব কষার প্রয়োজন মনে করি না।’
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকও একই সুরে কথা বলেন। তিনি জানান, রাষ্ট্র ও সমাজকে এগিয়ে নিতেই কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে সরকার। এটি পিছিয়ে পড়া একটি জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
‘আর গ্রিক দেবী এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে হেফাজত নেতারা যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন, এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো মিল আছে বলে মনে করি না’- বলেন আব্দুর রাজ্জাক।
এএসএস/এমএআর/পিআর