বন্ধ হয়নি সিটিং বাসের ‘চিটিংবাজি’
নতুন নিয়মে সব গণপরিবহন ‘লোকাল’ হিসেবে চলাচলের কথা। কিন্তু যাত্রীদের সঙ্গে ‘চিটিংবাজি’ করেই চলেছে সিটিং নামধারী বাসগুলো। মালিকপক্ষের দোহাই দিয়ে আগের নিয়মেই ভাড়া আদায় করছে সংশ্লিষ্টরা।
নির্ধারিত স্টপেজগুলোতে দাঁড়িয়ে যাত্রী না নিয়ে গেটলক করে চলাচল করছে বাসগুলো।
মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর, সাভার থেকে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি, মিরপুর-১২ ও চিড়িয়াখানা রুট থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং গুলিস্তান-ডেমরা রুটে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের সঙ্গে যেন নতুন করে প্রতারণায় নেমেছে।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত কল্যাণপুর, কলেজগেট, আসাদগেট, ফার্মগেট পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর কল্যাণপুর শিশুমেলা এলাকায় দেখা যায়, অসংখ্য যাত্রী বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। আগের ন্যায় যাত্রীদের শেষ আশ্রয় সেই ৭, ৮ নং বাস, ধামরাই পরিবহন ও বিআরটিসি। আগের সিটিং নিয়মে চলাচলকারী কিছু বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী নিলেও দ্রুত আবার স্টপেজ ছেড়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত স্থানে সব বাসের দাঁড়ানোর নিয়ম থাকলেও তা মানছে না লাব্বাইক, ওয়েলকাম, ভূইয়া, তেঁতুলিয়া, স্বজন, তানজিল ও এভারেস্ট পরিবহন।
ওয়েলকাম, ভূইয়া ও লাব্বাইক পরিবহনের বাসগুলো ‘গেটলক’ অবস্থায় চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া অন্যান্য দিনের তুলনায় রোববার সড়কগুলোতে বাসের সংখ্যাও ছিল কম। সব মিলে হয়রানিতে পড়তে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের।
লাব্বাইক বাসের হেলপার হাসান বলেন, আমাদের নির্ধারিত বাসস্টপেজে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। লোকাল নয় সিটিং হিসেবেই চলতে বলা হয়েছে।
তবে তাদের নির্ধারিত স্টপেজ কলেজগেটে গিয়ে দাঁড়ালে টিকিট চেকার আসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটিং নয় লোকাল নিয়মে চলছে বাস।’
কেন ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে ও সিটের বেশি যাত্রী কেন নেয়া হচ্ছে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে সিটিং থেকে লোকাল করা হয়েছে। লোকাল হিসেবেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। যাত্রীরাও লোকাল নিয়মে উঠছেন বলে দাবি করেন তিনি।
শিকড় পরিবহনের যাত্রী ফাহিম জানান, যাত্রাবাড়িতে যাব। লোকালের কথা বলে আমার কাছ থেকে ভাড়া নিলেও অন্য যাত্রীদের কাছ থেকে সিটিং ভাড়া নিয়ে চিটিং করছে হেলপার।
মিনা নামে পঞ্চাশোর্ধ এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে ৫০ টাকা। কিন্তু আপনি আসার পর ভাড়ার চার্টে দেখছি, সত্যিকার ভাড়া ১৫ টাকা করে ৩০ টাকা। হেলপার আমাদের কাছ থেকে ২০ টাকা বেশি নিয়েছে।
একইভাবে যাত্রীদের সঙ্গে ‘চিটিং’ করছে ল্যাম্পস, স্বজন ও খাজাবাবা পরিবহন। ভাড়া নিয়ে প্রত্যেক যাত্রী চড়াও হন খাজাবাবা পরিবহনের হেলপারের ওপর। কিলোমিটার হিসেব করে অনেকটা চাপের ওপর আদায় করা বাড়তি টাকা ফেরত নেন যাত্রীরা।
এক যাত্রী বলেন, তেলের দাম বাড়লে ভাড়া বাড়ে। আর কমলে ভাড়া কখনও কমে না। আমরা আজ (রোববার) লোকাল নিয়মে ভাড়া দিতে চাইলেও সিটিং নিয়মে তা আদায় করা হচ্ছে।
আমেনা খাতুন নামে আরেক যাত্রী বলেন, আমরা তো জানি না লোকাল সার্ভিসের ভাড়া নেয়া হবে আজ থেকে। আজ বাসে বাড়তি লোক নেয়া হলেও টাকা কম নেয়নি হেলপার।
বাস মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে রোববার থেকে লোকাল হিসেবে সব গণপরিবহন চলবে। বাসগুলো প্রত্যেকটি স্টপেজে দাঁড়াবে এবং লোকাল ভাড়া নেবে যাত্রীদের কাছ থেকে। ঢাকায় কোনো বাস সিটিং হিসেবে চলবে না এবং কেউ সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নিতে পারবে না।
বিআরটিএ’র দেয়া ভাড়ার চার্ট অনুযায়ী ভাড়াই চূড়ান্ত। কিন্তু কোনো পরিবহনই এ নিয়ম মানছে না।
প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল সরকার ও মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে ১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস, গেটলক, বিরতিহীন কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামের সার্ভিসগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয়।
গত বছরের মাঝামাঝি সময় হঠাৎ রাজধানীর বেশকিছু গণপরিবহন সিটিং সার্ভিস নামে বিশেষ সার্ভিস চালু করে। শুরুতে সেবার কারণে এসব গাড়ি যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু একটা সময় এসে ভাড়া বেশি নেয়া হলেও বাসগুলো যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানো এবং অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে শুরু করে। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রী ও হেলপারের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা দেখা দেয়।
জেইউ/এমএআর/বিএ/পিআর