ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

উৎসবে যৌন হয়রানিতে শাস্তির নজির নেই

প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে তাদের মুক্তি মেলেনি। নারীদের প্রতি নির্যাতন ও যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে সার্বজনীন উৎসবে এ ঘটনা যেন আরো বেড়ে যায়।

নারীরা হয়রানি হয়, লাঞ্ছিত হয় কিন্তু দোষীদের শাস্তির কোনো নজির নেই। ঘটনার আড়ালে ঘটনা চাপা পড়ে যায়। এক লাঞ্ছিতের অশ্রুতে আরেক নির্যাতিতার অশ্রু মুছে যায়। এসব ঘটনায় মামলা হয় তবে বিচার হয় না। শাস্তির কোনো নজির না থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। এ কারণে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে যৌন হয়রানির ঘটনা।

সর্বশেষ ১৩ মার্চ পুরাতন ঢাকার শাঁখারীবাজারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হোলি উৎসব চলাকালে দুই নারীকে লাঞ্ছিত করে কয়েকজন যুবক। এর আগে ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে একদল যুবক নারীদের ওপর নিপীড়ন চালায়। ১৯৯৯ সালে এ ক্যাম্পাসেই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের সময় বখাটেদের হাতে নির্যাতিত হন এক নারী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘উৎসবে যৌন হয়রানির ঘটনায় যেসব মামলা হয় এর বিচার সঠিকভাবে হয় না। এসব ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়ায় দিন দিন অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। আর পার পায়ে যাচ্ছে ঘটনার মূল অপরাধীরা।’

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (সরকারি কৌঁসুলি) আব্দুল্লাহ আবু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উৎসবে যৌন হয়রানি ঘটনার মামলাসমূহের তদন্ত আরো গুরুত্বসহকারে করা উচিৎ। তদন্ত সংস্থাকে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে মূল অপরাধীরা পার পেতে পারবে না। অপরাধ করার প্রবণতাও কমে যাবে।’

হোলি উৎসবে দুই নারী লাঞ্ছিত
১৩ মার্চ পুরাতন ঢাকার শাঁখারীবাজারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হোলি উৎসব চলাকালে ঢাকা জেলা জজ কোর্টের মেইন গেটের সামনে কয়েকজন যুবক দুই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রঙ লাগিয়ে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনায় তাদের ভাই আহাদ ফেরদৌস বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর তিন আসামি আকাশ, সিফাত ও মামুনকে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।

টিএসসি এলাকায় নারীর শ্লীলতাহানি
২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষের উৎসবে ঢাবির টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে একদল যুবক নারীদের ওপর নিপীড়ন চালায়। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নারীদের লাঞ্ছনার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ।

তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়।

ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।

২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআই’র পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র কামালকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে উল্লেখ করেন, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে এক আসামিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অপর সাত আসামিকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। খুঁজে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হবে। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৩৪ জনকে।

থার্টিফার্স্ট নাইটে নারী নির্যাতন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ১৯৯৯ সালের থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে গিয়ে একদল বখাটের কবলে পড়ে নির্যাতনের শিকার হন এক নারী। ওই ঘটনার পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিষয়টি ফলাও করে প্রকাশ পায়। সারাদেশে নিন্দা ও ধিক্কার ঝড় ওঠে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ওই নারী ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি রমনা থানায় একটি মামলা করেন। কিন্তু বারবার সমন পাঠানোর পরও বাদী হাজির না হওয়ায় তার সাক্ষ্য নিতে পারেননি আদালত। দশ বছর পর ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট এ মামলার রায়ে সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে সব আসামি খালাস পেয়ে যায়।

জেএ/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন