ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

অগ্নিঝুঁকির তালিকায় ভিকারুননিসা-ইস্ট ওয়েস্ট-ইউল্যাব

প্রকাশিত: ০৭:৪৬ এএম, ১২ এপ্রিল ২০১৭

ভবনের উচ্চতা আর শিক্ষার্থীদের তুলনায় নেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলো চালনার ধারণা নেই। এ ধরনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই-বাছাই করে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর।

তালিকায় রয়েছে নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), আহসানউল্লাহসহ প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ক্যামব্রিয়ানের মতো স্বনামধন্য স্কুল-কলেজও।

সম্প্রতি ঢাকা শহরের ৯৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানগুলোর মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারী জনসংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, স্মোক হিট ডিটেক্টর, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি (ইমার্জেন্সি এক্সিট), লিফটের অবস্থানের মতো বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ৯৪টি ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৮২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

Incert

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তীব্রমাত্রার অগ্নিঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান আধুনিক ও যুগোপযোগী কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এ তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তা মারিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, মাইলস্টোন কলেজ ও মাস্টার মাইন্ড স্কুল উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকার মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। এসব প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও ভবনে অবস্থানরত শিক্ষার্থী ও স্টাফদের তুলনায় যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত নয়।

Incert

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জাগো নিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন করে রিপোর্ট ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরামর্শ বাস্তবায়নের জন্য এক মাসের সময় দেয়া হয়েছে। অনেকে আমাদের কাছ থেকে আরও সময় চেয়ে নিয়েছে। আমরা তাদের সময় মঞ্জুর করেছি। তবে যারা এখনও এগুলো বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেননি তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশনে যাওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, “প্রথমে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে অবগত করা হবে। ভবনে লাল রঙ দিয়ে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিখে দেয়া হবে, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তাদের জরিমানা করা হবে। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।”

ঝুঁকির তালিকায় নাম থাকলেও ন্যূনতম কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ফায়ার-ফাইটিং যন্ত্রপাতি না কিনে তারা আগুন লাগার সম্ভাব্য পয়েন্টগুলো মেরামত করেছেন। আগুন লাগলে করণীয় বিষয়ে শিক্ষার্থীরাও কিছুই জানে না।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দুই শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশ করা হলো না) জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ আগুন লাগলে করণীয় বিষয়ে আমাদের কিছুই জানায়নি। এমনকি অগ্নি প্রতিরোধে তেমন কোনো যন্ত্রপাতিও আমাদের চোখে পড়েনি।’

risk

এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুন লাগার যে কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে আমরা ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে সেগুলো নিরাপদ রাখার কাজ করেছি। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যদি আমাদের কোনো গাইডবই সরবরাহ করা হতো তাহলে আমরা সেগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করতাম। তাদের আরও বেশি সচেতন করতে পারতাম।’

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর এ এস এম সালাহউদ্দীন এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের অফিসাররা এসে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। আমরা তাদের তথ্য দিয়েছি। তারা পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আমাদের নাম আছে, এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তালিকাটি আমাদের দেয়া হয়নি।’

‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। নির্দিষ্ট স্থানে বালু, পানিও রয়েছে’- বলেন তিনি।

risk

জানতে চাইলে ইউল্যাবের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (সিকিউরিটি) এস এম হুমায়ন কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ধানমন্ডি ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন। তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সোমবারও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকাভুক্তির বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।’

‘ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্টে তাদের অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন- ২০০৩ মোতাবেক অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়’ বলেও জানান তিনি।

তবে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ধানমন্ডির ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দুই হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৫০ জন স্টাফ ও শিক্ষকের জন্য অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও কোনো ইমার্জেন্সি এক্সিট বা জরুরি নির্গমন পথ নেই। ভবনের বেজমেন্টে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা থাকলেও জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এমন ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউই জানেন না আগুন লাগলে তারা কী করবেন?

Incert

সরেজমিন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি পরিদর্শনে তাদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা প্রায় দৃশ্যমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আগুন লাগলে কী করণীয় সে বিষয়ে জানেন। তবে ভবনের আয়তন এবং প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের তুলনায় তাদের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি তুলনামূলক কম। সেগুলো আবার দূরে দূরে অবস্থিত। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি এক হাজার বর্গফুটের জন্য একটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানোর পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় থাকা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) এস এম মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইস্ট ওয়েস্টে কয়েকদিন পরপরই নিজস্ব মহড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’

সরেজমিন ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির তেজগাঁও ক্যাম্পাস পরিদর্শন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জাগো নিউজের কথা হয়। বিভিন্ন বিভাগের ছয় শিক্ষার্থীর কেউই জানেন না আগুন লাগলে প্রাথমিকভাবে করণীয় কী! তাদের একজন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’

risk

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আব্দুল গফুর জাগো নিউজকে বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরিদর্শন করে গেছেন কিন্তু আমাদের ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। তাদের প্রতিবেদন পেলে দেখতাম কী কারণে আমাদের ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।”

বিস্তারিত জানতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল দায়ানের সঙ্গে কথা বলার পরমার্শ দেন। তবে আব্দুল দায়ানের মোবাইল নম্বরে কয়েকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এআর/এমএআর/এআরএস/আরআইপি

আরও পড়ুন