হজ ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য
হজ ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী দিনে আরও সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আসন্ন হাব নির্বাচনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ফোরাম প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী এবং বর্তমান হাব মহাসচিব শেখ মো. আবদুল্লাহ।
হজ এজেন্সিগুলোর সার্বিক উন্নয়নে অতীতের ধারাবাহিকতায় অসমাপ্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট থাকারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন শেখ মো. আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হলে পরবর্তী সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে প্রথমে সিনিয়র, সাবেক হজ এজেন্সির নেতা ও মালিক এবং সরকারের সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে হজ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সচেষ্ট থাকব।’
আগামী ২০ এপ্রিল হাব’র (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন (২০১৭-১৯)। নির্বাচনে হাব গণতান্ত্রিক ফোরামের প্যানেল প্রার্থীদের পরিচয়সহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে রোববার কথা বলেন সভাপতি প্রার্থী শেখ মো. আবদুল্লাহ।
নির্বাচনে শেখ মো. আবদুল্লাহর নেতৃত্বে হাব গণতান্ত্রিক ফোরাম, সাবেক সভাপতি জামালউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে হাব সমন্বয় পরিষদ এবং আবদুস ছোবহান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হাব গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মোট ৫৪টি পদের বিপরীতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৭ জন, ঢাকা বিভাগ থেকে ১৩ জন, চট্টগ্রাম থেকে সাতজন এবং সিলেট থেকে সাতজনকে নির্বাচিত করা হবে। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ১৫৭ জন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ মো. আবদুল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, ইতিপূর্বে তিনি একাধিকবার যুগ্ম মহাসচিব ও মহাসচিব হিসেবে হাবকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে হাব সদস্যদের উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন।
তিনি জানান, কাজ করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে ভুলত্রুটি হয়নি- এমনটি দাবি করব না। কিন্তু সেটি পুঁজি করে কেউ কেউ মিথ্যাচার করছে। ছোটখাটো ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আসন্ন ২০ এপ্রিলের নির্বাচনে তাকে জয়ী করতে ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
শেখ মো. আবদুল্লাহ জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন গত বছর থেকে চালু হয়। সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি এজেন্সি সর্বোচ্চ দেড়শ জনের নিবন্ধন করতে পারবে। অর্থাৎ চলতি বছর বৈধ লাইসেন্সধারী প্রায় এক হাজার ১৫৭টি এজেন্সির প্রত্যেকটি দেড়শ জনের নিবন্ধনের সুযোগ পাবে। সে হিসাবে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৭৩ হাজার ৫০০।
এছাড়া গত বছর প্রাক-নিবন্ধন করে যেতে পারেননি ৪০ হাজার। সব মিলিয়ে এবার হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লক্ষাধিকের অধিক। কিন্তু চলতি বছর কোটা বরাদ্দ রয়েছে মাত্র এক লাখ ২৮ হাজার জনের। ফলে গত বছরের প্রাক-নিবন্ধনের ৪০ হাজার বাদ দিলে চলতি বছর অবশিষ্ট থাকে ৮৮ হাজার। তদোপরি প্রাক-নিবন্ধনে সার্ভার জটিলতায় মাত্র ৩৪৬টি এজেন্সি দেড়শ জনের কোটা পূরণ করতে সমর্থ হয়। বাকি ৭৫৮টি এজেন্সি সার্ভার জটিলতায় কাঙ্খিত মাত্রায় প্রাক-নিবন্ধন করতে পারেনি।
শেখ আবদুল্লাহ জানান, প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনে সমতার ভিত্তিতে এজেন্সিগুলোর মধ্যে কোটা বণ্টন করে না দিলে প্রতি বছরই এ সমস্যা থেকে যাবে। কোনো একটি এজেন্সি এক বছর হজযাত্রী না পেলে সারা বছর অফিস স্টাফসহ সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা তাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়বে। এ কারণে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সিকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কীভাবে হজ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি মুসলিম দেশ থেকে সৌদি আরবে হজ পালনের সুযোগ দেয়া হয়। সে হিসাবে মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পান। এ বছর সৌদি কোটা অনুযায়ী এক লাখ ২৮ হাজার হজ পালন করতে পারবেন।
পুরনো আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য এ বরাদ্দ দিয়েছে সৌদি সরকার। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালালে আরও ৫০ হাজার মানুষের পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দায়িত্ব পালনকালে হাবের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি জানান, আগামী দুই বছরের মধ্যে হাবের প্রত্যেক সদস্যকে মাত্র ১৫-২০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট প্রদান করা হবে। গত দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে সংস্থাটির জন্য জমি ক্রয় করা হয়েছে।
মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপালনকালে ফেরত পদ্ধতি পুনর্বহাল করা হয়েছে। নামমাত্র অর্থ নিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করলেও বর্তমানে হাবের স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদের মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। হজ এজেন্সিকে আগে রিপ্লেসমেন্টের টাকা ফেরত পেতে সমস্যায় পড়তে হতো। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ায় এখন বিনা হয়রানিতে টাকা ফেরত পাচ্ছে এজেন্সিগুলো- জানান শেখ আবদুল্লাহ।
এছাড়া মহাসচিব থাকাবস্থায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, মিসর ও শ্রীলঙ্কায় হাব’র পক্ষ থেকে সফলভাবে সম্মেলন করতে সক্ষম হয়েছি বলেও জানান আসন্ন হাব কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের সভাপতি প্রার্থী।
এমইউ/এমএআর/আরআইপি