বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘সুখবর’
আসন্ন রমজানে বেশি চাহিদার সব ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ দেশে রয়েছে বলে দাবি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় চাহিদা অনুযায়ী ভোগ্যপণ্যের জোগান দেয়া সম্ভব হবে বলে মূল্য পরিস্থিতিও স্বাভাবিক থাকবে। ভোক্তাদের জন্য এ সুখবর দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ভোক্তাদের জন্য এ সুখবর দিয়ে আরও বলা হয়, রমজানের চাহিদাকে পুঁজি করে কেউ যাতে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজারের দিকে গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ্ম নজরদারি থাকবে।
এছাড়া সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) মাধ্যমে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হবে বলে জনিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু।
তিনি বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে অন্যান্য বারের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি চলছে। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মজুদ বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া টিসিবিতে প্রয়োজন মতো পণ্য মজুদ রাখা হচ্ছে। কোনো রকম সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার কোনো ধরনের কারসাজির সুযোগ নেই। কারণ যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আনতে হয় সেসব পণ্য এবার বেশি বেশি আমদানি করে মজুদ করা হচ্ছে।’
রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো দিকনির্দেশনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিবারই রমজান উপলক্ষে আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসি। তাদের সমস্যার কথা শুনি। বাজার পরিস্থিতি দেখি এবং সে অনুযায়ী দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকি। এবারও সে রকম হবে।’
জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেল, লবণ ও চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসছে রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও পণ্য আমদানির পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। এরই মধ্যে বেড়ে গেছে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও ডালের দাম। উৎপাদন মৌসুম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকলেও রসুনের দাম নিয়ন্ত্রণহীন।
ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেশনের কারণে আমদানি বেশি হওয়ার পরও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়বে না বলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে যে প্রতিশ্রুতি দেন, পরবর্তীতে তা আর রক্ষা করা হয় না। এজন্য দুর্বল বাজার তদারকি এবং যথাযথ আইন প্রয়োগের অভাবকে দায়ী করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার নিশ্চত করতে হলে সবার আগে জোর দিতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির ওপর। সারাদেশে ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষার বার্তা পৌঁছে দেয়া জরুরি। সেটি কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের একক প্রচেষ্টা কিংবা সক্ষমতা দিয়ে সম্ভব হবে না। সরকারের আন্তরিকতা থাকতে হবে। পাশাপাশি সুধী সমাজকেও উদ্যোগী হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকেও।’
সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। পণ্যগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং গত এক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ডজনখানেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- সয়াবিন তেল, পামতেল, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, চিনি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা ও খাবার লবণ।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বরাবরই বলে আসছেন, ভোক্তাবান্ধব সরকার ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবে। আর রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
মন্ত্রীর এ বক্তব্য ‘সরকারি ভাষ্য’ উল্লেখ করে ভোগ্যপণ্য খাতের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ে আন্তর্জাতিক বাজারের উপর ভর করে। বিশ্ববাজারে দাম বেশি হলে দেশেও পণ্যমূল্য বাড়বে। মুসলিম বিশ্বের বড় ধর্মীয় মাস রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম বাড়াতে শুধু দেশি ব্যবসায়ীরা জড়িত নন, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরাও নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেন।’
এমইউএইচ/এমএআর/পিআর