ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

অবসান ঘটছে হাজারীবাগের ৬৭ বছরের চামড়া ব্যবসার

প্রকাশিত: ০৯:৫৭ এএম, ০৩ এপ্রিল ২০১৭

আদালতের নির্দেশে আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানা বন্ধ করে দেবেন মালিকরা। গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে মালিকরা কারখানা বন্ধ করে দেয়ার কথা জানান। আর তা হলে হাজারীবাগে ৬৭ বছর ধরে চলা ট্যানারি (চামড়া) ব্যবসার অবসান ঘটবে।

ট্যানারি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নারায়ণগঞ্জে ট্যানারি কারখানার সূত্রপাত। ‘ঢাকা ট্যানারি’ নামের ওই কারখানাটি গড়ে তুলেছিলেন আর বি সাহা নামের এক ব্যবসায়ী। দানবীর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আর বি সাহা’র হাত ধরে গড়ে ওঠা ‘ঢাকা ট্যানারি’র অস্তিত্ব এখনও আছে। তবে এর মালিকানা বদল হয়েছে কয়েক দফা।

নারায়ণগঞ্জে ‘ঢাকা ট্যানারির’ কার্যক্রম চলে প্রায় তিন বছর। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্যানারি কারখানা স্থানান্তর করে ১৯৫০ সালে রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগের বর্তমান ট্যানারি অঞ্চলে আনা হয়।

‘ঢাকা ট্যানারি’র পাশাপাশি সেই সময় হাজারীবাগে কার্যক্রম শুরু করে রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করা আরও ২১টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠান। এসব ট্যানারির সবকটিই ছিল তৎকালীন পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে।

এ ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৯টির নাম জানা গেছে। এগুলো হলো- ইস্ট পাকিস্তান ক্রোম ট্যানারি বা ঢাকা হাইডেন, দিলকুশা ট্যানারি, ইস্ট বেঙ্গল ট্যানারি, পাকিস্তান ট্যানারি, এসএনএ ট্যানারি, ইউনাইটেড ট্যানারি, হাফিজ ট্যানারি, রহমানিয়া ট্যানারি, ন্যাশনাল ট্যানারি, বেঙ্গল ন্যাশনাল ট্যানারি, মাহতাব ট্যানারি, নর্থ ইস্ট ট্যানারি, ফেরদৌস ট্যানারি, বেঙ্গল কর্পোরেশন, ওরিয়ন ট্যানারি, রাজ্জাক ট্যানারি, পাইওনিয়র ট্যানারি, মাহতাব-২ এবং ওমর ট্যানারি।

বাঙালি মালিকানায় থাকা ‘ঢাকা ট্যানারি’ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করা পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ২১টিসহ মোট ২২টি প্রতিষ্ঠান দিয়ে হাজারীবাগে শুরু হওয়া ট্যানারি ধীরে ধীরে জমজমাট হয়ে ওঠে। ১৯৬৬ সালের দিকে তা বেড়ে ২০০ ছাড়িয়ে যায়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৬ সালে পাকিস্তান সরকারের অধিগ্রহণ করা ২১টি ট্যানারি বেসরকারি খাতে দিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৬ সালের পর ছোট ছোট কিছু কোম্পানি গড়ে উঠলেও বড় কোনো ট্যানারি গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে হাজারীবাগে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩০০ ট্যানারি আছে। এর মধ্যে স্বাধীনতার পর গড়ে ওঠা ট্যানারির সংখ্যা ১৫-২০টির বেশি হবে না বলে জানা গেছে।

hajaribag

ট্যানারি স্থানান্তরের বিষয়ে গত ১৩ মার্চ বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে নদীর পাশে ছিল ট্যানারি। ১৯৫০ সালে সেখান থেকে ট্যানারি সরিয়ে হাজারীবাগে আরেক নদীর পাশে দেয়া হয়। এখন তা সরিয়ে আবারও সাভারে নদীর পাশে দেয়া হয়েছে। এ ইন্ডাস্ট্রি কেন নদীর পাশে দেয়া হয়?

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে হাজারীবাগে বড়-ছোট মিলিয়ে সাড়ে ৩০০’র বেশি ট্যানারি আছে। এসব ট্যানারিতে ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। আর হাজারীবাগের ট্যানারির ওপর নির্ভর করে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের খাওয়া-পরা। এখন হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। যেহেতু আদালতের নির্দেশ আছে, সেহেতু ট্যানারি সরিয়ে নিতেই হবে। তবে হাজারীবাগের ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেলে ৫০ শতাংশ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। অনেক শ্রমিকের বেতন আটকে যাবে।

ফিনিশ লেদার (চামড়া) সরবরাহ করা রবিন এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ২৩ বছর ধরে হাজারীবাগের ট্যানারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বড় বড় কোম্পানিতে আমি ফিনিশ চামড়া সরবরাহ করি। প্রতি মাসে ৩০ হাজার স্কয়ার ফুট চামড়া সরবরাহ করি। যার মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা। হাজারীবাগের ট্যানারি বন্ধ করে দিলে আমার মতো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিপদে পড়বে। তবে গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে গিয়ে ব্যবসা করতে সমস্যা হবে না।

২৭ বছর ধরে ট্যানারি কারখানায় কাজ করা গ্রেট ইস্টার্ন ট্যানারির শ্রমিক মো. বাদল বলেন, ছোট বয়স থেকেই ট্যানারি কারখানায় কাজ করি। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হতো। এখন আর কোনো সমস্যা হয় না। হাজারীবাগের ট্যানারি নিয়ে জীবনের অনেক স্মৃতি রয়েছে। এখন তো আদালত নির্দেশ দিয়েছে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিতে হবে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি যেখানে সরিয়ে নেয়া হবে আমি সেখানেই কাজ করতে যাব।

তিনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে কলেজে পড়ে। এক ছেলে ও এক মেয়ে স্কুলে পড়ে। ট্যানারিতে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে। হাজারীবাগে কোনো রকমে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। হেমায়েতপুরে কাজ করতে হলে হাজারীবাগ থেকেই যাতায়াত করতে হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু সমস্যা হবে।’

আট বছর ধরে হাজারীবাগের ট্যানারিতে কাজ করা আইয়ুব ব্রাদার্সের শ্রমিক মো. হারুন বলেন, হেমায়েতপুরে শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা নেই। যারা কাজ করেন তারা কারখানার ভেতরেই থাকেন। এভাবে পরিবার নিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে শ্রমিকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

এমএএস/এসআই/জেডএ/এমএমএ/পিআর

আরও পড়ুন