ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পদ্মা লাইফের সিইও নিয়োগ নিয়ে ‘প্রশ্ন’

প্রকাশিত: ০৩:৪৬ এএম, ২৮ মার্চ ২০১৭

তিন বছর পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির সিইও হিসেবে চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ নিয়োগ অনুমোদন দিতে আইনের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি বলে ‘প্রশ্ন’ উঠেছে।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, বীমা পেশায় চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের মাত্র সাত বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ী বীমা কোম্পানির সিইও হতে বীমা পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে। যে কারণে সিইও হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় আইডিআরএ ২০১৫ সালে চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের সিইও নিয়োগের আবেদন বাতিল করে দেয়।

একই সঙ্গে পদ্মা লাইফের চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেক পরিচালককে এক লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকাও জরিমানা করে আইডিআরএ। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সিইও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা ও অবহেলা করায় কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার এবং পলিসিহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি বীমা আইন ২০১০ এর ৮০(৪) ধারা লঙ্ঘন হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে এ জরিমানা করা হয়।

বীমা আইনের ৮০(৪) ধারায় বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। তবে অপরিহার্য্ক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ সময় আরও তিন মাস বাড়াতে পারবে।

যোগ্যতা না থাকার অভিযোগে যে ব্যক্তির সিইও নিয়োগের আবেদন বাতিল করা হয়, দুই বছর পর সেই ব্যক্তিকেই আবার আইডিআরএ থেকে নিয়োগ অনুমোদন করায় বীমা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, কোনো বিশেষ সমঝোতার মাধ্যমে আইডিআরএ ওয়াসিউদ্দিনকে সিইও হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন করেছে।

ওয়াসিউদ্দিনকে পদ্মা লাইফের সিইও হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন সংক্রান্ত আইডিআরএ নথিতে বলা হয়েছে, পদ্মা লাইফের চেয়ারম্যান জানেয়েছেন, ওয়াসিউদ্দিন ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ (২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত বাদ দিয়ে) থেকে  মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পদের জন্য একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা এবং চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস্ ও দুটি পেশাদারি প্রতিষ্ঠানের ফেলো সদস্য। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ ও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ওয়াসিউদ্দিন ২০১০ সালে সিএফও হিসাবে পদ্মা লাইফে যোদ দিয়ে পরবর্তীতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করেন।

আইডিআরএ’র নথিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় ওয়াসিউদ্দিনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সাফল্যের জন্য প্রশংসাপত্র দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি কর্ম ও দক্ষতার সাফল্যস্বরূপ মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড থেকে প্রশংসাপত্র, সিএমএ ও আইসিএমএ-এর ফলাফলের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন।

নথিতে আরও বলা হয়, বীমা শিল্পে ওয়াসিউদ্দিনের সাত বছরের কর্ম ও অভিজ্ঞতা থাকলেও বীমা শিল্পের বাইরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তার ১৫ বছরের কর্ম-অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাছাড়া বীমা শিল্পে দক্ষ, শিক্ষিত ও সুযোগ্য মুখ্য নির্বাহীর খুবই অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াসিউদ্দিন অত্যন্ত মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি। বীমা শিল্পকে এগিয়ে নিতে এ রকম মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির প্রয়োজন। দেশীয় বীমা শিল্পের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রশংসাপত্র বিবেচনায় নিয়ে তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অনুমোদনের বিষয়ে সভা (আইডিআরএ পর্ষদ) একমত পোষণ করে।

আইডিআরএ’র অপর এক নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ থেকে পদ্মা লাইফের সিইও পদটি শূন্য ছিল। পদটি পূরণের জন্য আইডিআরএ থেকে প্রথমে ২০১৪ সালের ৫ মে একটি চিঠি দেয়া হয়।

ওই চিঠিতে সিইও নিয়োগের বিষয়ে বীমা আইন ২০১০ এর ৮০(৪) ধারার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এরপরও পদ্মা লাইফ সিইও পদ পূরণের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে।

এরপর ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর আইডিআরএ থেকে পদ্মা লাইফকে আর একটি চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে ৫ মে’র চিঠি মোতাবেক কোম্পানি সিইও নিয়োগ না করায় এবং কেন বিধি মোতাবেক সিইও নিয়োগ দেয়া হয়নি- এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

আইডিআরএ’র ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা লাইফ ১৭ ডিসেম্বর এক চিঠি দেয়। আইডিআরএকে দেয়া পদ্মা লাইফের ওই চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সিইও পদটি পূরণ করা হবে।

এরপর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি পদ্মা লাইফ থেকে সিইও হিসেবে মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে আইডিআরএকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুসারে, মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের বীমা কোম্পানির সিইও হওয়ার যোগ্যতা না থাকায় তার আবেদন বাতিল করে দেয় আইডিআরএ।

২০১৫ সালের এপ্রিলে ইলিয়াস হোসনকে সিইও হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে পদ্মা লাইফ। তবে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মতবিরোধের কারণে এ আবেদনও বাতিল হয়। ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে আইডিআরএ-তে জমা পড়া এক অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। অভিযোগে বলা হয়, ইলিয়াস হোসেন জীবন বিমা কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম করেছেন।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেন। ওই নথিতে সদস্য মো. কুদ্দুস খান তার মতামতে লেখেন, ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন তার পরিচয় জানা যায়নি। এ অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত্দ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতে কারও সিইও নিয়োগের অনুমোদন আটকে রাখা ঠিক হবে না বলেও অভিমত দেন আইডিআরএ’র এই সদস্য। এ বিষয়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি এ অভিযোগ দিয়েছে তদন্তের জন্য তাকে তলব করা যেতে পারে। তবে অভিযোগকারীকে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

আর এক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাও তার অভিমতে নথিতে ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে পদ্মা ইসলামী লাইফে সিইও হিসেবে অনুমোদ পাওয়া চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে এবং এসএমএস পাঠিয়েও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আর আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় এবং কুদ্দুস খান ও সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এমএএস/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন