ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

দীর্ঘ হচ্ছে পলাতক মানবতাবিরোধীদের তালিকা

প্রকাশিত: ০৮:১৮ পিএম, ২৫ মার্চ ২০১৭

একাত্তরের মানবাতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অর্ধশতাধিকেরও বেশি আসামি পলাতক রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। বর্তমানে ৭৫ আসামি পলাতক রয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলাতকদের মধ্যে ২২ জনের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। অন্তত ৩০ অপরাধীর মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে এমন সন্দেভাজনের তালিকায় আছেন ২৩ জনের বেশি।

সূত্র জানায়, গত সাত বছরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ২৭ মামলার রায়ে ৫৫ মানবতাবিরোধীকে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পলাতক রয়েছেন ২২ জন। আর আপিলে নিষ্পত্তির পর ছয় আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে।

তদন্ত সংস্থা বলছে, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে মানবতাবিরোধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। এরপরই ঘাপটি মারেন একাত্তরে এ ধরনের অপরাধে জড়িতরা।  

কেউ কেউ আগে থেকেই বিদেশে পালান, অনেকে তদন্ত শুরু কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পালিয়ে যান। পরে বিদেশে পালিয়ে থাকাদের ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তবে এ পর্যন্ত কাউকে দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

এমনকি তদন্তকালে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াদের গ্রেফতারে গঠিত মনিটরিং সেলও কোনো কাজে আসেনি। সম্প্রতি পলাতকদের বিচার চলাকালে একাধিকবার তদন্ত সংস্থার উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপরাধীদের মধ্যে অনেকে দেশে আত্মগোপনের রয়েছেন। আবার বিদেশে পাড়ি দেয়ার সংখ্যাও কম নয়। দীর্ঘদিন ধরে কুখ্যাত এসব রাজাকার-আলবদরদের গ্রেফতারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি পলাতকদের ধরতে সরকারের সংশ্লিষ্ট শাখা ও বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে চিঠি দিয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সংস্থার সমন্বয়ক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এম সানাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা পলাতকদের গ্রেফতার চাই। ভিকটিম ও সাক্ষীরা জবানবন্দি দিচ্ছেন, পরিশ্রম করছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটররাও। তাই পালাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে তাদের তথ্যসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। দেশে-বিদেশে পালাতকদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। 

জানা যায়, বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ তৎপরতা চলছে। তবে এখনও কাউকে আনা সম্ভব হয়নি। তাই কিছু আসামির অনুপস্থিতিতেই ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে।

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান জাগো নিউজকে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিদের গ্রেফতারের দায়িত্ব পুলিশের। এটি তদন্ত সংস্থার কাজ নয়। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কারও বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই তিনি পালিয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থা তাদের নজরদারিতে রাখার চেষ্টা করে। কেননা কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারের আবেদন করা যায় না। তার বিষয়ে খোঁজ খবর শুরু হলেই বিষয়টি তিনি কোনো না কোনোভাবে জেনে যান, আর তখনই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিদেশে পলাতকদের বিষয়ে আব্দুল হান্নান খান বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি করেছে সরকার। তারা এ নিয়ে কাজ করছে।

এদিকে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে গঠিত সেল কার্যকর ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরাতে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন হয়েছিল। ওই টাস্কফোর্স যেমন অকার্যকর ভূমিকা রেখেছিল, তেমনি দণ্ডিত পলাতক রাজাকারদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গঠিত তদারকি সেলও অকার্যকর। এ সেল শুধু কাগজে-কলমেই, তাদের কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না।

এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতার উপর জোর দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ। তিনি বলেন, বিদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতকদের ফেরাতে গঠিত সেলের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়েছে। এখানে তাদের ভূমিকাই বেশি। অপরাধীদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতার বিকল্প নেই।

চৌধুরী মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে ও আশরাফুজ্জামান অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া আরও অনেক দণ্ডিত রাজাকারও আছে বিদেশে। এসব দেশের সরকার মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। তাই এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশ’র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক মানবতাবিরোধীরা হলেন- আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আলবদর নেতা গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের আশরাফুজ্জামান খান, ফেনীর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন, নগরকান্দার সাবেক পৌর চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার, নেত্রকোনার সৈয়দ মো. হাসান আলী, কিশোরগঞ্জের রাজাকার ক্যাপ্টেন (অব.) নাসিরউদ্দিন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।

আর পিরোজপুরের আবদুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাচ্চু রাজাকার ও জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করেও গ্রেফতার করা যায়নি।

বিচার চলছে এমন ৩৬ পলাতক আসামি হলেন- জামালপুরের আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ হোসেন, আবদুল মান্নান, আবদুল বারী, হারুন ও আবুল হাশেম; হবিগঞ্জের মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া; কিশোরগঞ্জের নাসির উদ্দিন, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আযহারুল ইসলাম; যশোরের ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবুর, আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম, আবদুল খালেক মোড়ল ও মশিয়ার রহমান; সাভারের আবুল কালাম; লক্ষ্মীপুরের ইউসুফ; ঢাকার আবদুল কুদ্দুস, সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন ও জয়নাল আবেদীন এবং কক্সবাজারের মৌলভি জাকরিয়া সিকদার, অলি আহমদ, জালাল উদ্দিন, সাইফুল ওরফে সাবুল, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান, আমজাদ আলী, আবদুল মজিদ, আবদুস শুক্কুর, জাকারিয়া, মৌলভি জালাল, আবদুল আজিজ ও ইদ্রিস আলী সরদার।

পলাতক সন্দেহভাজন ৩৮ জন

ট্রাইব্যুনালে জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে অনেকগুলোর তদন্ত চলছে। এর মধ্যে পলাতকরা হলেন- নেত্রকোনার খালেক তালুকদার, কবির খান, নূর উদ্দিন, সালাম বেগ ও শেখ মো. এ মজিদ; মৌলভীবাজারের শামছুল হক, নেছার আলী, মোবারক মিয়া, ফখরুজ্জামান, আবদুস সাত্তার, খন্দকার গোলাম রব্বানী, আবদুন নূর তালুকদার, আনিস মিয়া ও আবদুল মুছাব্বির মিয়া; ময়মনসিংহের ওয়াজউদ্দিন ও কাজী বদরুজ্জামান; গাইবান্ধার সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবু সালেহ মো. আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, নাজমুল হুদা, রুহুল আমিন মঞ্জু, আবদুল লতিফ ও আবু মুছলিম মোহাম্মদ আলী; দিনাজপুরের আবদুর রহিম মিয়া; জামালপুরের বেলায়েত হোসেন, নাসির উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন; গাইবান্ধা সদরের আবদুল জব্বার মণ্ডল, জাসিজার রহমান ওরফে খোকা, আবদুল ওয়াহেদ মণ্ডল, মমতাজ আলী বেপারী, আজগর হোসেন খান ও মো. রঞ্জু মিয়া; হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মো. লিয়াকত আলী; কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী; আটপাড়ার খলিলুর রহমান এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বিএনপি নেতা কিশোরগঞ্জের ড. ওসমান ফারুক।

তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্মান্তরিতসহ মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগ রয়েছে।

এফএইচ/এমএমএ/এমএআর/আরএস

আরও পড়ুন