চাল-ডালের সঙ্গে পুড়লো ইসমাইলের স্বপ্ন
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীর মাঝে প্রায় দেড়শ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে কড়াইল বস্তি। বিশাল এ বস্তিতে বাস করে কয়েক লাখ স্বল্প আয়ের মানুষ। যাদের অধিকাংশই শ্রমিক, দিনমজুর ও গৃহকর্মী। ঘিঞ্জি ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বেড়ে উঠলেও এদের অনেকেই স্বপ্ন দেখেন বড় হওয়ার।
এমনই এক স্বপ্নবাজ কুমিল্লার মো. ইসমাইল। প্রায় ২১ বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন। অভাব-অনটনকে দূরে ঠেলে জ্ঞানের আলোই আলোকিত হতে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সরকারি তিতুমীর কলেজের বাণিজ্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইসমাইল নিজেকে শুধু জ্ঞানের আলোই আলোকিত করা নয়, নেমেছিলেন দারিদ্র্যকে জয় করার যুদ্ধেও। সে লক্ষ্যেই কড়াইল বস্তির বৌ-বাজারের মসজিদ গলিতে গড়ে তোলেন মুদি দোকান।
অনেক বড় হবেন এ স্বপ্ন নিয়ে ব্যাংক ঋণ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ধারদেনা করে দেড় মাস আগে এক বন্ধুর সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করেন ইসমাইল। সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক। বেচা-বিক্রিও চলছিল বেশ ভালো। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে খুচরা পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ছোট ছোট দোকানিদের কাছে পাইকারি চাল, ডাল, আটা, তেল, লবণসহ মুদি দোকানের সব পণ্যই সরবরাহ শুরু করেন।
সেই সঙ্গে এগোতে থাকেন স্বপ্ন পূরণের দিকে। কিন্তু বুধবার দিবাগত রাতের সর্বনাশা আগুন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে ইসমাইলের স্বপ্ন। অল্প অল্প করে দোকানটিতে ৫ লাখ টাকার ওপর পণ্য তুলে ছিলেন। এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। দোকানের টিন, কাঠসহ পুড়ে কয়লায় পরিণত হয়েছে দোকান ভর্তি চাল, ডাল, আটাসহ সব পণ্যই। সেই সঙ্গে পুড়ে গেছে ইসমাইলের স্বপ্নও।
‘ইচ্ছা ছিল অনেক বড় হওয়ার। পড়ালেখার পাশাপাশি একটা ব্যবসা করে সাবলম্বী হতে পারি এ উদ্দেশ্যে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে দেড় লাখ টাকার ঋণ এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আরও ৩ লাখ টাকা ধারদেনা করে দোকানে ৫ লাখ টাকার পণ্য তুলি। কিন্তু এখন ঋণ কিভীবে শোধ করব তা আল্লাহ-ই জানেন’ স্বপ্ন পুড়ে যাওয়ায় এভাবেই জাগো নিউজের কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন ইসমাইল।
বৃহস্পতিবার সকালে কড়াইল বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে পরিণত কড়াইল বস্তির বৌ-বাজার থেকে বাদলের ঘাট পর্যন্ত এলাকা। বৌ-বাজারে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের পোড়া স্তূপ নাড়াচাড়া করতে দেখা যায় ইসমাইলকে।
আগুন লাগা ও ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে ছলছল চোখ আর ভারি কণ্ঠে ধীরে ধীরে সব বলতে শুরু করেন ইসমাইল।
তিনি জানান, মসজিদের মাইকে রাত ২টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়েই বাসা থেকে দ্রুত দোকানে ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে দোকানের চারপাশ আগুনে ঘিরে গেছে। কোনো রকমে ৫ হাজার টাকার মতো পণ্য সরাতে পারেন। বাকি সব পণ্যই পুড়ে ছাই হয়েছে।
‘দোকানে চাল, ডাল, তেল, আটা, সুজি, তেল, জুস, আলু, পেঁয়াসসহ মুদি দোকানে যত ধরনের আইটেম থাকে তার সবই ছিল। নতুন দোকান হওয়ায় সব ধরনের পণ্যই তোলা হয়’ বলেন ইসমাইল।
ব্যাংক ঋণের বিষয়ে বলেন, দুই বছরে পরিশোধ করার শর্তে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেন। ১৫ হাজার টাকা লাভসহ প্রতি মাসে ৪ হাজার ৮০০ টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করার শর্ত দেয় ব্যাংক।
ছাত্র অবস্থায় ব্যবসা শুরু করার কারণ জানতে চাইলে ইসমাইল বলেন, উদ্দেশ্য ছিল বড় হওয়ার। পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু টাকা জোগানো, যাতে পড়াশুনা শেষে নিজের টাকায় ভালো একটি চাকরির ব্যবস্থা করা যায়।
এমএএস/এএইচ/আরআইপি