ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

৩৬৫ দিনই নারী দিবস হওয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৪:৩০ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৭

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রয়েছেন আইন পেশায়। ভাষা আন্দোলনের সময় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক অলি আহাদ এবং দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রথম নারী মহাপরিচালক রাশিদা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারীর অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সঙ্গে ছিলেন মানিক মোহাম্মদ।

জাগো নিউজ : বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদের সার্বিক অবস্থান কেমন দেখছেন?

রুমিন ফারহানা : বাংলাদেশের নারীরা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছেন। তবে যে পর্যায়ে আমরা পৌঁছাতে চাই এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি। এটা শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, পৃথিবীর যেকোনো দেশের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। মেয়েদের কাজের জায়গাগুলো মসৃণ নয়। সেটা আপনি যে পেশাই বলেন না কেন। শিক্ষকতা, ডাক্তারি, ওকালতি, রাজনীতি যেটাই বলেন, মেয়েদের জন্য প্রতিটা পেশাই ছেলেদের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। ছেলেদের একটা পর্যায়ে যেতে যতটুকু কষ্ট করতে হয়, মেয়েদের তার চেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়।

কারণ আপনাকে মাথায় রাখতে হবে সারা বিশ্বে এখনো বেশিরভাগ মেয়ে মনে করে তার প্রাথমিক এবং মূল দায়িত্ব হচ্ছে সংসার সামলানো। সেটা ক্যালিফোর্নিয়ার একটা মেয়ের জন্য যেমন সত্য, লন্ডনের একটা মেয়ের জন্য কিংবা ফ্রান্সের একটি মেয়ের জন্য তেমনই সত্য। সেখানে বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে ভিন্নতা আশা করার কিছু নেই। সুতরাং তাকে ওই জায়গাটা ঠিক রেখে সব চাহিদা পূরণ করে তারপর পেশার দিকে নজর দিতে হয়। সেই গুরুদায়িত্ব পালনের পর তার পেশায় সফলতার সঙ্গে বড় একটা অবস্থানে যাওয়া তার জন্য একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। এজন্য বলছি তার ডাবল ইফোর্ট দিতে হয়। ছেলেদের কিন্তু একটাই দায়িত্ব; পেশা কিন্তু মেয়েদের দুটো। প্রধানত তার সংসার এবং তারপর তার পেশা। পরিবার-সমাজের দাবি, বাধা এবং প্রতিবন্ধকতা একটা মেয়ের জীবনে অনেক বেশি।

জাগো নিউজ : দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপনি যুক্ত হয়েছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

রুমিন ফারহানা : বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা নারী নেতৃত্ব দেখি। দুটো দলের প্রধান নারী। সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। আবার আমাদের স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীও নারী ছিলেন। এখন স্পিকার নারী।  সুতরাং একদম চূড়ায় নারী নেতৃত্ব দেখছি আমরা। দলকে যদি পিরামিডের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে চূড়ায় আপনি নারী পাবেন কিন্তু নিচের দিকে তৃণমূলে গিয়ে নারীদের কিন্তু আর সেভাবে আমরা পাচ্ছি না। এর কারণ হচ্ছে আবারও সেই একই। অন্য পেশা যেমন চ্যালেঞ্জিং, রাজনীতি আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং নারীর জন্য।

কারণ প্রথমত. রাজনীতিটাকে আমাদের সমাজে খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয় না। সেখানে একটা মেয়ে রাজনীতি করবে এই কথাটার সঙ্গে কিন্তু আমাদের পরিবার, সমাজ, চিন্তাধারা এখনো খুব বেশি পরিচিত নয়। সেখানে মেয়েটার প্রথম বাধা হচ্ছে সে নিজে। আমি কি রাজনীতি করবো? আমি কি পারবো? কারণ রাজনীতিতো ২৪ ঘণ্টার পেশা। এখানে কোনো ঘণ্টার হিসাব নেই যে আমি ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজনীতি করলাম বাকি সময়টা আমি বাসায় থাকলাম বা আমার ফ্যামিলিকে সময় দিলাম। এটা না। রাত ৩টার সময় আপনার এলাকা থেকে ফোন আসবে। রাত ৩টার সময় একটা সমস্যা হতে পারে, যেখানে কাকডাকা ভোরে আপনাকে পৌঁছাতে হবে। সুতরাং এসব চ্যালেঞ্জ একটা নারী মোকাবেলা করতে পারবে কি না প্রথম প্রশ্ন সে তার নিজেকে করে আমি কি পারবো?

এছাড়া দলীয় বাধাতো আছেই। দল একটা ছেলেকে যেভাবে প্রমোট করে, মনে করে ছেলেটা শেষ পর্যন্ত দলকে হয়তো সার্ভিস দিয়ে যাবে। কিন্তু মেয়ের ক্ষেত্রে মনে করে বিয়ে হয়ে যাবে। হয়তো সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। বাস্তবতা অনেকটা তাই। সুতরাং মেয়েটার কাছ থেকে দল হয়তো সেরকম কিছু আশা করে না। আর করে না বলেই মেয়েটাকে দল সেভাবে সাপোর্টও দেয় না। সে কারণে দলে দেখা যাচ্ছে মেয়েরা আসলে ওইভাবে তার যোগ্যতা অনুযায়ী, মেধা অনুযায়ী, দলের প্রতি যে কমিটমেন্ট আছে সে কমিটমেন্ট অনুযায়ী সে মূল্যায়িত হয় না। এটা সব দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

Incert

জাগো নিউজ : বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে কি নারীর যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে?

রুমিন ফারহানা : আমি মনে করি বর্তমানে দলগুলোর ওপর একটা চাপ আছে। আপনারা জানেন, নতুন আইন হয়েছে- দলে সব স্তরে ন্যূনতম ৩৩ ভাগ নারী প্রতিনিধি থাকতে হবে। সুতরাং এটা কিন্তু একধরনের পরোক্ষ চাপ। দলগুলোর ওপর এ চাপ আছে। দ্বিতীয় চাপ হচ্ছে আন্তর্জাতিক। আন্তর্জাতিক মহল চায় যে দলগুলো নারীবান্ধব হোক। আন্তর্জাতিক মহল চায় নারীরা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হোক। নারীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক জায়গায় আনা হোক। সুতরাং এই চাপটাও দলগুলো উপেক্ষা করতে পারে না। এবং যে দলে দেখা যায় যে শিক্ষিত এবং পেশাজীবী নারীরা এগিয়ে আছে সে দলকে প্রোগ্রেসিভ দল হিসেবে ধরা হয়। সুতরাং এ ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ চাপের কারণেও দলগুলো অনেকখানি চেষ্টা করে নারীদের গ্রহণ করতে।

জাগো নিউজ: এই যে আপনি বলছেন নির্বাচন কমিশন থেকে চাপ বা আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ ৩৩ শতাংশ নারীকে রাখার জন্য। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এ চর্চা কতটুকু করতে পারে। ২০২০ সালের মধ্যে কি ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ করা সম্ভব হবে। আপনি কি মনে করেন?

রুমিন ফারহানা : যেটা বলছিলাম একটা মেয়ে নিজেই যদি রাজনীতিতে আসতে না চায় তখন দলগুলোর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ডিঙিয়ে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। মেয়েটিকে স্তরে স্তরে তার নিজের বাধা, পরিবারের বাধা, সমাজের বাধা ডিঙিয়ে আসতে হয়। গুটিকয়েক মেয়ে আসছে রাজনীতিতে এবং সে মেয়েদের মধ্য থেকে আপনাকে ‘আমি মেয়ে’ এটুকুই যোগ্যতা হলে হবে না। সঙ্গে আপনার আরো কিছু বিষয় আছে। কোনো যোগ্যতা যদি সে রকম না থাকে, আপনি মেয়ে এবং রাজনীতি করতে চান, ইচ্ছা আছে এটুকুই যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক যা যা দরকার সেগুলো যদি না থাকে তাহলে দলের একক ইচ্ছায় বা একক প্রচেষ্টায় শুধু আইন চাইছে বলেই ৩৩ শতাংশ নারী আপনি পেয়ে যাবেন সেটা হবে না। এখানে একটা যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজন আছে। যোগ্য মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে আবার দলকেও এগিয়ে আসতে হবে।

জাগো নিউজ : দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারীর উপস্থিতি পূরণ হবে নাকি এ নিয়ম কাগজে-কলমেই থেকে যাবে?

রুমিন ফারহানা :  ২০২০ সালের মধ্যে যদি নাও হয় এটা ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই হবে।

জাগো নিউজ:  আপনি না হওয়ারও সম্ভাবনার কথা বলছেন?

রুমিন ফারহানা : পরিসংখ্যান কিন্তু আশঙ্কা তৈরি করে। একটি দলে বর্তমানে মনে হয় ১৩ শতাংশ নারী আরেকটি দলে ১৫-১৬ শতাংশ নারী। সুতরাং হঠাৎ করে ৩৩ এ উঠে যাওয়াটা তো মুখের কথা নয়। আমি ৪৫ বছরে যদি ১৩ তে আসি তাহলে কীভাবে ৩ বছরে ৩৩ এ যাব?

জাগো নিউজ:  বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতিগুলোর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে?

রুমিন ফারহানা : আমার মনে হয় চেষ্টা ছিল। আমি আমার নিজের দলের কথা বলতে পারি; এখানে যে নতুন কমিটি হয়েছে বড় কমিটি হয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু এই কমিটির মধ্যে আপনি যেরকম বিভিন্ন পেশার মানুষের সমন্বয় দেখতে পাবেন আবার মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি সেটাও একটা বড় দিক। এর প্রতিটি স্টেপ আমি বলবো পজেটিভ। নতুন ছেলেমেয়ে এসেছে। এবং মেয়েরা এসেছে আগের তুলনায় বেশিসংখ্যক। বেশ বড় পদে মেয়েরা এসেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতায় দল তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার সাক্ষর রেখেছে।

জাগো নিউজ : আপনি রাজনীতিতে নারীদের চ্যালেঞ্জের কথা বললেন। ব্যক্তিগতভাবে আপনি রাজনীতিতে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন?

রুমিন ফারহানা : আমি আমার নিজেকে সবসময় সৌভাগ্যবান মনে করি। কারণ আমি এমন একটা পরিবারে জন্ম নিয়েছি, যে পরিবারে কখনো কোনো কাজে আমাকে বাধা দেয়া হয়নি। খুব শক্ত একটি পারিবারিক সমর্থন আমি আমার জীবনের শুরু থেকে প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে পেয়ে এসেছি। আমি এমন একটা সমাজে বড় হয়েছি, আমার সার্কেলটা এমন ছিল যেখানে আমাদের প্রথাগত যে বাধাগুলোর কথা বলা হয় বা শুনি তার মুখোমুখি আমি সে অর্থে হইনি। সবকিছু মিলিয়ে আমার জন্য পথটা কিন্তু তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল। এটা স্বীকার করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু আমার মতো আরো যারা রাজনীতিতে এসেছেন, তাদের হয়তো সেরকম পারিবারিক রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই; তারা কিন্তু একক প্রচেষ্টায় এবং অনেক কষ্ট করে অনেক লড়াই করে এসেছেন। যেই যুদ্ধটা হয়তো আমার জন্য অতটা কঠিন ছিল না। কিন্তু তারপরও হয়তো বা আমার জায়গায় একটা ছেলে যদি থাকত আরো অন্যভাবে মূল্যায়িত হতো। আমি জানি না।

জাগো নিউজ : কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন হচ্ছে, কিন্তু এ দিবস পালনের প্রভাব বাংলাদেশের সমাজে কতটুকু পড়েছে?

রুমিন ফারহানা:  আমি মনে করি দিবসভিত্তিক কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। আপনি একটা দিবসেই শুধু নারীর উন্নয়নের কথা বলবেন, একটি দিবসেই শুধু নারীর অগ্রযাত্রার কথা বলবেন, একটি দিবসেই শুধু নারীকে উজ্জীবিত করার জন্য ভাষণ দেবেন, স্লোগান দেবেন, তার ত্যাগ আর অবদানকে স্মরণ করবেন আর বাকি ৩৬৪ দিন এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্যই থাকবে না, তাহলে এই একটি দিবস দিয়ে তার কোনো ইমপ্যাক্ট মনে হয় না সমাজে থাকবে। আমার মনে হয় ৩৬৫ দিনই নারী দিবস হওয়া উচিত।

farhana

জাগো নিউজ: আপনি রাজনীতিতে দুই চূড়ার কথা বলেছেন, এক চুড়ায় আছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্য চূড়ায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই দুই নেত্রীকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? দুজনের রাজনৈতিক জায়গাটা কীভাবে দেখছেন?

রুমিন ফারহানা : একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা এবং অবদান অনস্বীকার্য। তবে আমি বলবো যে, দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ একটা গণতন্ত্রহীন চাপা দম বন্ধকরা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মানবাধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই, সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে, লুটপাটের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আমি আশা করবো আমাদের এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন তিনি এ বিষয়গুলোতে নজর দেবেন। কারণ এ বিষয়গুলো শুধু জাতীয়ভাবেই নয় আন্তর্জাতিকভাবেও সমালোচিত হচ্ছে। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর পর তার দলকে ক্ষমতায় নিতে পেরেছিলেন। সুতরাং তার যোগ্যতা দক্ষতা তার মেধাকে ছোট করে বা খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।

আপনি যদি আমার নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করনে তাহলে বলবো তিনি ৩৩ বছর বয়সে স্বামী হারিয়েছেন। তারপর থেকেই একাই পথ চলছেন। সেই চলা কিন্তু আজও শেষ হয়নি। ১০ বছর তাকে আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে দেখেছি। সেই আপসহীনতা আজ এত বছর পরে ২০১৭ সালেও কিন্তু একই রকম দেখি। আপনারা দেখেছেন দীর্ঘসময় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় তার ওপর নানা রকম নির্যাতন নিপীড়ন নেমে এসেছে। একটির পর একটি মামলা দেয়া হয়েছে এবং তাকে যেভাবে কোর্টে হাজিরা দিতে হয় বাংলাদেশে আর কোনো সরকারপ্রধানকে এভাবে হেনস্থা করা হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে তার যে জায়গাটা তিনি নিজে তৈরি করে নিয়েছেন সেই জায়গাটাতে আর কোনো নেতা নেত্রী কখনো যেতে পারবেন কি না সেটা সময়ই বলবে।

জাগো নিউজ : দেশের রাজনৈতিক মহলে আপনি সুপরিচিত মুখ, আপনাকে অনুসরণ করে যারা রাজনীতি করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন?

রুমিন ফারহানা:  আমি বলবো, প্রথম কথাই হচ্ছে কমিটমেন্ট। আমি রাজনীতি করতে চাই, কেন চাই এটা আগে আমাকে ঠিক করতে হবে। অনেকে মনে করে রাজনীতিটা এখন সোজা পথে টাকা বানানোর একটা রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে। সরকারি দলের সঙ্গে থাকলেন, কোন অঙ্গ সংগঠনের ছোটখাট একটা পদ পেলেন, তারপর শুরু হলো আপনার টেন্ডারবাজি। আমি যতদূর জানি, একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছাত্রলীগের বা যুবলীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একটা নেতার মাসে ইনকাম তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। সুতরাং অনেকে মনে করে এটা এক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট। একটা ব্যবসার মতো। যদি এটা হয় তাহলে আমি বলবো আপনি অন্তত দেশের স্বার্থে জনগণের কথা চিন্তা করে আপনি রাজনীতিতে আসবেন না। দয়া করে আসবেন না। কারণ এই ক্ষেত্রটা আসলে আপনার জন্য নয়। এটা যথেষ্ট বিষাক্ত হয়েছে। আপনি এখানে ঢুকে আর বিষাক্ত করবেন না। আর যদি আপনি মনে করেন আপনি মানুষকে কিছু দিতে চান তাহলে আগে আপনার নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতির একটা বিরাট অংশ জুড়ে আছে পড়াশুনা। আমাদের যে ইতিহাস তা জানতে হবে।

দ্বিতীয়ত. রাজনীতিতে আসা মানে পুরো সময়টা সুখকর নয়। আপনাকে নানা রকম চড়াই উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আপনার দল যেটুকু সময় ক্ষমতায় থাকবে বা ক্ষমতায় যাবে সেটুকু সময় হয়তো আপনার পথটা খুব বেশি কঠিন হবে না কিন্তু পরবর্তীতে যখন আপনি ক্ষমতা থেকে সরে যাবেন এবং অন্য দল আসবে তখন কিন্তু আপনার জীবনটা অত্যন্ত কঠিন। মামলা হামলা বলেন চারদিকে এক ধরনের বৈরি পরিবেশ লক্ষ্য করবেন। তো সেই সময়টার জন্য মানসিককভাবে একটা প্রস্তুতি আপনার থাকতে হবে। মূলত ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণ ও দেশের কল্যাণ চিন্তা, ত্যাগের মানসিকতা, সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন এবং লক্ষ্য অর্জনের দৃঢ়তা আর সাহস যদি থাকে তবেই রাজনীতিতে আসা উচিত। আদর্শের জায়গায় স্বচ্ছতা আর আপসহীনতা খুব জরুরি।

জাগো নিউজ: রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?

রুমিন ফারহানা : আমি আশা করবো তারা যথেষ্ট সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখাবেন এবং নারীকে শুধু নারী হিসেবে না দেখে নারীকে একজন কর্মী হিসেবে, একজন নেত্রী হিসেবে দেখবেন। একজন নারীর মেধা, যোগ্যতা, দল ও আদর্শের প্রতি তার যে অঙ্গীকার আছে সেই জায়গাগুলোকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবেন এবং সেই জায়গাগুলোতে তার মূল্যায়ন করবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।

এমএম/এআরএস/এমএস