ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘ডিসকো’ অনিক
উত্তরার ‘নাইন স্টার’ গ্রুপের আদনান কবির হত্যার এজাহার নামীয় প্রধান আসামি নাইমুর রহমান অনিক ওরফে ডিসকো অনিক এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এছাড়া এজাহার নামীয় আরও চার যুবককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে থানা পুলিশ বলছে, অনিক গা ঢাকা দিয়েছে। তাকে ধরতে নিয়মিত গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে প্রতিপক্ষ। চিকিৎসার জন্য তাকে উত্তরার লুবানা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনার পর জানা যায়, উত্তরায় ‘গ্যাং-কালচার’ নিয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে স্থানীয় কিশোরদের একটি অংশ। ‘নাইন স্টার’, ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস’ নামের গ্রুপে সক্রিয় এসব কিশোর শুরুতে মূলত ‘পার্টি’ করা, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালানো এবং রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কাজে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যার সর্বশেষ শিকার উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, আদনান হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে থানা পুলিশ ও র্যাব বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে সোহাগ (১৯), মো. রনি মৃধা (২২), খন্দকার মেহরাব (১৫), সাদাফ জাকির (১৬), নাফিজ মো. আলম ডন, সাফিন হোসাইন ও হাসিবুল হক শিশির–সহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার আটজন হলেন- ‘ডিসকো বয়েজ’র দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে রায়হান আহমেদ সেতু ওরফে ডিসকো সেতু (২২), ‘বিগবস’ গ্রুপের দলনেতা মো. আক্তারুজ্জামান ছোটন (১৯), শাহীনুর রহমান (১৭), রমজান মোবারক (১৭), সেলিম খান (২৩), ইব্রাহিম হোসেন ওরফে সানি (২৮), মিজানুর রহমান সুমন (২২) ও জাহিদুল ইসলাম জুইস (২১)।
র্যাব ওই সময় জানিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরার একাধিক গ্যাংয়ের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কোন্দল চলছিল। এরই জেরে ‘নাইন স্টার’ গ্রুপের নেতা ‘তালাচাবি’ রাজুকে হত্যা করতে চেয়েছিল ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস’ গ্যাংয়ের সদস্যরা। তবে তাকে না পেয়ে সেই দলের আদনান কবিরকে আঘাত করে হত্যা করে তারা।
র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, টার্গেট রাজু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে ওই দুই গ্রুপের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে ‘নাইন স্টার’ গ্রুপের সদস্য আদনান কবিরকে আঘাত করে। এতেই তার মৃত্যু হয়। জুইস সরাসরি আদনানকে আঘাত করে আর বাকিরা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।
মুফতি মাহমুদ খান জানান, ‘বিগবস’ গ্রুপটি ‘ডিসকো বয়েজ’র সহযোগী হিসেবে কাজ করে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ‘নাইন স্টার’ গ্রুপ ও ‘ডিসকো বয়েজ’ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ৩ জানুয়ারি উত্তরার ১৩নং সেক্টরের ব্রিজের উপর ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস’ গ্রুপের সদস্যরা ‘নাইন স্টার’ গ্রুপের দলনেতা রাজুকে মারধর করে। এর জবাবে ৫ জানুয়ারি আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের গোড়ায় ‘নাইন স্টার’ গ্রুপের সদস্যরা ‘বিগবস গ্রুপ’র ছোটনের উপর হামলা চালায়। এরপর থেকে রাজুকে হত্যার পরিকল্পনা করে ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস’ গ্রুপের সদস্যরা। তবে রাজু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে আদনানের উপর তার ঝাল মেটানো হয়।
পলাতক প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের বিষয়ে উত্তরা (পশ্চিম) থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী হোসেন খান ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, ‘ওই হত্যার ঘটনায় রবিউল ইসলাম ও জিয়ান নামে এজাহার নামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রেফতার ১৬ জন। এর মধ্যে নয়জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি ডিসকো অনিকসহ বাকি দুই আসামিকে গ্রেফতারে নিয়মিত গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তরা এলাকায় পরিচালিত গ্যাংগুলো মূলত ‘পার্টি’ বা ফুর্তির আয়োজন করে, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে দাপট দেখায়। এদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের পরিবারের সন্তান ও স্কুলছাত্র। নিম্ন মধ্যবিত্তের ও লেখাপড়া না করা কিশোর-তরুণও গ্যাংগুলোতে সক্রিয়। তবে গ্যাংপ্রধানের বয়স কুড়ি-বাইশ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ‘নাইন স্টার’ গ্রুপের (ফেসবুক আইডি—নাইনএমএম বয়েজ) প্রধান রাজুর বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার বাবা একসময় তালাচাবি সারাতেন। রাজু নিজেও বাবার সঙ্গে কিছুদিন একই কাজ করেছেন। তাই তার নাম হয়ে যায় ‘তালাচাবি রাজু’।
জেইউ/এমএআর/জেআইএম