তিন প্রজন্মের ‘ভয়েস অব ইন্টার্নস’ একাট্টা হয়ে আন্দোলনে নেমেছে
সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তিন প্রজন্মের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা একাট্টা হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) চিকিৎসকদের ইন্টার্ন স্থগিতাদেশ বাতিল ও দৃশ্যমান নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত এ তিন প্রজন্মের ইন্টান চিকিৎসকরা শনিবার থেকে সাময়িক কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে। দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে ইন্টার্নরা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বৈঠক করে ভয়েস অব ইন্টার্নস গঠন ও আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে শনিবার থেকে ১১ মেডিকেল কলেজে কর্মবিরতি শুরু হয়।
মেডিকেলগুলো হলো- স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে সিরাজগঞ্জের এক রোগীর স্বজনদের মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই চার ইন্টার্নের ইন্টার্নশিপ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে। পরে তাদের বিভিন্ন মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ শেষ করার কথা বলা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইন্টার্নসহ সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক ও বর্তমান চিকিৎসকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলে। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতারা এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করায় তারা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী শনিবার বিএসএমএমইউতে ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক কনফারেন্স লিভারকন ২০১৭ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘটনার অধিকতর তদন্ত দাবি করে বলেন, সমাজ, চিকিৎসা কর্মী ও সরকারি চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় আজ এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। জনগণ ও চিকিৎসকদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে কারা যেন ফায়দা লুটতে চায়।
তিনি বলেন, চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা কমাতে অকারণে সুপরিকল্পিতভাবে চিকিৎসকদের হেনস্থা, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং অতিরঞ্জিতভাবে তা ফলাও করে প্রচারের মাধ্যমে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। কথায় কথায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অকারণ হুমকি ও মামলা মোকদ্দমায় আমরা বিব্রত।
তিনি আরও বলেন, নেত্রকোনা, খুলনা, বগুড়া ও ফরিদপুরে সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসকদের ওপর হামলায় যারা জড়িত তারা সকলেই কোনো না কোনোভাবে নীতি-নির্ধারক কর্তৃপক্ষ মহলের সঙ্গে সম্পর্কিত।
শজিমেক হাসপাতালে সংগঠিত ঘটনায় স্থানীয়ভাবে তদন্ত না করে হঠাৎ করে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অতিদ্রুত একটি তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যে শাস্তির বিষয়টি তদন্ত কমিটি গঠনের পূর্বেই চারদিক বলা বলি হচ্ছিল। অথচ আজ পর্যন্ত সারাদেশে একটি জায়গায় ও চিকিৎসকের ওপর ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে হামলার কোনো তদন্ত কিংবা বিচারের লক্ষণ দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও সহনশীল ও ধৈর্য্য-সতর্কতার সহিত পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খেয়াল রাখবেন চক্রান্তকারী মহল যেন ফায়দা লুটতে না পারে।
এমইউ/এএইচ