জিহাদকে কোথায় বিক্রি করেছিস? বাবার কাছে পুলিশের প্রশ্ন
জিহাদকে উদ্ধারের ‘আলোচিত’ ২৩ ঘণ্টার বিষয়ে অনেকেই জানে। তবে সেদিন রাতে জিহাদের বাবা নাসির ফকিরের ওপর যে ঝড় বয়েছিল তা অনেকেরই অজানা। শীতের রাতে শাহজাহানপুর থানায় নিয়ে সারারাত বসিয়ে রাখা হয় তাকে। প্রশ্ন করা হয়, ‘কোথায় লুকিয়েছিস ছেলেকে?’।
জিহাদের মৃত্যুর রায় ঘোষণার একদিন আগে জাগো নিউজের কাছে সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতির কথা জানান নাসির ফকির।
ঘটনার দিন রাত ২টার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ফায়ার সার্ভিস জিহাদকে উদ্ধারে পাইপের ভেতর ক্যামেরা পাঠায়। কিন্তু ক্যামেরার ফুটেজে শুধু টিকটিকি আর পোকা-মাকড়ের ছবি দেখে জিহাদের বাবার ওপর চড়াও হয় পুলিশ। তাদের সন্দেহ ছিল কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে জিহাদকে লুকিয়ে হাঙ্গামা করছেন তিনি।
রাত ৩টায় হঠাৎ করেই তাকে আটক করে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। একথা শুনে স্থানীয় কয়েকজন এবং সাংবাদিকরা ছুটে যান থানায়। কিন্তু সেখানে পাওয়া যায় না নাসিরকে।
সেই রাতের বর্ণনায় নাসির জানান, যখন জিহাদের জন্য কান্নাকাটি করছিলাম তখন পুলিশের এক দারোগা আমাকে ধরে নিয়ে যান। থানায় পেছনে একটি রুমে রাখে। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ‘বাচ্চা কই লুকাইয়া রাখছিস? নানির বাসায় পাঠাইসোস নাকি বেইচ্চা ফালাইসোস?’ সত্যি কথা না বললে ক্রসফায়ারের হুমকিও দেয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
নাসির ফকির জাগো নিউজকে বলেন, ‘দারোগা সাহেব একপর্যায়ে বললেন, ভেতরে পোকা-মাকড় ছাড়া কিছুই নাই। সত্যি সত্যি বল ছেলে কই, না হইলে একদম ক্রসফায়ার দিমু। ’
জিহাদকে পাইপ থেকে উদ্ধারের পর তার বাবাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। শীতের রাতে টানা ১২ ঘণ্টা থানার পাশের একটি কক্ষে কাটানো ওই রাত কখনোই ভুলবেন না বলে জানান নাসির ফকির।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর শাহজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় সাড়ে তিন বছর বয়সী জিহাদ। পরদিন বিকেল ৩টায় এক যুবকের তৈরি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় জিহাদকে। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা জিহাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় জিহাদের বাবা নাসির ফকির ‘দায়িত্বে অবহেলায়’ মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। এতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআর হাউসের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম, রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জাফর আহমেদ ও সহকারী প্রকৌশলী দীপক কুমার ভৌমিককে আসামি করা হয়। রোববার এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এআর/জেএ/এএইচ/এমএস