ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

৩৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দফায় দফায় আলটিমেটামের পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

সূত্র জানায়, পাঁচ দফা সময় দিয়েও ৩৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পত্র দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের জরুরি বৈঠকের কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ বৈঠকের তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
 
সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্ধারিত (চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত) সময়ের মধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ, নতুন কোর্স কারিকুলাম অনুমোদন না দেয়া এবং শিক্ষার্থী ভর্তিতে সতর্কতা জারি হতে পারে।  
 
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক সময় দিয়েছি। এবার ব্যবস্থা নেয়ার পালা। কী ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো পত্রে বলা হয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ প্রতিবেদনসহ করণীয় ঠিক করতে একটি সমন্বয় সভা জরুরি। তা করতে শিক্ষামন্ত্রী আগ্রহী।

সূত্র জানায়, তিন ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি যেগুলো জমি কেনেনি। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে আলটিমেটাম দেয়া হয়েছিল। আলটিমেটামে বলা হয়েছিল, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা হবে।

জমি কিনেছে এবং ভবন নির্মাণাধীন এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে রাখা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। সতর্কবার্তা আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল।

তৃতীয় ক্যাটাগরিতে ছিল জমি কিনেছে কিন্তু ভবনের কাজ শুরু করেনি। ভবনের নকশা অনুমোদনসহ অন্য কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়কে নোটিশ দেয়া হয়। তাতে এক বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের পাশাপাশি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থার কথা বলা হয়। 

এদিকে ৩৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক পক্ষ একট্টা হয়ে আরও সময় চায় বলে সূত্র জানিয়েছে। এজন্য তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাপ করছেন। কেউ কেউ সরকারের কাছে জমিও চাচ্ছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে তারা দুই দফায় শিক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে পত্রও দিয়েছেন। তবে সাক্ষাৎ দেননি মন্ত্রী।

ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি এবং ইবাইস ইউনিভার্সিটি জমি কেনেনি। এছাড়া ইবাইস, প্রিমিয়ার ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মালিকানায় দ্বন্দ্ব আছে। আলটিমেটাম অনুযায়ী, এ চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হতে পারে।

নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণ করছে এমন ক্যাটাগরিতে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ক্যাটাগরিতে তিন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ১১টির কাজ নির্মাণাধীন। পাশাপাশি আংশিক শিক্ষা কার্যক্রমও স্থানান্তর করেছে। এগুলো হচ্ছে- আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি), নর্দান ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অব সায়েন্স, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। তবে শেষটির বিরুদ্ধে শিক্ষা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

নির্ধারিত পরিমাণ জমি কিনে ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে। কিন্তু কার্যক্রম চালু করেনি এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি ও প্রাইম ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে প্রাইম এবং সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি  নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে ক্যাম্পাস করছে।

জমি কিনেছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি, অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয় এমন ১০ বিশ্ববিদ্যালয় হলো- স্টেট ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, স্টামফোর্ড অন্যতম। এ ক্যাটাগরিতে ব্র্যাক, শান্ত-মারিয়াম এবং সাউথইস্ট ও মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি আছে বলেও জানান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া কেন বন্ধ করা হবে না মর্মে শোকজ নোটিশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

প্রাইম ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে।

এছাড়া গত বছর দেয়া আলটিমেটামের সময় সাউথইস্ট এবং মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডেশনের নামে জমি ছিল। এক বছর পরও ফাউন্ডেশনের নামের জমিতেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্থানান্তর করেনি। এ দুই বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়েছি। যারা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টির কার্যক্রম চালু, বাকিরা অনুমোদন পেলেও কার্যক্রম শুরু করেনি।

এমআরএম/এএইচ/জেআইএম

আরও পড়ুন