ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পদ্মা সেতু নিয়ে হার্ড লাইনে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১১:২৬ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি কেলেঙ্কারি অভিযোগের জবাব দিতে হার্ড লাইনে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ইতোমধ্যে এক বিলিয়ন ডলার (৮ হাজার কোটি টাকা) জরিমানা দাবি করেছে বিশ্বব্যাংকের কাছে। এছাড়া পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ।

কেন তারা সরকারের এবং পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করলো এ বিষয়টিও জানতে চাইবে আওয়ামী লীগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বিষয়ে প্রয়োজনে তারা রাজপথে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে শুধু মন্ত্রী, সচিব বা অন্য কর্মকর্তারাই নন, আমার ছেলে-মেয়েকেও হ্যারেজমেন্ট করা হয়েছে।’

পদ্মা সেতুর দুর্নীতি কেলেঙ্কারি প্রমাণিত না হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা গত কয়েকদিন সংসদসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে যে দুর্নীতি হয়নি, এ বিষয়টি তারা বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা না করলেও পদ্মা সেতুর দুর্নীতি কেলেঙ্কারি নিয়ে যারা উসকানি দিয়েছে, যাদের কারণে একজন সচিবকে জেল খাটতে হয়েছে, সেই নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে নেপথ্যে থেকে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সুনাম নষ্ট করেছে, মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যারা হেয় করেছে; তাদের মুখোশ উম্মোচন করা হবে সমাজের কাছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আইনি কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। তবে এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের মামলা করা ঠিক হবে না। কারণ তারা আমাদের উন্নয়ন সংস্থা।   

এদিকে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারী কে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার জন্য কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিশন গঠনের বিষয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলেছেন আদালত।

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। সকালে ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের কাছে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়নে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে নির্মাণ কাজে যে বিলম্ব হয়েছে তাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে ক্ষতিপূরণে বিশ্বব্যাংকের ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কানাডার আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় বিশ্বব্যাংক চপেটাঘাত খেয়েছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে এক আলোচনায় বলেছেন, আদালতের রায় অনুযায়ী তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন নির্দোষ ব্যক্তি। অকারণে তার মন্ত্রিত্ব চলে গেছে। তার মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেয়া উচিত।  

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কানাডার আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় বিশ্বব্যাংক উচিত শিক্ষা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব ও বর্তমান শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তবে এ ঘটনায় বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সংস্থাটি আমাদের উন্নয়ন অংশীদার। তাই সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আরও বেশি সুসম্পর্ক তৈরি হওয়া প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এ গুজবে কান দিয়েছিলেন, তাদের উচিত হবে নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেয়া। তবে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের মামলা করা ঠিক হবে না। মামলাই শুধু একমাত্র পথ নয়। তবে এ ঘটনায় বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা তাদের জানানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

পদ্মা সেতু প্রকল্প আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে ২০১২ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের এক জনসভায় সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছিলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু হলো না। খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সরকারের দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি হলো না। তারপরও আওয়ামী লীগ সরকারকে যারা ভোট দেবে, তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

এফএইচএস/ওআর/আরআইপি