পণ্যের মোড়কে পলিথিনের ব্যবহার চলছেই
সরকারিভাবে ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো পাটজাত মোড়কের পরিবর্তে আগের মতোই ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
পাটজাত মোড়ক ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও পলিথিন কারখানা মালিকের কারণে এটি বন্ধ হচ্ছে না। এছাড়া মিল-কারখানায় যদি পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, তবে মার্কেটেও এর সুফল মিলবে।
জানা গেছে, ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন নিষিদ্ধের পরের কয়েক বছর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক কয়েক বছরে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে বেড়েছে পলিথিন বিক্রি। ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ এবং পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালার তফসিল ঘোষণার পর গেজেট প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়। গেজেটে ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। আইন অনুযায়ী পণ্যের ওজন ২০ কেজির বেশি হলে প্রযোজ্য হবে এ নিয়ম। তবে এ নিয়ম মানছেন না ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ার নতুনবাজারে দেখা যায়, ৫০ কেজি ওজন লেখা চালের বস্তায় পলিথিনের মোড়ক ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দোকানের মালিক ব্যবসায়ী সুজন জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে চাল এনে ব্যবসায়ীরা এখানে বিক্রি করেন। চালের মিলে যদি পাটের বস্তা ব্যবহার হয় তবে আমাদের সমস্যা নেই। দুপুরে মোহাম্মদপুরের টাউন হল মার্কেটেও দেখা যায় একই চিত্র।
মার্কেটের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী আব্দুর সবুর জানান, পাটের বস্তায় চিনি রাখা কঠিন। এতে চিনি দানা বেঁধে যায়। উপরে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার করলেও ভেতরে পাতলা পলিথিন ব্যবহার করতেই হয়। নইলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
একইদিন বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজার পাইকারি মার্কেটের নিচ তলায় পাটজাত মোড়ক ব্যবহৃত চালের বস্তা সারি করে রাখতে দেখা যায়।
মোহসিন নামে চালের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, সরকার চালে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। সেটা মেনেই ব্যবসা করছি। তবে বেশ কিছু ব্যবসায়ী এখনো তা মানছেন না।
তবে দ্বিতীয় তলার ‘ঢাকা ট্রেডার্স’ নামে একটি দোকানের চিনিগুড়া চালের বস্তায় পলিথিনের মোড়ক দেখা যায়। তবে এ বিষয়ে দোকান মালিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পাশেই সোনালী ট্রেডার্সে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে আটা। ওই দোকানেও দেখা যায় একই চিত্র। পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, আমরা সিটি ভেজিটেবল ওয়েল মিল থেকে আটা কিনি। ওখানে পাটজাত মোড়ক বাধ্যতামূলক করা হলে এখানে কোনো সমস্যা নেই। বন্ধ করতে হলে ওখানেই করা উচিত বলে জানান তিনি।
পাটের ব্যবহার বহুমুখী, সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালে পণ্যের মোড়কীকরণে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান এ আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শাস্তি সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ হবে বলে আইনে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের পরিচালক (মার্কেটিং) সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি নির্দেশনার পর পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পলিথিন বন্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এজন্য জেলার ডিসি, এসপি, থানা পুলিশ, সিটি কর্পোরেশনগুলোর ওয়ার্ড কমিশনারদের প্রচারণায় সংযুক্ত করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময় অভিযান চালাচ্ছে। সবার সহযোগিতায় তুলনামূলকভাবে পলিথিনের ব্যবহার কমেছে।
জেইউ/এএইচ/এমএস