মামা কিছু লাগবে
প্রায় সব গলিতেই দাঁড়িয়ে আছে উঠতি বয়সী কিশোর ও যুবকরা। প্রত্যেকে পলিথিনের মধ্যে রেখে প্রকাশ্যেই অন্যান্য পণ্যের মতো ইয়াবা বিক্রি করছে। তবে অপরিচিত কাউকে দেখলে তা লুকিয়ে রাখে, কাউকে আবার কিছু লাগবে কি না জিজ্ঞেস করে। কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গলিতে দাঁড়ানো এরা সবাই ইয়াবা আর গাঁজা বিক্রি করছে। এ এলাকায় নতুন কাউকে দেখলেই তারা বলে ‘মামা কিছু লাগবে’।
মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (৯ ফ্রেব্রুয়ারি) সরেজমিনে এ দৃশ্য দেখা যায়।
মাদকের হাট নামে পরিচিতি পাওয়া ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা এলাকার জেনেভা ক্যাম্পের আয়তন সাড়ে ১৭ একর অর্থাৎ প্রায় ৫২ বিঘা। এই ৫২ বিঘার ভেতরেই মাদক বিক্রেতা প্রায় সাড়ে ৪শ জন। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে এ জেনেভা ক্যাম্পকে মাদকমুক্ত করতে বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানায় তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ। জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিহারিদের আবাসস্থল জেনেভা ক্যাম্পের প্রায় প্রতিটি গলিতে প্রকাশ্যে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি হয়। বিচ্ছিন্ন আবাসনপল্লী হওয়ায় এখানে নেই এলাকাবাসীর নিয়ন্ত্রণ। ফলে ভেতরের চিত্রটা বরাবরই থেকে যায় অন্তরালে। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রকাশ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। ক্যাম্পের চারপাশে পুলিশসহ প্রশাসনের বেশ কয়েকটি কার্যালয় থাকলেও ক্যাম্পের ভেতরে নেই নিয়ন্ত্রণ। জেনেভা ক্যাম্পে ১০টি গ্রুপে প্রায় সাড়ে ৪শ মাদক ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্যে অসহায় এখানকার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরে যারা মাদক বিক্রি করেন তাদের সঙ্গে ক্রেতাদের অনেকের চেনা-জানা রয়েছে। অচেনাদের কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে এসে বেশি দামে নিরাপদে মাদক নিয়ে চলে যান। একজন মাদক বিক্রেতাকে নিরাপত্তা দিতে তিন-চারজন থাকে বিভিন্ন অলিগলির মুখে । আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি জানিয়ে দেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক বিক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, ইয়াবা, গাঁজা ও দেশি মদসহ সবধরনের মাদক পাওয়া যায় জেনেভা ক্যাম্পে। পুলিশ কখন আসবে সে খবরও আগাম জেনে যায় তারা। ফলে ১০ বছর ধরে গ্রেফতার এড়াতে পেরেছেন তিনি। তবে এজন্য পুলিশকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই এলাকায় নতুন কাউকে দেখলেই মাদক ব্যবসায়ীরা বলে ওঠে ‘মামা কিছু লাগবে’। এছাড়া মাদকের ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হলেও এখানে পুলিশের সামনেই মাদক বিক্রি হয়। ক্যাম্পের সামনে-পেছনে পুলিশ থেকে লাভ কী?
আলী আকবর নামে এক বাসিন্দা বলেন, সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেলেও তা পরবর্তীতে আইওয়াশ বলে মনে হয়েছে। কারণ পুলিশ ঘটা করে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বেশি সময় ধরে জেনেভা ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে সহজেই গা-ঢাকা দিতে পারে মাদক বিক্রেতারা।
তবে জেনেভা ক্যাম্পকে মাদকমুক্ত করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ সফল হয়েছে বলে দাবি তেজগাঁও বিভাগ পুলিশের।
তেজগাঁও বিভাগ পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় মাদকসম্রাজ্ঞী পাপিয়াকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি মাদক ব্যবসা পরিচালনায় জড়িত থাকায় ক্যাম্পের চেয়ারম্যান জিলানী ও তার সহযোগী শাকিলকে আটক করা হয়। গত ২৯ জানুয়ারি এখান থেকে ১০৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে মাদকবিরোধী ৯টি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক কমিটিতে ১০-১২ জন করে সদস্য। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মাদকবিরোধী সমাবেশ-উঠোন বৈঠক হচ্ছে। স্থানীয় ক্যাম্প বাসিন্দারা কেউ যাতে মাদক ব্যবসায় না জড়ায় সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
জেইউ/এআরএস/এমআরএম/আরআইপি