পুনঃনির্ধারণ হচ্ছে সাধারণ বীমার ব্যবস্থাপনা ব্যয়
বিধিমালা সংশোধন করে সাধারণ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় পুনঃনির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৩১ মার্চ সংশোধনী চূড়ান্ত করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
এ লক্ষ্যে বর্তমানে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনে প্রস্তাব দিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সংশোধনী প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা-২০১৬ স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বীমা খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে জারীকৃত প্রবিধানমালাটি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সাবধানতা অবলম্বন করবে।
এদিকে বীমা আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা খাতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করায় ১৮টি কোম্পানির অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। পরে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে ওই কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের নিরীক্ষা কর্যক্রম স্থগিত করা হয়।
আর বাকি কোম্পানিগুলোর পক্ষে নিরীক্ষা কর্যক্রম বন্ধ করতে আইডিআরএকে অনুরোধ জানায় বীমা মালিক ও নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশ (বিআইএ)। তবে বীমা আইন অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষা বন্ধ করার সুযোগ না থাকায় সম্প্রতি আইডিআরএ’র সমন্বয় সভায় নিরীক্ষা কর্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৬টি কোম্পানির অনিয়ম খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা কর্যক্রম চালানো হবে। আর সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সকে কিছুটা সময় দেয়া হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেবে আইডআরএ।
যোগাযোগ করা হলে বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে আমি মনে করি প্রবিধানমালার সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আইডিআরএ’র উচিত সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে নিরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা।
আর আইডিআরএ’র সদস্য ও মুখপাত্র জুবের আহমেদ খান বলেন, এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা আমি এখনো দেখিনি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না।
এর আগ, গত বছরের ১৮ জুলাই সাধারণ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে এ সংক্রান্ত প্রবিধানমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ‘নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা- ২০১৬’ নামের ওই প্রবিধানমালা বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৪৮ ও ৬৩ এর ক্ষমতাবলে জারি করে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গেজেট আকারে প্রকাশিত প্রবিধানমালার ৩(১) ধারায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার নির্ধারণ করে একটি টেবিল উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, কোন বীমাকারী নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় কোন পঞ্জিকা বছরের ব্যবসা সংগ্রহের কমিশন খরচ বা পারিশ্রমিকসহ, ব্যবস্থাপনা ব্যয় টেবিলে নির্দেশিত শতকরা হারের সীমার অতিরিক্ত করতে পারবে না। ওই টেবিলে ব্যবস্থাপনা হার নির্ধারণে ৮টি ধাপ রাখা হয়।
এক. সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত বীমাকারীর অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রথম ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩৫ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
দুই. ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩৩ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
তিন. ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩২ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
চার. ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩০ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
পাঁচ. ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২৮ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
ছয়. ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২৬ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
সাত. ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২৪ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
আট. ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে তদোর্ধ্ব মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ওপর অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২২ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।
প্রবিধানমালার ৩ (২) ধারায় বলা হয়, ‘উপ-প্রবিধান (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বীমাকারী তাহার প্রথম ১০ (দশ) বছরে বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে কমিশন খরচ বা পারিশ্রমিকসহ যে কোন পঞ্জিকা বছরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসাবে নিম্নরূপ অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করিতে পারবে।
(ক) প্রথম বছরে তাহার পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ (খ) পরবর্তী ৩ বছরের প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে মোট পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের অর্থ।
(গ) পরবর্তী ৩ বছরের প্রতি পঞ্জিকা বছরে মোট পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের অর্থ বা সংশ্লিষ্ট বছরে সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত পলিসির গ্রোস প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশের মধ্যে যাহা কম হয় সেই পরিমাণ অর্থ।
(ঘ) পরবর্তী ৩ বছরের প্রতি পঞ্জিকা বছরে পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের তিন-চতুর্থাংশ অর্থ বা ঐ বছরে সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের দুই দশমিক পাঁচ শূন্য শতাংশ অর্থের মধ্যে যাহা কম হয় সেই পরিমাণ অর্থ।
আর ৩(৩) ধারায় বলা হয়, যেসব বীমাকারীর ব্যবসার প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত তাহাদের প্রধান কার্যালয়ের ব্যয়ের একটি অংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমাভুক্ত হইবে এবং উহা সরাসরি ও গৃহীত পুনঃবীমা ব্যবসাসহ এবং প্রদত্ত পুনঃবীমা প্রিমিয়াম ব্যতিরেকে কোনক্রমেই ঐ বছরে বাংলাদেশে অর্জিত মোট প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশের অধিক হইবে না।
এমএএস/এআরএস/জেআইএম