বদলে যাচ্ছে পুরান ঢাকা হারাচ্ছে ঐতিহ্য
বদলে যাচ্ছে পুরান ঢাকা। সেই সঙ্গে হারাচ্ছে ঐতিহ্য। এককালের শতবর্ষের পুরনো একতলা-দোতলা ভবন, ঘিঞ্জি অলিগলি, রাস্তার পাশে হোটেল-রেস্টুরেন্টে হাই ভলিউমে বাংলা-হিন্দি জনপ্রিয় গান বাজানো পুরান ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় পুরান ঢাকার রূপ বদলাচ্ছে!
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক সরেজমিনে পুরান ঢাকার লালবাগের শেখ সাহেববাজার, হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ কেল্লার মোড়, খাজে দেওয়ান লেন, চকবাজার, জেলখানা রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন ইট-সুরকির তৈরি পুরনো বাড়িঘর ভেঙে বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট, শপিংমল, কমিউনিটি সেন্টার ও মার্কেট নির্মিত হচ্ছে।
একসময় ঘোড়া ও পরবর্তীতে রিকশাই ছিল এ এলাকার প্রধান যানবাহন। কিন্তু বর্তমানে পাড়া-মহল্লার সরু অলিগলিতেও দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি দিনভর ছুটে চলতে দেখা যায়। পুরান ঢাকাবাসীর পুরি, সিঙ্গারা ও বাকরখানিজাতীয় খাবার একসময় ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার পছন্দের তালিকায় থাকলেও বর্তমানে গুলশান ও বনানীর মতো নামি-দামি ফাস্টফুডের দোকান গড়ে উঠছে। বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত কমিউনিটি সেন্টার কোনো অংশেই নতুন ঢাকার কমিউনিটি সেন্টারের মানের চেয়ে কম নয়।
৭০ বছরের বৃদ্ধ রহমত মিয়া। আজ (রোববার) সকাল সাড়ে ১০টায় পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার সামনে দাঁড়িয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘পুরান ঢাকা আর পুরান ঢাকা নাই। সব বদলাইয়া যাইতাছে। একসময় একতলা-দোতলার বেশি বড় বাড়ি দেখা যেতো না। মহল্লার সবাই সবাইকে চিনতো কিন্তু এখন পুরান সব বাড়িঘর ভেঙে নতুন নতুন বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট হচ্ছে। কেউ কাউরে চেনে না। পুরান ঢাকা নতুন হলেও মানুষের সম্পর্কে চিড় ধরেছে।’
খাজে দেওয়ানে আবদুর রহমান নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, পুরান ঢাকার মানুষের কাছে আগে নাস্তায় ডাল-পুরি, সিঙ্গারা, চা ও বিরিয়ানি খুব বেশি প্রিয় তালিকায় থাকলেও বর্তমানে এসবের প্রতি মানুষের বিশেষ করে তরুণদের কাছে কদর নেই। তারা ফাস্টফুড ও চাইনিজ এবং নামি-দামি ব্র্যান্ড দোকানের খাবার খেতে চায়।
আবদুল আলিম নামে শেখ সাহেব বাজারের বাসিন্দা এক বৃদ্ধ বলেন, ‘পুরান ঢাকার পোলাপাইন আগের মতো আর ছাদে ঘুড়ি উড়ায় না। বল নিয়ে মাঠে ছুটে যায় না। সারাদিন কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মেবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’ আধুনিক প্রযুক্তি পুরান ঢাকার মানুষকে বন্দি জীবনে অভ্যস্ত করে ফেলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমইউ/বিএ/পিআর