ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

গোঁজামিলে চলছে ‘সোনার খনি’ পাঠ্যপুস্তক বোর্ড

প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছু ভুল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশের উচ্চমানের শিক্ষক, লেখকদের সমন্বয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কালিকুলাম প্রণয়নের পরও কেন এতো ভুল? এজন্য দায়ী কারা? এসবের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনুসন্ধানে ধরা পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম অসঙ্গতি, যা তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের তিন পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। আজ থাকছে এর দ্বিতীয় পর্ব

গোঁজামিল দিয়ে চলছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ইতিহাসে স্মরণীয় কবি-সাহ্যিতকদের পাঠ্যবইয়ে কবিতার নাম-শব্দ পরিবর্তন, অর্থহীন ও বির্তকিত শব্দ-ছবি সংযুক্ত, সাম্প্রদায়িকতা, বই ভর্তি বিদেশি গল্পসহ নানা অপসাংস্কৃতি দিয়ে পাঠ্যপুস্তক ভরপুর। বর্তমানে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতিতে সরকারের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের কৃতিত্ব ম্লান হতে বসেছে। ফলে এসব বই পড়ে ছেলে-মেয়েদের গুণী হিসেবে তৈরি করা যাবে না বরং সাম্রাজ্য আর মৌলবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের বই দিয়ে এনসিটিবি নতুন ইতিহাস রচনা করলো। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকারের আমলে কবি-সাহ্যিতিকদের কবিদের রচনা উল্টে দেয়া হয়েছিল, এবারও তাই হয়েছে।

দেখা গেছে, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামের বিখ্যাত কবিতা থেকে ‘তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে’ এ লাইনটিতে ‘মন্দির’ শব্দ থাকায় লাইনটি বাদ দিয়েই কবিতাটি পড়ানো হয়েছিল। আর ২০১৭ সালে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামের এ কবিতা পুরোটাই বাদ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গতবছর তদন্ত হলেও সেই রিপোর্ট আলোর মুখ দিখেনি। নেয়া হয়নি ব্যবস্থাও। বরং উল্টো এবার জামায়াত মদদপুষ্ট মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজতের চাওয়া অনুসারে রবি ঠাকুরের পুরো কবিতায়ই বাদ দেয়া হচ্ছে।

Insert
২০১২ সালে সরকার যে পাঠ্যবই রচনা করেছিল সেটি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পড়ানো হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে তা পরিবর্তন হয়ে যায়। পাঠ্যবই হয়ে যায় সাম্প্রদায়িকতায় ভরপুর। মূলত ২০১৪ সাল থেকে পাঠ্যবই একটু একটু করে পরিবর্তন হতে হতে ২০১৭ সালে এসে তা খোলাসা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের এমন রূপকে বিশেষজ্ঞরা ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন।

তাদের মতে, এ শিক্ষাক্রমে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শামসুর রাহমান, রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জন্ম নিতে পারবেন না। মুক্তচিন্তার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলে মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে বাংলা স্কুলগুলোর মৌলিক পার্থক্য থাকবে না।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা পাঠ্যবইয়ের সীমাহীন ভুলত্রুটিকে একটি মহলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র উল্লেখ বিশেষজ্ঞরা জানান, এর মাধ্যমে মুক্তমনা, উদার চিন্তার মানুষ সর্বোপরি সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে বিতর্কিত করার কোনো অভিপ্রায় মহলটির আছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।

এনসিটিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সোনার খনিতে’ পরিণত হয়েছে এনসিটিবি। এখানে তিন বছরের জন্য প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হলেও এক যুগের বেশি সময় ধরে আছেন অনেক কর্মকর্তা। ঢাকায় থাকার জন্য বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অন্যতম পছন্দের প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি। এ প্রতিষ্ঠানে আসার জন্য জোর তদবির করেন। ঢাকায় থাকার পাশাপাশি ‘আর্থিক সুবিধাও’ রয়েছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর প্রায় হাজার কোটি টাকার বইয়ের কাজ হয়। এসব থেকে কমিশন, নোট গাইড ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণসহ নানা সুবিধা নিয়ে থাকেন। এ কারণেই তারা বদলি হতে চান না। পাঠ্যবইয়ের ভুলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় দায়ী না। এনসিটিবিরর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সম্পাদক নিয়োগ না দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

Insert
এসব বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। এখানে এসে জানলাম দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ হচ্ছে।

তবে মূল বিষয়গুলো লেখকরা করে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষেজ্ঞরা শুধু বানান ভুল ও অসঙ্গতিগুলো পরিমার্জন করেন। সব বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ না থাকায় ভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও এনসিটিবির কর্মকর্তাদের নিয়ে লেখকদের লেখাগুলো মূল্যায়ন করা হয়। এটি দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে।

বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবগত করার পাশপাশি পাঠ্যপুস্তকে ভুলের জন্য চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

অন্যদিকে গত ১২ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রূহি রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি দল অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জানান, এনসিটিবি কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অসাধুতার জন্য এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আমরা তাদের চিহ্নিতের চেষ্টা করছি। প্রতিবেদনের মাধ্যমে তাদের সকল কর্মকাণ্ড উম্মোচন করা হবে।

এমএইচএম/এএইচ/আরএস/পিআর

আরও পড়ুন