তবুও সে রাজা
চিড়িয়াখানা নিয়ে মানুষের উৎসাহের যেন কমতি নেই। সৃষ্টির রূপ খোঁজার পিপাসা নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিড়িখানায় ভিড় জমায়। খাঁচায় বন্দি প্রাণীদের খুব কাছ থেকে দেখার বাসনা মানুষের স্বভাবজাত। জাতীয় চিড়িয়াখানা আধুনিকতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও আয়তনে বিশ্বের চতুর্থ। তবে সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তনও এসেছে বেশ। বিশ্বমানের করে তুলতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা। সম্প্রতি সরেজমিনে জাতীয় চিড়িয়াখানার চিত্র তুলে এনেছেন জাগো নিউজ-এর প্রতিবেদকরা। প্রতিবেদনে চিড়িয়াখানার হালচাল, পরিবর্ধন-পরিবর্তন ও প্রাণীকূলের নানা দিক উঠে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সায়েম সাবু, মামুন আব্দুল্লাহ ও আবু সালেহ সায়াদাত। ছবি তুলেছেন মাহবুব আলম।
রাজার দাঁতে ক্ষয় এসেছে। গেল সপ্তাহে দাঁতের গোড়ালি বেয়ে খানিকটা রক্তও বের হয়েছিল। আর তাতেই ঘুম হারাম হয়েছিল রাজ্য প্রহরীদের। ওষুধ, চিকিৎসা নিয়ে দৌড়ের কোনোই কমতি ছিল না। রাজার অসুস্থতায় কাঁপন উঠেছিল গোটা রাজ্যেই। সেবা-শুশ্রূষা শেষে রাজার ব্যামো খানিকটা উবে গেছে। এখন সে দিব্যি ভালো।
ভালো যে আছে, তা সোমবার বিকেলেও বেশ বোঝা গেল। শীতের বিকেল। তাতে আবার রোদ। ঠিক রাজার হালে শুয়ে আছে। কখন ঘর থেকে বের হয়েছে, তা বোঝার উপায় নেই। ঘুমে বিভোর রাজা মাঝে মাঝে লেজ নাড়িয়ে জানান দিচ্ছিল, তার দাপটের ভঙ্গি।
বাগানবাড়ি নাকি জঙ্গলবাড়ি, তা ঠিক ঠাওর করা যায় না। বনোজ গাছ আর গুল্মজাতীয় লতাপাতায় ভরা যেন কোনো রাজবাড়ি। সবুজ ঘাসে গোটা শরীর এলিয়ে শুয়ে আছে রাজা। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রোদ গিয়ে পড়ছে রাজার শরীরে। পাশেই লেক, তাতে শানবাঁধা ঘাট। মন চাইলে এখানেই স্নান পর্ব সারে রাজা। খাবারেও খানদানি অভ্যাস। টাটকা মাংস ছাড়া তার চলে না।
তবে বয়সের ভারে কিছুটা শিথিলতা এসেছে তার চলাফেরায়। এখন আর আগের মতো বাগানবাড়ি বেড়াতে আসে না। এলেও আগের মতো তেজ দেখায় না। বৃদ্ধ রাজাকে চোখে চোখে রাখছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষও। কখন যে কি হয়!
রাজার প্রায় ১৯ বছর কাটছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। আগে খাঁচায় বন্দি ছিল। তাতে ভালো যাচ্ছিল না রাজার দিনকাল। পরে বিশেষ এই বাগানবাড়িতে কিছুটা উন্মুক্ত পরিবেশে রাখা হয় বিশাল আকৃতির রয়েল বেঙ্গল টাইগার রাজাকে। পাশেই থাকে আরেক রয়েল বেঙ্গল টাইগার সানি। সানিও পুরুষ। কালেভাদ্রে দেখা মিললেও বেশির ভাগ সময়ই অদেখা থাকে দুজন। যুদ্ধ হওয়ার ভয়েই এক হতে দেয় না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছেন কুষ্টিয়া থেকে লিলি আফসানা। স্বামী ঢাকাতেই থাকেন। মেয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বেড়াতে এসেছেন ঢাকায়। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে লোহার গিরিলে হাত রেখে রাজার হালচাল অবলোকন করছিলেন লিলি। তিনি বলেন, রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে এত কাছ থেকে দেখতে পাবো বিশ্বাস হচ্ছিল না। টেলিভিশনে বাঘ দেখি কিন্তু এত বড় বাঘ কখনও দেখিনি।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর এনএম নজরুল ইসলামের সঙ্গে রাজা প্রসঙ্গে কথা হয়। বলেন, গত সপ্তাহে দম ছিল না। রাজাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত। অবশেষে দাঁতের রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এখন ভালো আছে। তাতে আমরা ভালো আছি। চিড়িয়াখানার বিশেষ আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার রাজা। ওর কিছু হলে সে ক্ষতিপূরণ করা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের হবে।
এএসএস/এমএ/এএস/এমআরএম/আরআইপি