ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পাঠ্যপুস্তকে ভুল : ধরা ছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা

প্রকাশিত: ০১:৩৭ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

পাঠ্যপুস্তকে ভুলে ভরা কেলেঙ্কারির মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন। অন্যদিকে হুকুমের গোলাম হয়েও শাস্তির শিকার হচ্ছেন চুনোপুঁটিরা। ফলে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। শিক্ষাবিদরা বলছেন, অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে অপরাধের পরিসীমা আরও বাড়বে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বিরূপ প্রভাব পড়বে।

চলতি বছর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকে বিখ্যাত কবিদের কবিতায় শব্দগত পরিবর্তন, তথ্যগত ভুলসহ নানা ভুল-ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ফলে সমালোচনার মুখে পড়েছে পাঠ্যবই নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা দ্রুত তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতশি কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করা হয়।

এছাড়াও প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে সাত নম্বর পৃষ্ঠায় আম গাছে চড়ে ছাগলের আম খাওয়ার ‘অপরাধে’ এনসিটিবির আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অথচ যাদের নির্দেশে কারিকুলাম সংযোগ-বিয়োজন করা হয়েছে তারাই রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

ভুলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অর্থ আমরা দেই আর মাতব্বরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনসিটিবির সব বিভাগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। তাই কেউ আমাদের কথা আমলে নেয় না। এ কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

সূত্রে জানা গেছে, পাঠ্যক্রম তৈরির পেছনে কাজ করে দুই মন্ত্রণালয়ের দুটি কমিটি। পাঠ্যবইয়ে কোন লেখা বাদ দেয়া হবে আর কোনটা রাখা হবে -তা অনুমোদন দেয় ওই কমিটি দুটি। একটি কমিটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর এক সভায় অনুমোদন দেয় কোন বইয়ে কোন কবিতা লেখা থাকবে আর কোনটা বাদ যাবে। সে অনুসারেই ছাপা হয় পাঠ্যবই।

প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর মূল দায়িত্বে ছিলেন- ড. আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর), অধ্যাপক মো. এলিয়াছ হোসেন (পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর), অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল (চেয়ারম্যান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড), মো. ফাইজুল কবির (যুগ্ম সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়), মো. আব্দুল ওয়াহাব, (উপ-পরিচালক, জাতীয় শিক্ষা একাডেমি), একেএম ছায়েফ উল্যা (চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড), অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান (সদস্য, এনসিটিবি), সরদার মো. কেরামত আলী (উপ-সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়), মুহাম্মদ আবদুল জাব্বার (পরিচালক (অব.), নায়েম), সেলিনা হোসেন (সভাপতি, শিশু একাডেশি)।

অধ্যাপক কফিল উদ্দিন আহাম্মদ (সাবেক চেয়ারম্যান, এনসিটিবি), ড. আলী আসগর (ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান (উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়), লানা হুমায়রা খান (ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ, এনসিটিবি), খ. মো. মঞ্জুরুল আলম (বিশেষজ্ঞ, এনসিটিবি), মো. মোস্তফা সাইফুল আলম (বিশেষজ্ঞ, এনসিটিবি), মুশীদ আকতার (গবেষণা কর্মকর্তা, এনসিটিবি), বাবুল আকতার (সংযুক্ত কর্মকর্তা, এনসিটিবি)।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, পাঠ্যপুস্তক তৈরির সময় অগ্রগতি জানতে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবিকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো উত্তর দেয়া হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের খাম-খেয়ালির জন্য এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা কী ব্যবস্থা নেয় আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।

তবে আগামী বছর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আর মাতব্বরি করার সুযোগ দেয়া হবে না। এনসিটিবিসহ বিভিন্ন স্থানে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে নানা ভুল নিয়ে বর্তমানে জাতীয় জাগরণ দেখা গেছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যারা অপরাধী তাদের শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে। নতুবা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, সবাই ভালো মানের শিক্ষা বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে এটি তার বড় প্রমাণ। গণ-মানুষের এই চেতনার মূল্য দিয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

পাঠ্যপুস্তকের ভুলের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্তা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, যাদের পৃষ্টপোষকতার প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীকে সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি সেই মোতাবেক তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেরাও তদন্ত কমিটি তৈরি করে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। উভয়ের তদন্তের মাধ্যমে আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এমএইচএম/আরএস/জেডএ/পিআর

আরও পড়ুন