ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পায়ে লিখেই জীবন জয়

প্রকাশিত: ০৪:৩৭ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০১৭

‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না, ও বন্ধু’। ভূপেন হাজারিকার দুনিয়া কাঁপানো সেই গান দিয়েই জীবনের গল্প শুরু করেছেন।

পায়ে ঠেলেই লিখছেন জীবনের গল্পকথা। মনকাড়া সাজানো-গোছানো লেখায় খাতার সাদা পাতাগুলো জীবনজয়ের নানা কথায় ভরে উঠছিল মুহূর্তেই। উৎসুক জনতা তার এই অসাধ্য সাধনে মগ্ন হয়ে সহানুভূতির হাত বাড়িয়েও দিচ্ছিল।

সোমবার সন্ধ্যার পরের কথা। বাণিজ্য মেলার রঙিন আলোগুলো জ্বলে উঠেছে খানিক আগেই। বাহারী পণ্যের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা ক্রেতা টানতে নানা কায়দায় আওয়াজ দিচ্ছেন। মাইকে ভেসে আসছে মন ভোলানো পণ্যের বিজ্ঞাপন। সন্ধ্যার পর মেলার যে চিত্র, এ দিনও তাই ছিল।

jasim-leg
এমন রঙিন আয়োজনে এক পানসে জীবনের গল্পের ডালি নিয়ে বসেছেন জসিমউদ্দিন। মেলা প্রাঙ্গণের একেবারে মধ্যখানে। পানসে বটে, তবে হার না মানা জীবনযুদ্ধে জয়ীও বটে। বয়স ছত্রিশ পার করেছেন গত মাসে। বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগাতি। জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী। দুই হাতের বাহু জন্ম থেকেই কাটা। একটি মাত্র পা সচল জসিমের। এক পায়ে ভর করেই চলছে জসিমের জীবনখেলা।

২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ‘বি’ গ্রেডে পাস করেন জসিম। লেখার সম্বল সচল থাকা বাম পা। প্রবল ইচ্ছা থাকার পরেও পরিবারের আর্থিক দৈন্যতায় শিক্ষাজীবনে পাঠ চুকাতে হয়েছে এসএসসির পরেই। তবে হাল ছাড়েননি সে বেলাতেও। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে মুরগির খামার গড়ে তোলেন তিনি। বছর পাঁচেক ভালোই কাটছিল ব্যবসা। হঠাৎ ধস নামে খামারে। সর্বশান্ত হয়ে ঢাকায় আসেন বছর দুই আগে।

যে শহরে যন্ত্ররা মানুষকে আরও যান্ত্রিক করে তোলে, সেই শহরে জসিমের ভরসা একটি মাত্র পা। বাম পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম গুঁজে দেখতে থাকেন নতুন স্বপ্ন। এখন সফলও বটে। পায়ে ঠেলেই পার করছেন জীবনের সব বাঁধা। বিভিন্ন মেলা বা উৎসবে পায়ে লিখে নিজের পারদর্শিতা দেখিয়ে আয় করেন এই শারীরিক প্রতিবন্ধী।

jasim-leg
থাকেন গুলশান নতুন বাজারের কাছে একটি ভাড়া বাসায়। মেয়ে তামান্ন পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। পরীক্ষায় এবার প্রথম হয়েছে। ছেলে আল আমীন তৃতীয় স্থান অধিকার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।

লেখার ফাঁকে ফাঁকেই আলাপ হয় জসিমের সঙ্গে। মৃদুভাষী, তবে বেশ গুছিয়েও কথা বলেন। বললেন, ‘জীবন তো স্রষ্টার দান। বেঁচে আছি, এই তো শুকরিয়া। শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই গুরুত্বপূর্ণ, যদি তা কাজে লাগানো যায়। আমি একমাত্র পা দিয়ে লিখে যাচ্ছি। আমার লেখা দেখে অনেকেই উৎসাহিত হয়। শিশুরাও পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করে।’

সৃষ্টি করাই জীবনের সার্থকতা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি পা দিয়ে লিখে জীবনের গল্প তুলে ধরি। এটিই আমার সৃষ্টি। তাতে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই সাহায্য করে। তাই তো ভূপেন হাজারিকার ‘মানুষ মানুষের জন্য’ বিখ্যাত এই গানের অন্তরা দিয়েই লেখা শুরু করি।

এএসএস/বিএ