ধার করা বই দিয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসব
আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী আদিবা। অনেক ভোরে মাকে নিয়ে নিজ স্কুল মাঠে যায় বই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে। উদ্দেশ্য নতুন ক্লাসের বই নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দ করে বাড়ি ফিরবে। এ ভাবনায় রাতভর ঘুম হয়নি তার। স্কুলে গিয়ে সে ‘আশায় গুড়েবালি’। ষষ্ঠ শ্রেণির এ ছাত্রীর হাতে নবম-দশম শ্রেণির বই দিয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করে কর্তৃপক্ষ।
রোববার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অন্য শ্রেণির ধার করা বই হাতে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে উৎসবের আমেজ অনেকটা ম্লান হয়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
তবে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
আদিবা জানায়, ‘অনেক ভোরে স্কুলে এসে নতুন বই নিতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল থেকে আমাদের অন্য ক্লাসের বই দিয়েছে। স্যাররা জানিয়েছেন, বই এখনো আসেনি। তাই এসব বই নিয়েই মাঠে শিক্ষামন্ত্রীর সামনে বসে থাকতে হবে। যাতে সবাই বুঝতে পারে আমরা নতুন বই পেয়েছি।’ এ কারণে তারা সবাই অন্যের বই নিয়ে স্কুল মাঠে বসে বলে জানায় সে।
শুধু আদিবা নয়, তার সহপাঠী মিফতাহুল জান্নাত, মালিয়া, ইসহাক, বাবুসহ আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপস্থিত পার্শ্ববর্তী ১৫ স্কুলের দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর হাতে অন্য ক্লাসের বই তুলে দিয়ে বই উৎসব পালন করা হয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, আমরা এখনো সব বই পাইনি। তাই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নির্দেশে শিক্ষার্থীদের হাতে অন্য ক্লাসের বই তুলে দিয়েছি।
এটি বই উৎসবের আনন্দ ম্লান করে দেয় অভিযোগ তুলে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক ইমদাদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ভাবতে আমাদেরও খারাপ লাগে। নিজ ক্লাসের একটি বই হাতে তুলে দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ আরো বেশি হতো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাত আহমেদ বই উৎসবকে ‘প্রতীকী উৎসব’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সবাই নতুন বই পাবে। তবে বই উৎসবের দিন সবাইকে ‘নামেমাত্র’ একটি বই হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হচ্ছে । গত বছর ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছিল।
বছরের প্রথম দিন রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বর্ণিল আয়োজনে ‘বই উৎসব-২০১৭’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেখানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএম/এসএইচএস/এমএস