সাড়ে ৩ বছরে ৫শ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার
গত ৪০ মাসে স্বর্ণের চোরাচালান ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে এক হাজার ৫৭ কেজি ৮শ’ ৫৪ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হলেও নেপথ্যের গডফাদার বা প্রকৃত চোরাচালানি গ্রেফতার হয়নি একজনও। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২৩৩টি। এছাড়া স্বর্ণ চোরাচালানের সময় হাতেনাতে আটক হয়েছেন ১৩১ জন। তবে এদের অধিকাংশই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে মাত্র ৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার সমমূল্যের ১৭ কেজি ৪শত ৬২ গ্রাম স্বর্ণের চালান জব্দ করতে সমর্থ হয় শুল্ক গোয়েন্দা। যা ছিল বছরে গড়ে মাত্র ১ কেজি ৯৪ গ্রাম।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ বছরের মধ্যে ২০১৩ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বেশি স্বর্ণের চোরাচালান ধরা পড়েছে।এই সময়ে ২৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা সমমূল্যের ৫৬৫ কেজি ৭১ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার হয়। জড়িত অভিযোগে আটক করা হয় ৫৫ জনকে। এরমধ্যে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মার্চ এপ্রিলে যথাক্রমে ৮৮ কেজি, ১১৪ কেজি ও ১৫৯ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা।
একইভাবে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৮১ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার টাকা সমমূল্যের ৩৬৩ কেজি ৭৮২ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় ৫০ জনকে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ জব্দ হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ১১৫ কেজি ৪৯৬ গ্রাম, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮১ কেজি ৭৭ গ্রাম।
গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার ১২১ কেজি ৬ শত ৮১ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এই স্বর্ণের চালানের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আটক করা হয় ২১ জনকে।এরমধ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ৩৩ কেজি ১৬ গ্রাম ও গত মে মাসে ১৫ কেজি ৭৮৮ গ্রাম উল্লেখযোগ্য। সর্বশেষ ৪ মাসে ১৩ কেজি ৩৬২ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় যার মূল্য প্রায় ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ সময়ে আটক হয় ১০ জন।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনবল নিয়োগ ও সার্বক্ষনিক নজরদারির কারণেই বিগত ৪০ মাসে বেশি পরিমাণ স্বর্ণের চোরাচালান জব্দ ও জড়িতদের আটক করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫টি মামলা হয়, গ্রেফতার করা হয় ৩১ জনকে। ২০১৫ সালে ৫৫টি মামলা হয়, গ্রেফতার করা হয় ৮৭ জনকে। ২০১৪ সালে ৬২টি মামলা ও গ্রেফতার হয় ৩২ জন। ২০১৩ সালে গ্রেফতার করা হয় ৮১ জনকে ও মামলা দায়ের করা হয় ৬১টি। ২০১২ সালে গ্রেফতার ১৬ জন ও মামলা হয় ১১টি। ২০১১ সালে স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় মোট ৯টি মামলা দায়ের করা হয়, গ্রেফতার করা হয় ১৪ জনকে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ডিরেক্টর মুহাম্মদ শফিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আগের তুলনায় শুল্ক গোয়েন্দার সক্ষমতা বেড়েছে। সূক্ষ নজরদারি এড়ানো চোরাকারবারিদের এড়িয়ে চলা কঠিন হয়েছে। তবে জনবলের অভাব রয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক দ্রুত জনবলের অভাব পূরণের চেষ্টা চলছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক(ডিজি) ড. মইনুল খান জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্বর্ণের চোরাচালান কম ধরা পড়েছে মানে এই নয় তখন বেশি হতো না। আবার গত ৪০ মাসে স্বর্ণ বেশি উদ্ধার হয়েছে মানে বেশি চোরাচালান হচ্ছে তাও ভাবা ঠিক হবে না। বরং বিষয়টি এমন আগের তুলনায় আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে বলেই ধরা পড়ছে।
তবে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যারা আটক হচ্ছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হলেও পরবর্তীতের জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এর চেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো বড় একটি সিণ্ডিকেট রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের ধরতে পরিকল্পনা করে কাজ করছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
জেইউ/ওআর/পিআর