‘দূতাবাস কর্মকর্তারা আমাদের মানুষ না, গরু-ছাগল মনে করে’
‘আমরা গায়ের রক্ত পানি কইরা ট্যাকা (টাকা) রোজগার কইরা দেশে পাঠাই। হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের রোজগারে দেশের অর্থনীতি সচল হয়। আর সেই আমরাই যখন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে কোনো সাহায্যের জন্য যাই তখন সাহায্য দেন না। উল্টো গালিগালাজ করে। কর্মকর্তারা আমাদের মানুষ না, গরু ছাগল মনে করে।’
জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরকালে অসংখ্য বৈধ অবৈধ বাংলাদেশি প্রবাসী এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে দেশটিতে প্রবাসী শ্রমিক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সব পেশার বাংলাদেশিরা দূতাবাস কর্মকর্তাদের এ নেতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়ে সরকারের সতর্ক মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার বাসিন্দা সাইদ জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল থেকে সরকারি প্রচেষ্টায় মাত্র ৭০-৮০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া আসলেও বাংলাদেশ থেকে সর্বনিম্ন সোয়া ২ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। এছাড়া ভারত ও নেপালের শ্রমিকরা তাদের দূতাবাসে গিয়ে যে কাজ দুই-তিন ঘণ্টায় করতে পারে সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসে দু-তিনদিনেও সমাধান করা সম্ভব হয় না।
জমি বিক্রি করে মালয়েশিয়া এসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দূতাবাস কর্মকর্তারা অধিকাংশ সময় খারাপ ব্যবহার করেন বলে তিনি জানান।
সাধারণত কোম্পানি ভিসায় যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়া যান তাদের বেতন-ভাতা কম। একটু বাড়তি আয়ের আশায় তারা এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিতে চাকরি নেন। এ ধরনের শ্রমিকের কেউ কেউ পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন।
ফলে নতুন পাসপোর্ট করতে হয়। এক্ষেত্রে আবার জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার আইডি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সত্যায়িত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা আহসানউল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীকে দূতাবাসের খেয়ালিপনায় বাংলাদেশে ফিরে যেতে হয়েছে বলে জানান তার বন্ধু রেফায়েত। তিনি বলেন, পাসপোর্টে ছয় মাসের মেয়াদ না থাকলে ভিসা নবায়ন করা হয় না। আহসানউল্লাহর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮ মাস আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তাকে এক মাসের সময় বেঁধে দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে বলা হয়। কিন্তু দুই মাসেও পাসপোর্ট না পাওয়ায় ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে দেশে ফিরে যেতে হয়েছে।
ফেনীর বাসিন্দা আক্তার হোসেন জানান, দূতাবাস কোম্পানির চিঠির ওপর গুরুত্বারোপ করলেও অনেক সময় দাখিলকৃত চিঠিগুলো সেই কোম্পানির কিনা তা খতিয়ে দেখে না। দূতাবাস কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একশ্রেণির দালাল চক্র বাঙালিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে জাল সার্টিফিকেট দাখিল করে নতুন পাসপোর্ট নেন।
বিভিন্ন সময় পুলিশি অভিযানে বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকরা গ্রেফতার হলে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে দূতাবাসের একটি ফরোওয়ার্ডিং প্রয়োজন হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ওই ফরোয়ার্ডিং লেটার ইস্যুর জন্য দূতাবাসে গেলে দুর্ব্যবহার করা হয়। এছাড়া শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীসহ যার সঙ্গেই কথা হয় সবাই দূতাবাসের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দূতাবাস কর্মকর্তাদের প্রতিদিন ১৬শ’ পাসপোর্টধারীসহ দুই থেকে আড়াই হাজার বাংলাদেশিকে সামাল দিতে হয়। এখানে যারা পাসপোর্ট করতে আসেন তারা অনেকে ভালো পড়াশুনা জানেন না। তারা তথ্য-উপাত্তে ভুল করেন। এত বিপুলসংখ্যক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হলেও দূতাবাসের কিছুই করার থাকে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় তাদের ইচ্ছানুসারে সময় দিয়ে কথা বলাও সম্ভব হয় না। তবে দূতাবাস কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানে সর্বদা তৎপর থাকেন।
এমইউ/আরএস/আরআইপি