জানুয়ারিতে দৃশ্যমান হবে পদ্মাসেতুর কাঠামো
দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কাজ। মূল সেতুর কাজ ছড়িয়ে পড়েছে উভয় তীরে এবং পদ্মায়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতেই দুটি পিলারের ওপর স্প্যান গার্ডার বসিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। এতে পদ্মা নদীর ওপর সেতুর কাঠামো দৃশ্যমান হবে।
পদ্মা অত্যন্ত খরস্রোতা হওয়ায় এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড। এ অবস্থায় বর্তমানে নদী শাসনের কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্মাণ কাজের যেন ক্ষতি না হয়, এজন্য বালুর বস্তা ফেলে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ করছে। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে তারা মাওয়া শিমুলিয়ার ঘাটে বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মাণ করেছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড। গত বছর এই ইয়ার্ডের একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার পদ্মা সেতু এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের শেষ দিকে নদী প্রান্তে বালু বস্তাভর্তি করা হচ্ছে। বাংলাদেশি বালু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নূর বিজনেজ লাইন এই বালু সরবরাহ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই বাঁধ নির্মাণে বালু নিচ্ছে চায়না মেজর ব্রিজ।
এ বিষয়ে নূর বিজনেজ লাইনের ম্যানেজার মেহেদী বলেন, জরুরিভাবে এই কাজ সম্পন্ন করতে বালু সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা কয়েক লাখ বালুর বস্তা সরবরাহ করবো। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে একবার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ভাঙন হয়েছিল। বর্ষাকালে নদীতে ব্যাপক স্রোত থাকে। এই অবস্থায় এখন বালু ফেললে বস্তাটি ভালোভাবে বসে যাবে। এজন্য এখন দ্রুত বালু সরবরাহ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে নদী শাসনের কাজও চলছে সমান তালে। এই নদী শাসন করে বালু উপরে উঠানো হচ্ছে। পরে এই বালুই আবার বস্তায় ভরে সংরক্ষণের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে বালু উত্তোলনকারী ট্রলার চালক সিরাজ বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকেই আমরা বালু বস্তায় ভর্তি করি। এই বস্তা পদ্মা সেতুর বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা টাকার বিনিময়ে কাজ করলেও ভালো লাগে। কারণ এই সেতুতে আমাদের অবদান রয়েছে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস বর্ষা মৌসুম হওয়ায় নদীর স্রোত বেশি ছিল। তাই কাজ কাঙ্ক্ষিত হারে শেষ করা সম্ভব হয়নি। আসছে শীত মৌসুমে কাজের গতি আসবে। এমনকি নতুন বছরের শুরুতেই পিলারের ওপর ভর করে দাঁড়াবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। জানুয়ারি মাসেই দুটি পিলারের ওপর স্প্যান গার্ডার বসিয়ে দেয়া সম্ভব হবে এতে পদ্মা নদীর ওপরে সেতুর আকৃতি দৃশ্যমান হবে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতির মধ্যে মূল সেতু নির্মাণ ৩১ শতাংশ, নদী শাসন কাজ ২৬, জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ ৮২, মাওয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণ ১০০, সার্ভিস এরিয়া-২ নির্মাণ ১০০ শতাংশ মিলিয়ে সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, স্বপ্নের সেতুটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমকি ২ ভাগ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতি বছর ০.৮৪ ভাগ দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫টি জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৬১৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনবার সংশোধন করে বর্তমানে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণে (দ্বিতীয় সংশোধিত) ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন সিরাজুজ্জামান, সায়েম সাবু, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আবু সালেহ সায়াদাত ও এ কে এম নাসিরুল হক।
এমএ/এআরএস/আরআইপি