ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাবারের জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: ০৪:১৫ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৬

জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত এক জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গা। দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ছাড়ছেন তারা। দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে তাদের। হন্যে হয়ে এদিক-সেদিক ঘুরছেন একটু আশ্রয়ের আশায়। ঢুকে পড়ছেন পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশেও।

নির্যাতিত এই জাতিগোষ্ঠীর খবর জানাতে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ঘুরে বেড়াচ্ছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহেদ শফিক। তার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা টেকনাফের অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে খাবারের জন্য হাহাকার। খেয়ে না খেয়েই দিন কাটাচ্ছে এলাকার অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত হাজার হাজার রোহিঙ্গা। একজনের খাবার খাচ্ছেন পাঁচজনে। ক্যাম্পের প্রতিটি ঘর কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যাওয়ায় তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই আর। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত এ রোহিঙ্গারা এখন দিশেহারা।

KHabar

গত তিন দিন ধরে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে- তিল ঠাঁই নেই কোনো ক্যাম্পে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাখাইন সন্ত্রাসীদের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়ে রাতের আঁধারেই নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার বেশ কয়েকটি স্থায়ী-অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। খাদ্যের জন্য এক ঘর থেকে অন্য ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিতাড়িত রোহিঙ্গারা।  

বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়ে মিয়ানমারের জাম্মুন এলাকা থেকে পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে পালিয়ে আসেন জাহেদ আলম। তিনি অবস্থান নিয়েছেন টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের নূর হোসেনের ঘরে। নূর হোসেনও কয়েক বছর আগে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। শ্বশুর বাড়ির দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও নিজ জাতি হওয়ায় তাকে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি।

নূর হোসেন জানান, বর্তমানে তার পরিবারে ছয়জন সদস্য রয়েছেন। ক্যাম্পের ছোট্ট একটি ঘরে তারা থাকেন। এতেও তাদের ঠিকমতো জায়গা হয় না। গত এক মাসে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারণে পালিয়ে আসা আরো চারটি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার ঘরে এখন ২৭ জন মানুষ থাকেন। এদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে তাকে।

তিনি জানান, এই ২৭ জন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে তিনি খাবারের সময় এক ঘর থেকে অন্য ঘরে ঘুরেন। যেটুকু পান তা দিয়েই সবাই ভাগ করে খান। একজনের খাবার পাঁচজন মিলে ভাগ করে খান। এখানে তাদের কোনো কর্মসংস্থান নেই।  

পালিয়ে আসা জাহেদ আলম জানান, ‘যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছেন তাদের পরিবারেও বড় অভাব। তারা নিজেরাও ঠিকমতো খেতে পাচ্ছেন না। তিনি নিজেও তাদের খাবার জোগাড় করতে ক্যাম্পের ঘরে ঘরে সাহায্য প্রার্থনা করছেন। কিন্তু কার কাছে চাবেন? যেখানেই যান তাদের অবস্থাও তো একই। তারাও অন্যদের আশ্রয় দিচ্ছেন। তাদের জন্যও খাবার প্রয়োজন। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে জানেন না জাহেদ আলম।

শুধু নূর হোসেন নয়, লেদা ক্যাম্পের প্রায় আড়াই হাজার ঘরে ধারণক্ষমতার অন্তত পাঁচগুণ বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। শুধু মানবতা, জাতিভাই কিংবা আত্মীয়তার খাতিরেই তাদের আশ্রয় দিয়েছেন তারা।

KHabar

প্রতিদিন এদের খাবার জোগান দিতে হচ্ছে পুরনো রোহিঙ্গাদের। ক্ষুধার জ্বালায় কান্না-কাটি করে শিশুরা। কেউ তাদের সহায়তা দেয় না। দিতে চাইলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অতিরিক্ত মুখোমুখি হওয়ার ফলে আগ্রহ আর দেখান না।

ইলিয়াছ উদ্দিনের ঘরে আশ্রয়ে রয়েছেন ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। তাই পালিয়ে আসা অন্যদের আশ্রয় দিতে পারেননি তিনি।  

ইলিয়াছ উদ্দিন জানান, তারা প্রতিদিন মাত্র একবেলা খান। সকালে দোকান থেকে একটা রুটি ও একটা চা খেয়ে থাকেন। দুপুরে দু’মুঠো ভাত আর রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

গত কয়েক দিনে পালিয়ে আসা ২৫ জন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন এ ব্লকের মো. কবীর উদ্দিন। কবীর উদ্দিনের নিজ পরিবারের আটজন ও ভাই সমীর উদ্দিনের ১১ সদস্যের সঙ্গে নতুন করে ২৫ জনের আশ্রয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। মাত্র ছোট্ট একটি ঘরে চারভাগে গাদাগাদি করে ঘুমান তারা। দিনে অর্ধেক ঘুমান আর বাকিরা রাতে দুই ভাগে ঘুমান।

কবীর উদ্দিন জানান, যারা পালিয়ে এসেছেন তারা ঘর থেকে বের হতে পারেন না। কোথাও কর্ম করবেন সে ব্যবস্থাও নেই। কারণ পুলিশ, বিজিবি দেখলেই ধরে জেলে পাঠাবে। এজন্য ক্যাম্পের বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাল-ডাল চেয়ে নিয়ে কোনোরকমে খাবার জুটাচ্ছেন।

এদিকে অনেক আগ থেকে অবস্থান নেয়া অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের শুধু চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। নতুনভাবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সহায়তায় সরকারের কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় তারা কোনো ধরনের সহায়তা দিতে পারছেন না। তবে তাদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

hari



এমএসএস/জেডএ/এনএইচ/আরআইপি

আরও পড়ুন